যাক কাজের কথায় আসি , আজ প্রথম আলোতে একটা নিউজ পড়ে ইচ্ছে হলো সচেতনতামূলক এই পোষ্টটি লিখতে । আমরা প্রায় প্রতিদিনই অনলাইনের কোন না কোন প্রতারণার কাহিনী শুনি । এসব কাহিনীর পেছনের গল্পগুলো যতোই নির্মম হোক না কেন, অন্যরা তা শুনে হাসে । কেউ কেউ মুখ বেঁকিয়ে বলেও ফেলে, "লোভে পাপ পাপে গোরস্তান। " যে ফাদে পড়ে সে জানে কত ধানে কত খুদ ।
তবে এটা সত্য যে, অনলাইনে যতোগুলো প্রতারণার ঘটনা ঘটে তার বেশির ভাগই লোভের কারণে ঘটে । যেমন , হঠাৎ করে আপনার মোবাইল ফোনটি টুং করে বেজে উঠে জানালো , ম্যাসেজ এসেছে .....। ম্যাসেন্জার ওপেন করে দেখলেন , কোন অচেনা অজানা সুন্দরী ললনা আপনাকে হাই বলেছে । প্রথমে নিজেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভেবে , দেখেও না দেখার ভান করে রইলেন । কিন্তু পুরুষ মানুষ কি বেশিক্ষণ চুপ থাকতে পারে ? এক সময় থাকতে না পেরে আপনিও ম্যাসেজ পাঠালেন, "হাই । "
এবার সেও হয়তো দু'দিন আপনার মতো, নিজের গুরুত্ব বাড়াবার জন্য, কোন উত্তর না দিয়ে ঘাপটি মেরে রইলো ।
তৃতীয় দিন থেকে জমে উঠলো দু'জনার আলাপচারিতা । প্রেমে, প্রেমে এক্কেবারে লাইলি মজনু হয়ে গেলেন । চললো , ছবি,ভিডিও লেনদেন । শুরু হলো টাকা ধার দেওয়া । আপনি তখনও বুঝতে পারেন নাই , নিজের অজান্তেই ভয়ংকর এক ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছেন । এ সংক্রান্ত আমার একটা গল্প আছে ......পড়ে দেখতে পারেন ।
আজ যা নিয়ে লিখতে চাচ্ছি সেটা আরও ভয়াবহ । ফেসবুক কিংবা ইউটিউব চালাবার সময় হঠাৎ কোন এড দেখে তা ক্লিক করে আপনি নিজের অজান্তেই পা দিয়ে ফেলতে পারেন মস্ত বিপদে । এই বিপদ ম্যাসেন্জারে প্রেমের ফাঁদে পরার চেয়েও ভয়াবহ । কারণ এরা আন্ত:জাতিক একটা চক্র । যারা মূর্হুতে আপনার আপনার পরিবারের জীবন দুর্বিষহ করে তুলবে ।
যেমন, ফেসবুক বা ইউটিউবে এড দেখলেন , কোন লিংকে দেখলেন , ‘দ্রুত লোণ নিন’ বা অল্প সুদে সহজে ঋণ নিন । টাকার প্রয়োজন কার না আছে ? জাস্ট কৌতূহল থেকে আপনার মনে হলো, দেখি তো ক্লিক করে কি আছে ? ক্লিক করলেন । লিংকটি একটা আপনাকে নিয়ে গেলো ম্যাসন্জের । সেখানে আপনি , তাদের জানালেন , কত টাকা লাগবে তাও জানালেন । তারা আপনাকে আর একটি লিংকে পাঠিয়ে বলল, এখানে ক্লিক করে লোণ প্রসেস করুন । আপনার সরল মনে কাদা নেই তাই ক্লিক করে বসলেন । আর ঠিক তখনি আপনার অতি বিশ্বাসী ফোনটি বেশ কিছুক্ষণ হ্যাং হয়ে বন্ধ হয়ে গিয়ে আবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হলো। ফোন পুনরায় চালু হবার পর আপনি দেখলেন , আপনার বিকাশ বা রকেট একাউন্টে টাকা চলে এসেছে । এরপর আপনার লাইফ ত্যানা ত্যানা । কেননা তারা আপনার ফোনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে , ছবি , মোবাইল নাম্বার সহসব কিছু কপি করে নিয়েছে । শুধু কি তাই তারা এমন সব এপস আপনার ফোনে ইন্সটল করে তা হাইড করে দিবে আপনি খুঁজেও পাবেন না । এরপর এই ফোন ব্যবহার করে আপনি যা যা করছেন তার সবকিছু তারা জেনে যাবে, তাদের সার্ভারে রেকর্ড পর্যন্ত হয়ে থাকবে ।
আপনার বিকাশ বা রকেট একাউন্ট থেকে সব টাকা তুলে নিয়ে শুরু করবে ব্ল্যাকমেলিং । বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক থাকলে তো আর কথাই নাই । আপনার জীবন তখন ত্যানা ত্যানার পরে ও ত্যানা ত্যানা হয়ে যাবে । তাদের চাহিদা মাফিক টাকা দিতে না পারলে আপনাকে,আপনার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি পর্যন্ত দিতে পারে ।
আমার পোষ্টের উদ্দেশ্যে হচ্ছে , এমন ঘটনা ঘটলে আপনি কি করবেন ?
আপনার ফোন হ্যাক হবার পর যতোই এপস আন-ইন্সটল বা ফোন রিস্টার্ট দেন না কেন তা হ্যাকার মুক্ত হবে না । আপনি থেকে যাবেন তাদের কন্টোলে । কিন্তু আমার পরামর্শ শুনলে রক্ষা পেতে পারেন ।
১ম পদক্ষেপ : ফোনটি ইন্টারনেট কানেকশন মুক্ত করুণ ।
২য় পদক্ষেপ : ফোনটি বন্ধ করে সিমগুলো খুলে ফেলুন ।
৩য় পদক্ষেপ : সিমখোলা অবস্থায় ফোনটির সেটিং এ ঢুকে "ফ্যাক্টরি রিসেট" অপশনে ঢুকে সেটি চালু করুন । এর ফলে, আপনার মোবাইল থেকে সকল ডাটা মুছে যাবে । এর মানে , আপনি আপনার মোবাইলে থাকা সকল ফোন নাম্বার,ছবি,ভিডিও হারাবেন । কিন্তু এর ফলে , আপনার মোবাইলটিতে হ্যাকারদের সেট করে দেওয়া এপস গুলোও ডিলিট হয়ে যাবে ।
এরপর ফোনটিতে নতুন করে এসপ ইন্সটল করে নিতে হবে । এটাই হ্যাকারের হাত থেকে বাচার একমাত্র উপায় । তবে আর একটি কথা, শয়তানের মাথা হয় একশ একটা । তারা এমন সব প্রোগ্রামিং কোড লিখে রাখতে পারে যা ফ্যাক্টরি রিসেটের পরেও ফোন দিকে ডিলিট হয় না । ইন্টারনেট চালু হবার পরে কিছু কিছু এপস , আপনা থেকে ইন্সটল হয়ে যায় । এ ক্ষেত্র , যা করবেন -
Settings থেকে Apps মেন্যুতে প্রবেশ করুন
App lock অপশনে ট্যাপ করুন
এরপর হাইড করা অ্যাপের জন্য পাসকোড প্রদান করুন
Hidden Apps অপশনে ট্যাপ করুন
যেসব অ্যাপ হাইড করতে চান, সেগুলো সিলেক্ট করুন
এরপর কাংখিত অ্যাপ হাইড হয়ে যাবে
ফোন হ্যাক হবার লক্ষণ : আপনার মোবাইলের নিয়ন্ত্রক যদি অন্য কেউ হয় , তা বুঝবেন কি করে ?
ফোনটি বারবার হ্যাং হয়ে যাবে । কল করবেন কামালকে কল চলে যাবে কলিকাতায় । অকারণেই ফোনটি বারবার রিস্টার্ট নেবে । আপডেট নিবে । ফাইল মিসিং সহ নানা এরর দেখাবে । ফোন ব্যবহার না করলেও গরম হয়ে যাবে ।
পরিশেষ : ভার্চুয়াল জগতে নিরাপদ থাকতে , অহেতুক ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন । অচেনা অজানা কারো ম্যাসেজের উত্তর দিবেন না । নিশ্চিত না হয়ে, কোন লিংক বা বিজ্ঞাপনে ক্লিক করবেন না । কৌতূহল বসত জুয়ার সাইটগুলোতে ঢুকবেন না । মনে রাখবেন,"ভার্চুয়াল জগতে আপনার নিরাপত্তা আপনার কাছে ।