somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাখাওয়াত হোসেন  বাবন
ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে "আমার কবিতা নামে" আমি ব্লগিং করি মূলত নিজের ভেতরে জেগে উঠা ব্যর্থতা গুলোকে ঢেকে রাখার জন্য । দুনীতিবাজ, হারামখোর ও ধর্ম ব্যবসায়িদের অপছন্দ করি ।

সম্পর্ক

১৩ ই জুলাই, ২০২৪ সকাল ৯:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বুঝলেন স্যার, "মাইয়া মানুষ হইলো গিয়া, এক্কেবারে সাপের জাত। যতোই দুধ,কলা, আদর-সোহাগ দিয়া পোষ মানাবার চেষ্টা করেন না কেন কিছুতেই পোষ মানবো না। প্রয়োজন ফুড়িয়ে গেলেই ছোবল মারবো।"

এক

সকাল থেকে মাজেদের মেজাজ চড়া হয়ে আছে। রাতে ভালো ঘুম হয়নি। সকালে নাস্তা না করেই বাসা থেকে বের হয়ে এসে অফিসের সামনে মোতালেবের চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে বসে আছে।
অফিস শুরু নটায়।
এখন বাজে সোয়া সাতটা। অফিস শুরু হতে এখনো অনেক দেরি। দোকানের মালিক মোতালেব দোকানের ভেতর থেকে  সাত সকালে মাজেদকে দেখতে পেয়ে একটু অবাক হলেও তা প্রকাশ না করে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে এগিয়ে এসে কাধের গামছা দিয়ে বেঞ্চির তক্তা মুছে দিয়ে ওকে বসতে বলে বলল, "স্যার বসেন। চা রেডি হইলে দিয়া যাবো।

মোতালেব আগে তাকে ভাই ডাকতো। এখন সে হেড ক্লাক হওয়ার পর স্যার বলে ডাকে; সমিহ করে কথা বলে।
মাজেদ পকেট থেকে সিগারেট বের করে বেঞ্চিতে বসতে বসতে বলে, চা না, পারলে একটু বিষ দাও।খেয়ে জ্বালা মিটাই।

মোতালেব কথাটা শুনে কিছুক্ষণ মাজেদের দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপর একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কি বুঝে বলে, স্যার বুঝি নাস্তা করে আসেন নাই? তারপর জবাবের অপেক্ষা না করেই বলে, আপনি বসেন আমি নাস্তার ব্যবস্থা করছি। কথাটা বলেই সে হাক দেয়, এই কালু তাড়াতাড়ি হাত চালা না বাবা৷  কাস্টমার আইসা পড়ছে৷ স্যার'কে পুড়ি দে আমি চা দিচ্ছি।

দোকানের ভেতর কালু নামের চোদ্দো পনেরো বছরের একটা ছেলে পুড়ির খামি রেডি করছিল।  মোতালেবের হাক শুনে হাতের কুনই দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে সে বলে, "আরো দশ মিনিট ওস্তাদ। হইলেই দিয়া দিমু৷

মোতালেব কালু কথাটা শুনেও না শুনার ভান করে চা বানানোর টেবিলের সামনে গিয়ে, পর পর সাজানো তিনটি চায়ের কেটলি' র একটিতে চা পাতা দিতে দিতে বলে, হাত চালা। তাড়াতাড়ি কর ব্যাটা।

তারপর টেবিলের সামনে রাখা কাপগুলো বালতিতে ডুবিয়ে একটা করে খলান দিয়ে চায়ের ট্রে তে রেখে।

ড্রায়ার থেকে দিয়াশলাই বের করে এসে দাড়ায় মাজেদের সামনে। তারপর সেটা মাজেদের দিকে বাড়িয়ে ধরে বলে, খালি পেটে সিগারেট খাবেন স্যার? 
মাজেদ কিছু বলে না৷
বাড়িয়ে ধরা দিয়াশলাইটা নিয়ে সিগারেট ধরিয়ে পরপর কয়েকটা টান দিয়ে ধোয়া ছেড়ে বলে বলে, খালি পেটে সিগারেট খেলে কি আর হবে। কপালে যখন মরন লেখা আছে তখনই মরমু। খালি কিংবা ভরা পেটে সিগারেট খেলে মরনের আগ,পর হবে না।
তারপর সে দিয়াশলাইটা মোতালেবের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করে,"তুমি বিয়ে করেছো মোতালেব?"

হঠাৎ ভিন্ন টাইপের প্রশ্ন শুনে মোতালেব কিঞ্চিৎ লজ্জা পাবার ভঙ্গি করে বলে, করেছি স্যার ?  গল্প করার উৎসাহ নিয়ে মোতালেব মাজেদের পাশে বসতে বসতে বলে, তয় আমার বিয়ার ভাগ্য খারাপ। প্রথম বউ মরনের পর দ্বিতীয় আরেকটা বিয়  করেছিলাম। সেই মাগীও পালায় গেছে। এরপর গলা নামিয়ে বলে,আস্তা একটা বেশ্যা আছিলো এইডা। আমারে দিয়া পোষাই তো না। তাই এক পোলার লগে পালায় গেছে। এরপর সে আক্ষেপ সুরে বলে, বুঝলেন স্যার, "মাইয়া মানুষ হইলো গিয়া, এক্কেবারে সাপের জাত।  যতোই দুধ,কলা, আদর-সোহাগ দিয়া পোষ মানাবার চেষ্টা করেন না কেন কিছুতেই পোষ মানবে না। প্রয়োজন ফুড়িয়ে গেলেই ছোবল মারবো।"

পর মুহুর্তেই দাত কেলিয়ে হেসে বলে, আমার কপালে বউ নাইক্কা স্যার ৷ তাই এখন আর ওই সব নিয়া ভাবি না৷ প্রথম বউয়ের রাইখা যাওয়া একটা পোলা আর এই ব্যাবসা পাতি নিয়া আছি। পোলা থাকে ওর খালার কাছে মালিবাগে। এইবার এসএসসি দিবো। খরচাপাতি সব আমিই দেই। মাঝে মাঝে আসে আমার কাছে। পোলাডার ব্রেন খুব ভালা স্যার। ইচ্ছা আছে পড়ালেখা শেষ হইলে আপনার মতো অফিসার হইবো। আমার ইচ্ছা এই অফিসে কাজ করুক। আফনা গো ফায় ফরমাইশ খাটুক। মানুষ হোক। একটা ব্যবস্থা কইরা দিবেন স্যার।

মাজেদ কিছু বলে না। সে চুপচাপ আপন মনে সিগারেট টেনে যেতে থাকে। মাজেদের তরফ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে মোতালেব কথা বলার উৎসাহ হারিয়ে ফেলে৷ মাজেদ আর কিছু বলছে না দেখে এক সময় সে কালুর উদ্দেশ্যে হাক দিতে দিতে আবার ফিরে যায় চা বানাবার টেবিলে।

কালু ততক্ষণে এক গ্লাস পানি আর একটা প্লেটে চারটা পুড়ি এনে রেখে গেছে মাজেদের সামনের ব্যাঞ্চিতে ৷ সেটা দেখে মোতালেব একটা কাপে তড়িঘড়ি চা ঢেলে দুধ,চিনি মিশিয়ে কালুকে দিয়ে পাঠায় মাজেদের কাছে।
মাজেদ হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে গ্লাসের পানি দিয়ে হাত ধুয়ে একটা পুড়ি তুলে নিয়ে চিবতে চিবতে আবারো ডুবে যায় ভাবনায় অতলে৷ মনে মনে ভাবে রমার কথা, মেয়েটার কথা৷
রমা নিশ্চয়ই এতোক্ষণে ঘুম থেকে উঠে গেছে। ওকে বাসায় না দেখে এতক্ষণে নিশ্চিত চিন্তায় পরে গেছে ৷ কথাটা ভাবতেই মাজেদ অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো,  চিন্তা? ওর জন্য চিন্তা আবার কিসের? তাকে নিয়ে চিন্তা করার সময় আছে নাকি ওই মেয়ে মানুষটার?  তার সব চিন্তা তো  এখন তার ওই পরকীয়া প্রেমিকটার জন্য৷ কথাটা ভেবেই সে থুক করে এক দলা থুতু ফেলে হাতের আধ খাওয়া পুড়িটা প্লেটে রেখে দিয়ে উঠে দাড়ায়।

তাতপর মোতালেবের একটু আগে বলা কথাটা মনে মনে আওড়াতে আওড়াতে বলে, আসলেই মাইয়া মানুষ হচ্ছে, সাপের জাত।  যতোই দুধ কলা দিয়ে পোষ মানাবার চেষ্টা করা হোক না কেন কিছুতেই পোষ মানবে না। প্রয়োজন ফুড়িয়ে গেলেই ছোবল মারবেই মারবে। 

রমাও নিশ্চয় তাকে ছোবল মারার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় আছে ৷ কিন্তু সেই সুযোগ মাগীটারে কিছুতেই দেওয়া যাবে না। কিচ্ছুতেই না।

দোকানে ইতিমধ্যে কাস্টমার আসতে শুরু করেছে। ভেতরের দুটো টেবিলে দুজন বসে চা পুড়ি খাচ্ছে। তাদের চা দেবার ফাকে মোতালেব এতোক্ষণ আড়চোখে মাজেদ'কে লক্ষ্য করছিল। সে উঠে দাড়াতেই মোতালেব এগিয়ে এসে তার পাশে দাঁড়িয়ে অত্যান্ত মোলায়েম কন্ঠে প্রশ্ন করলো,"স্যার,পেরেশানি কিসের? আমারে বলেন মন হালকা হইবো।

চলবে....

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:৩০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিপদের সময় কোনো কিছুই কাজে আসে না

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১৫


কয়েক মাস আগে একটা খবরে নড়েচড়ে বসলাম। একটা আরব দেশ থেকে বাংলাদেশি দুটো পরিবারকে প্রায় দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কীসের ক্ষতিপূরণ সেটা খুঁজতে গিয়ে যা পেলাম, তা হলো:... ...বাকিটুকু পড়ুন

পদ ত্যাগ না করলেও ছেড়ে যাওয়া পদ কি শেখ হাসিনা আবার গ্রহণ করতে পারবেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৯



তিনি ছাত্র-জনতার ধাওয়া খেয়ে পদ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে প্রাণে বেঁচে গেছেন। পদের লোভে তিনি আবার ফিরে এসে ছাত্র-জনতার হাতে ধরাখেলে তিনি প্রাণটাই হারাতে পারেন। ছাত্র-জনতার হাত থেকে রক্ষা পেলেও তাঁর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাদ্রাসার ছাত্ররা কেন মন্দির পাহারা দেবে?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:২৫


ছবি দেখে বুঝলেন তো, কেন মাদ্রাসার ছাত্ররা মন্দির পাহারা দিতে হয়, এবং কেন একদল হি,ন্দু মন্দির পাহারার বিরুদ্ধে ভাষন দেয়? আফটার অল ভাঙার দায় তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাগ্রত জনতা পার্টি(জাজপা) হচ্ছে তৃতীয় ধারার নতুন দল, বাড়াবে সবার মনোবল।

লিখেছেন রবিন.হুড, ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫০



যারা দেশকে ভালোবেশে দেশ ও দশের জন্য কাজ করতে চায় তাদের জন্য জাজপা। যারা একা একা দেশের কাজ করতে গিয়ে হাপিয়ে উঠেছেন তাদের জন্য দলীয় প্লাটফর্ম জাজপা। যারা আওয়ামী-বিএনপি-জামাতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুরগি ও বুয়া সংবাদ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৫১

হঠাৎ দেখি মুরগি নাই খোয়াড়ে
ফোন দিলাম বুয়ারে
বুয়া কইল কেমনে কই আমি এখন দিল্লি
ফিরব যখন দেশে
সেও ফিরবে হেসে
এখন বোধয় ভয় দেখাচ্ছে বিল্লি।

আসবা কখন? ঘরযে এলোমেলো
প্রশ্ন করতেই লাইনটা কেটে গেল
টুপ করে মেসেজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×