চট্রগ্রাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বানিজ্যিক শহর। এই শহরটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুব প্রিয় কারণ এই শহরের অদুরেই রয়েছে সারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেলাভুমি।পাক পাখালীর কুহুতান, দূ-রে নীল সাগর যে কারো হৃদয় মুহুর্তেই গলিয়ে দিতে পারে এই সৈকত। এখানে নিজ শহর নবাবগন্জ, দিনাজপুর ছেড়ে আমি চট্রগ্রামের কক্সবাজারে বসবাস করি চাকুরীর সুবাদে। আমি আর আমার এক মাত্র স্ত্রী।
আমার এখান থেকে লাবনী বিচ মাত্র ২০ টাকা ভাড়া্। তাই আমার স্ত্রী প্রায়ই বায়না ধরে সীবিচে যাবে। অনেক সময় অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত অবস্থায় আমি স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে যাই। একমাত্র বউ বলে কথা! তার হুকুম মানতে আমি বরাবর বাধ্য। একদিন শীতের সন্ধ্যায় আমার স্ত্রীর বায়না অনুসারে আমরা লাবণী সীবিচে ঘুরতে যাই। বসে ছিলাম সরকারী ডাবল চেয়ারে। শুধু আমি আর আমার স্ত্রী্। ভালই লাগছিল তবে ঠান্ডা একটু বেশী ছিল। চিন্তা করছিলাম বিধাতা হয়তোবা বিশালতার উদাহরণ হিসেবে সমুদ্র ও আকাশ তৈরী করেছিল্।
হটাৎ এক বৃদ্ধ কোথা থেকে যেন হাপাঁতে হাপাঁতে আসল। বয়স হয়েছে অনেক। দেখে মায়া হল তাকে আমি বসতে দেয়। আর বসেই কৃতজ্ঞতার একরাশ বুলি ছুড়লেন আমার দিকে। তারপরেই শুরু করলেন তার সন্তানদের সম্পর্কে বলতে। তার দুই ছেলে আর এক মেয়ে। কিন্তু তিনি বললেন তার তিন মেয়ে দুই ছেলে। পরে আমি বুঝতে পারলাম তিনি তার ছেলের বউদেরকে মেয়ের চোখে দেখেন। বয়স্ক বৃদ্ধ বললেন তার সন্তানেরা তাকে খুব বেশী ভালবাসে। তিনি কানে কম শুনেন তাই তার সন্তানেরা তাকে বাসা থেকে বেরুতে দেয় না।দুর্ঘটনা ঘটার ভয়ে। তার ছেলেরা আজ বাড়ীতে নেই, তো কি হয়েছে তিন মেয়েতো আছে! তাই তিনি লুকিয়ে বেরিয়েছেন সৈকত দেখতে। এসব বলে বৃদ্ধ বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।
হটাৎ বুকের ভিতর যেন আমার হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো আমার! বাংলাদেশের এক প্রান্তে আমি অপর প্রান্তে আমার বাবা-মা। মাসে একবারের বেশী দুই বার ফোন দেই না আমি। তারা হয়তো তাদের একমাত্র সন্তান, আমার কথা অপরিচিত মানুষের কাছে গল্প করেন। হয়তোবা বলেন অনেক আহল্লাদ করে মানুষ করেছেন আমায়। বানিয়েছেন দেশের সেরা ইন্জিনিয়ারদের একজন। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে বড় হয়েছি আমি। দূরে চলে এসেছি আমি। আর তাই একটা মিনিট ফোন দেয়ার সময় পর্যন্ত আমার হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০৫