প্রথম অংশ
ও আমার ছাত্র।এবং আমার ক্ষুদ্র পরিষরে সংগৃহীত বইয়ের ও একজন নিয়মিত পাঠক।বহু বছর ধরে ওর ভাইদের পড়ানোর সুত্র ধরে পারিবারিক ভাবে ওদের সাথে আমার সম্পর্ক থাকার কারনে ওর অথবা ওর পরিবারের সব কথা ই আমি জানতাম। জানতামনা শুধু, ও কবে কখন থেকে লেজার কোচিং এ কোচিং করা বাদ দিয়ে ই.হক কোচিং এ কোচিং করা শুরু করেছিলো।
এখন বুঝতে পেরেছি মৃত্যুই ওকে, আমাদের সবার অজান্তে এবং ওর অবচেতন মনের জান্তে আর ওর চেতন মনের অজান্তে ঐ খানে ঠেলে নিয়ে গিয়েছিল।তাইতো কোচিং কর্তৃপক্ষের এমন একটা জায়গায় পিকনিকে যাবার সিদ্ধান্ত নেওয়া।যদিও তারা অধিকাংশই এটাকে শিক্ষা সফর বলেই চালিয়ে দিতে চায় এবং সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই তাই বলে।তবে আমি মনে করি এবং জানি ওখানে শিক্ষার বালাই ও থাকেনা।না থাকে ঐ স্থানে দেখে শেখার কিছু,না থাকে শিক্ষনীয় কিছু,না থাকে শেখানোর কেউ।যা থাকে তা শুধুই খাওয়ার পর্ব,গান-বাজনা,নাচা-কুদা।আর থাকে এ সবের ফাঁকে ফাঁকে ছেলে মেয়ে এবং নয়াল নয়াল শিক্ষক-ছাত্রীদের ফষ্টি নষ্টি, ছাত্রীদের শাড়ির আঁচল ধরে শিক্ষকদের টানাটানি,বার-তের,চোদ্দ-পঁনের বছর বয়সী ছেলে মেয়েদের একজন আর একজনের দিকে রোমান্টিক দৃষ্টিতে আড় চোখের তাকাতাকি।তাই আমি মনে করিনা ওখানে শিক্ষা সফরের মত কিছু থাকে বা আছে।
সাধারনত কোচিং সেন্টারের পিকনিক গুলো অনুষ্ঠিত হয় ছাত্র ছাত্রীদেরকে ধরে রেখে ব্যবসায় অধিক মুনাফা অর্জণ করার জন্য।সদ্য উর্ত্তীর্ন টিনএজার বালক বালিকারা একে অপরের কিছুটা লাগামহীন সান্নিধ্য পাবার জন্য এবং কিছুটা আনন্দ উপভোগ করার জন্য পিকনিক কথাটার নাম শুনলেই দরিদ্র বাবা মার উপর অতিরিক্ত চাপ দিয়ে হলেও পিকনিকের চাঁদা নিয়ে পিকনিকের সদস্য হয়।আর যাদের বাবার অর্থ আছে তারা অধিকাংশই বাবা মার সন্মতি টুকুও নেবার প্রয়োজন মনে করেনা।আর ভাইয়া নামধারী কিছু শিক্ষক এবং কিছু অকাল পক্ক কিশোরী ছাত্রী (যারা নিজেদেরকে আরো দুই-পাঁচ বছর আগে থেকেই যুবতী ভাবতে এবং যুবতী সাজতে শুরু করছে, পিকনিক কিংবা অন্য যেকোন ধরনের অনুষ্ঠানে যারা শাড়ি পরে সেঁজে গুজে এমন ভাবে হাঁটে যেন সম্প্রতি ওনার বিয়ে হয়েছে তাই আরেকজনের স্কন্ধে উঠেতে পেরেছেন বলে সেই খুশিতে ভাবের চোটে উনি হাঁটতেই পারছেননা,কিংবা উনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী,সাজু গুজু করে রমনা কিংবা উদচিতে বর্ষ বরনের জন্য যাচ্ছেন ! অথচ উনি যাচ্ছেন কোচিং সেন্টারের এক জানালা এক দরজা বিশিষ্ঠ কামরা কিংবা স্কুলের নিজস্ব কম্পাউন্ডের ভিতর অথবা পশুর চারন ভূমিতে পিকনিকের অনুষ্ঠানে।বয়স ওনার মাত্র তের চোদ্দ বড়জোর পঁনের। যত্ত সব ঢং!) যাদের নজর সহপাঠী বালকদের থেকে নয়াল ভাইয়া রুপী স্যারদের উপরই বেশি,সেই শিক্ষক ভাইয়া আর নব্য যুবতীদের পিকনিকের প্রতি আকর্ষন একটু বেশিই থাকে।আর পিকনিকের মৌসুম আসলেই কোচিং পরিচালক কিংবা কোচিং কর্তৃপক্ষের থেকে ভাইয়াদের পিকনিকের জন্য তাড়াহুড়া বেশি।তারাই প্রথম ছাত্র ছাত্রীদেরকে পিকনিকের জন্য উদ্বুদ্ধ করে।তাদেরই পিকনিকের ব্যাপারে মাথাব্যাথা আগে থেকে শুরু হয়ে যায়।তারপর ছেলে মেয়েরা লাফ মারে।আর কর্তৃপক্ষেরতো সদিচ্ছা তো আছেই।কারন ব্যবসার অবস্থা ভালো রাখার এটা একটা ভাল উপায়।এ ধরনের ব্যবসায় যার প্রতিষ্ঠান যত বেশি আউট প্রোগ্রাম সার্ভিস ভাল এবং বেশি দিতে পারে তার প্রতিষ্ঠান তত বেশি নাম কামাতে পারে,এবং মুনাফা অর্জনে ও তারা এগিয়ে থাকে অন্যদের তুলনায়।
কোচিং সেন্টারগুলোর নয়াল স্যারদের একটা অলিখিত আইন থাকে।তা হচ্ছে তাঁদের কে স্যার ডাকা যাবেনা।ওনাদের ভাইয়া ডাকতে হবে।কারন ওনাদের বয়স কম,ওনারা হাল আমলের ক্রেজ! আর যারা ওনাদের নিষেধ অমান্য করে ভাইয়া না ডেকে ওনাদেরকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্যার ডাকে তারা হচ্ছে গেঁয়ো ভুত।ওনাদের ভাইয়া ডাক ও শুনতে ইচ্ছা হয়,আবার টিচিং দিয়ে পয়সাও কামাতে হয়।ওনারা সবটূকুই উপভোগ করেন।আসল কথা হল ভাইয়া ডাকলে খুব সহজ ভাবে ছাত্রীর পায়ে পাড়া দিয়ে তার মন আকৃষ্ট করে নিজের ব্যাবহৃত দুই-তিনটা মোবাইল ফোনের বিশ-বাইশটা সিমের মধ্যে দুই চারটার নম্বর ছাত্রীকে মিস্ডকল দেওয়ার জন্য দেওয়া যায়,চোখে চোখে হাসা যায়,প্রেম হয়।আর অকালপক্ক বিবিরাও ভাইয়া ডাকতে ডাকতে আহ্লাদে গলে খসে একেবারে আটখানা হয়ে যায়,যেন রসে ভিজানো শীতের পিঠা! পড়ার টেবিলে বসলেই ভাইয়ার হাস্য মাখানো বদণ খানি চোখে ভেষে ওঠে।
আর সদ্য দাড়ি গোফ গজানো কিশোর ভাইজানরা তো কেউ কেউ ভাইয়াদের সাথে নীল ছবি দেখেন,গঞ্জিকা,ইয়াবা সেবন করেন।
শিক্ষা খাতকে সরকার যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিচ্ছে বলতে গেলে তার পুরোটাই বৃথা।কারন শিক্ষকেরা স্কুল কলেজে আসছেন চা পান খাচ্ছেন।ক্লাস টাইমে ক্লাসে যাচ্ছেন,ক্লাসের নামে দুই চারটা ফাঁকা বুলি আউড়িয়ে ঘন্টা বাজলে বেরিয়ে আসছেন।আর প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে বর্তমান নারীদেরকে যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দান করা হচ্ছে সেখানটাতেও বলা যায় সুভংকরের ফাঁকিই জুঁটছে সরকার আর দরিদ্র দেশের দরিদ্রক্লিষ্ট অভিভাবক আর তাদের শিশুদের।কারন দেখা যায় ওনারা একদম কোন কষ্ট নাই প্রাইমারি স্কুলের চাকুরীতে সে কথা ভেবেই এই চাকুরীটাকে ধ্যানে আর সপ্নে লালন করেন।কারন খুব সহজেই এখানে বাচ্চাদের ফাঁকি দেওয়া যায়।স্কুলের রেস্ট রুমে বসে অথবা করিডোরে হেঁটে হেঁটে গুন গুনিয়ে রবীন্দ্র সংগীত গাওয়া যায় কিংবা স্কুলের পাশের কোন বাড়িতে প্রায় সমবয়সী বা কিছুটা বয়সে বড় কোন ভাবী থাকলে জমিয়ে সেখানে আড্ডা দেওয়া যায়।আর এ ক্ষেত্রে স্কুলের প্রধান শিহ্মক অল্প বয়সী নারী শিক্ষকদের অনুকুলে থাকেন।
তাই অভিভাবকদের ছুটতে হচ্ছে কোচিং সেন্টার গুলোতে কিংবা দারস্থ হতে হচ্ছে স্কুল শিক্ষকদের বাসার ব্যক্তিগত ব্যাচে।সেখানেও ওই একই সমস্যা প্রায়।কারন কিছু কিছু শিক্ষক আছেন যাদের একদমই ভালো লাগেনা ছাত্রীদের পিঠে হাত দিতে না পারলে,যদিও রূপহীন কিংবা কুৎসিত মনের শিক্ষকদের ঘরে সুন্দরী স্ত্রী রয়েছেন। শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ব্যাচে না পড়লে আবার ছাত্র ছাত্রীদের পরীক্ষায় পাস করানো হয়না।অকারন তাদের প্রশ্নের উত্তর সম্পূর্ন কেটে দেওয়া হয়।তার মানে আমার ব্যাচে আসো।এভাবে সরকারী বেতনের পাশাপাশি তাঁরা লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন,যার একটা টাকাও সরকারকে আয়কর হিসেবে দিচ্ছেননা।তাঁরা ব্যাচে আবার যা পাঠদান করেন অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা দূর্বল ছাত্র ছাত্রীদের বোধগম্য হয়না।আর তখনই স্কুল স্যারদের ব্যাচের পাশাপাশি বাইরের কোচিং সেন্টার গুলোর কাছেও যেতে হয়।পাঠদানের অবস্থা কিছু কিছু কোচিং প্রতিষ্ঠানে খুব ভালো।কিন্তু ভাইয়া সমস্যা সেখানে একটা বড় রকমের সমস্যা।
পাঠক আমরা সবাই এ গুলো সম্পর্কে কম বেশি অবগত আছি।ভাইয়া,ভাইজান এবং আপুরা কি করবেন না করবেন সেটা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার।তাই এ প্রসঙ্গে আমি আর নাইবা বললাম। [কারন আমরা সত্য শুনতে একদম ভালোবাসিনা।না জানি আমাকে আপনারা এই ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়ার অপরাধে কত বস্তা গালি দিয়েছেন।ক্ষমা চাইবোনা আপনাদের কাছে কারন চরম সত্য বলার অপরাধে আপনাদের নিকট কিংবা সমাজের নিকট থেকে যদি ঘৃনাও পাই,সেটাই পরম পাওয়া।তাই ঘৃনা অথবা ভালবাসা এর যে কোনটা ই আপনারা দিতে পারেন।অবশ্য এদেশে সত্য বলার স্বাধীনতা মানুষের একদমই নাই।নাই বাকস্বাধীনতা বলে কোন স্বাধীনতা।বাকস্বাধীনতা বলতে যা আছে তা শুধুই সংবিধানের পাতায়,আর কোথাও নাই।এমনকি সত্য কেউ বললে তা সত্য বলে স্বীকারই করেননা অধিকাংশ মানুষ।আর যারা সত্য বলেন উল্টো তারাই হয়ে যায় আক্রমনের লক্ষ্য বস্তু।তার মুন্ডু কাঁটো,তার লেখা নিষিদ্ধ কর,তাকে ফাঁসি দাও ইত্যাদি আবদার সরকারের কাছে।আরো কত কি তা এদেশের সচেতন নাগরিক সমাজ সবই জানেন।