somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হত্যা, সম্ভ্রমহরণ, লুণ্ঠন, জোরপূর্বক ধর্মান্তরসহ ৮ অপরাধ প্রমাণিত ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধে দেইল্যা রাজাকার সাঈদীর ফাঁসি নিজস্ব প্রতিবেদক:

০১ লা মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশের খবর - ১ মার্চ, ২০১৩

হত্যা, সম্ভ্রমহরণ, লুণ্ঠন, জোরপূর্বক ধর্মান্তরসহ ৮ অপরাধ প্রমাণিত ॥
মানবতাবিরোধী অপরাধে দেইল্যা রাজাকার সাঈদীর ফাঁসি
নিজস্ব প্রতিবেদক:

মওদুদীবাদী জামাতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ওরফে দেইল্যা রাজাকারের বিরুদ্ধে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, সম্ভ্রমহরণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, জোরপূর্বক ধর্মান্তর করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগ সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারক এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় দেয়।
সাঈদীর বিরুদ্ধে থাকা ২০টি অভিযোগের মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে ৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ১৪, ১৬, ১৯ নম্বর অভিযোগ। এর মধ্যে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করার আদেশ দেয়া হয়েছে। তাই অন্যগুলোতে আলাদা করে কোনো শাস্তি নির্ধারণ করা হয়নি। একই সঙ্গে সাঈদীর বিরুদ্ধে আনা অন্য ১২টি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে সেগুলো থেকে খালাস দেয়া হয়েছে।
এটি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তৃতীয় এবং এই ট্রাইব্যুনাল থেকে দেওয়া প্রথম রায়। গতকাল ট্রাইব্যুনালে ১২০ পৃষ্ঠার রায়ের ৬০ পৃষ্ঠার সারাংশ পড়ে শোনানো হয়।
পিরোজপুরের শান্তিকমিটির সদস্য ছিলো সাঈদী :
১২০ পৃষ্ঠার রায় পড়ার শুরুতেই বিচারক এ টি এম ফজলে কবীর বলেন, ‘আমরা রায়ের আগে দুটি কথা বলতে চাই। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পরিচয় দেয়ার কোনো দরকার নাই। তার ওয়াজ শোনার জন্য হাজার মানুষ যান। সে শুধু প্রখ্যাত মাওলানা নয়, সে দু’বারের এমপি। জামাতের নায়েবে আমির। কিন্তু আমরা তাকে নায়েবে আমির কিংবা সাংসদ হিসেবে বিচার করছি না। আমাদের ফিরে যেতে হবে ৪০ বছর আগে। তখন সে ৩০ বছরের যুবক ছিলো। সে ছিলেন বিবাহিত, এক সন্তানের জনক। পিরোজপুরে সাউদখালীতে বাড়ি। তখন সে কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নেতা ছিলো না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে পিরোজপুরের শান্তিকমিটির সদস্য ছিলো। সে আলেম পাস। উর্দুতে ভালো কথা বলতে পারতো। তাই পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে তার ভালো যোগাযোগ তৈরি হয়। আমাদের বিচার করতে হবে, সে ওই সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলো কিনা। আমরা সেই ৩০ বছরের যুবকের বিচার করছি; বর্তমানের সাঈদীর বিচার করছি না, যার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে গ্রামের নিরীহ লোক ও সাধারণ মানুষ।’ তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে ২৮ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন ১৭ জন।
অ্যাম্বুলেন্সে করে ট্রাইব্যুনালে নেয়া হয় সাঈদীকে :
সাঈদীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ট্রাইব্যুনালে নেয়া হয়। সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে শিশু একাডেমীর পাশের ফটক দিয়ে ট্রাইব্যুনালে নেয়া হয় সাঈদীকে। এরপর তাকে ট্রাইব্যুনাল-১এর হাজতখানায় রাখা হয়। বেলা ১১টা নয় মিনিটে তকে ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় তোলা হয়।
ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা :
সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, হাইকোর্ট ভবন ও আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তাবলয় তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গোটা এলাকায় কোনো যানবাহন ঢুকতে দেয়া হয়নি। দোয়েল চত্বর এলাকা, কার্জন হল ও বঙ্গবাজার সংলগ্ন রাস্তা, কদম ফোয়ারা সংলগ্ন রাস্তা, মত্স্য ভবন ও প্রেসক্লাব এলাকার সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে আটকে রাখা হয়। পথচারীদের চলাচলও সংরক্ষিত করা হয়েছে। কেবল প্রেসক্লাব এলাকার রাস্তা দিয়েই পথচারীরা হেঁটে হাইকোর্ট এলাকায় যেতে পারে। পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে ট্রাইব্যুনালের দুটি ফটকেই প্রায় অর্ধশতাধিক র্যা ব ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে হাইকোর্টের সামনে জড়ো হন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্যরা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে স্লোগান দেন তারা। মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১এ এটি প্রথম রায়।
ফিরে দেখা :
২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলা করা হয় সাঈদীর বিরুদ্ধে। এই মামলার বিচার শুরু হয় প্রথম, যুক্তি উপস্থাপনও শেষ হয় প্রথম। তবে ২০১২ সালের ২২ মার্চ গঠিত ট্রাইব্যুনাল-২ ইতিমধ্যে দুটি মামলার রায় দিয়েছে। এর মধ্যে গত ২১ জানুয়ারি জামাতের সাবেক সদস্য আবুল কালাম আযাদকে মৃত্যুদ- এবং ৫ ফেব্রুয়ারি জামাতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেয়া হয়। সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের তৃতীয় রায়।
সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলেছে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে, রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষকে দুই দফায় যুক্তি উপস্থাপন করতে হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন অন্যান্য মামলার তুলনায় এটিতে সাক্ষীর সংখ্যাও বেশি।
ট্রাইব্যুনালের প্রথম মামলা :
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার দায়ে করা মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গ্রেপ্তার হয়। ওই বছরের ২১ জুলাই সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। ২ নভেম্বর তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২০১১ সালের ১১ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষ সাঈদীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। ৩ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল তাঁর বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগ গঠন করে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করেন।
২০ অভিযোগ :
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর ৩(২) ধারায় সাঈদীর বিরুদ্ধে যে ২০টি অভিযোগ গঠন করা হয়, তার মধ্যে রয়েছে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা (জেনোসাইড) ও বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন এবং তাতে সহযোগিতা করা। মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোর মধ্যে রয়েছে হত্যা, অপহরণ, আটক রাখা, নির্যাতন, সম্ভ্রমহরণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ও জোরপূর্বক ধর্মান্তর করা এবং এ ধরনের অপরাধে সহযোগিতা করা।
সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তি উপস্থাপন :
২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষের ২৭ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। ৮ এপ্রিল থেকে ৯ কার্যদিবসে জবানবন্দি দেন রাষ্ট্রপক্ষের শেষ সাক্ষী ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হেলালউদ্দিন। ৭ মে থেকে আসামিপক্ষ তাকে ৪৮ কার্যদিবস জেরা করে। ২ সেপ্টেম্বর থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত আসামিপক্ষে ১৭ জন সাফাই সাক্ষ্য দেন। ৬ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় অপেক্ষাধীন (সিএভি) রাখা হয়।
কিন্তু স্কাইপে বিতর্কের জের ধরে ১১ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১এর চেয়ারম্যান পদ থেকে বিচারক নিজামুল হক সরে দাঁড়ালে ১৩ ডিসেম্বর এই ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। আসামিপক্ষ পুনর্বিচারের আবেদন জানায়। ২০১৩ সালের ৩ জানুয়ারি পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল আসামিপক্ষের পুনর্বিচারের আবেদন খারিজ করলেও দুই পক্ষকে আবার মামলার সারসংক্ষেপ ও আইনি বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপনের নির্দেশ দেয়। সে অনুসারে দ্বিতীয় দফায় দুই পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে ২৯ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল আবার রায় অপেক্ষাধীন (সিএভি) রাখেন।


১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×