"ভাত সেদ্ধ হয়েছে কি-না, তা দু'একটা ভাত টিপলেই বুঝা যায়; সব ভাত টিপা লাগে না।" - কথাটা খুবই সত্য। আমি ভাত যাচাই করার এই পদ্ধতিটা ব্যবহার করছি গত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে বইমেলা থেকে কেনা বইগুলোর উপর। এটা করার আর একটা কারণ হচ্ছে, আমি মেলা চলাকালীন সময়ে পাঠকদের বই কিনতে উৎসাহিত করতে চাই। অন্য সময়ও যে পাঠকরা বই কিনছে না তা নয়। বিষয়টা অনেকটা ঈদ বা পূজার মতো। এই সময় নতুন জামা কেনার একটা হিড়িক পড়ে যায়। তাই বইমেলার এই উৎসবে সবার হাত ভরে ওঠুক নতুন নতুন বইয়ে।
.
মোস্তাক শরীফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক । অধ্যাপনার পাশাপাশি লেখালেখির জগতের সাথেও ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। তাঁর সতেরোটি বই বেরিয়েছে। শুধু গল্প-উপন্যাসই নয়, অনুবাদ ও ইতিহাস বিষয়েও তার বিশেষ আগ্রহ আছে। সব মিলিয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি একজন সব্যসাচী লেখক। তাঁর প্রতিটা লেখায় যত্নের ছাপ সুস্পষ্ট; যার জন্য প্রতি মেলায় আমি তাঁর বই নির্দ্বিধায় সংগ্রহ করি- বিশ্বাস করি উনি পাঠককে ঠকাবেন না।
.
চমৎকার রঙিন প্রচ্ছদে ‘পারস্যের পাঁচ গোলাপ’ ফুটে আছে আমার টেবিলে । তাঁর গন্ধ নেই, তবু হৃদয়কে মোহিত করেছে ফেরদৌসি, ওমর খৈয়াম, রুমি, শেখ সাদি ও হাফিজ । পারস্য সাহিত্যের পাঁচ যুগন্ধর প্রতিভাকে জানার বাসনায় পাতা উল্টাই।
.
প্রথমেই জালালুদ্দিন রুমির একটি কবিতায় চোখ আটকে যায়-
.
ঠিক-বেঠিকের গণ্ডি ছাড়িয়ে বহু দূরে
একটা মাঠ আছে, তোমার সঙ্গে দেখা হবে সে মাঠে।
আত্মা যখন সেই ঘাসে গিয়ে শোয়
পৃথিবী তখন এতই পরিপূর্ণ যে তাকে নিয়ে কথা বলা যায় না-
ধারণা, ভাষা, এমনকি ‘একে অন্যের’ কথাটিরও
মানে থাকে না কোনো।
ভোরের বাতাসে কিছু রহস্য আছে যা সে তোমাকে জানাতে চায়
ফের ঘুমিয়ে পড়ো না।
মন যা সত্যিই চায় তা-ই চাইতে হবে তোমার
ফের ঘুমিয়ে পড়ো না।
চৌকাঠ পেরিয়ে মানুষ কেবল আসছে আর যাচ্ছে-
দুটো পৃথিবী এসে মিশেছে যেখানে
দরজাটি গোল এবং উন্মুক্ত
ফের ঘুমিয়ে পড়ো না।
.
মুগ্ধ হয়ে সে কবিতার আস্বাদ গ্রহণ করি ।
চমৎকার করে সাজানো বিষয় সূচি এক পলক দেখে নেই-
.
পারস্য: কবির দেশ কবিতার দেশ
ফেরদৌসি: ফার্সি মহাকাব্যের জনক
ওমর খৈয়াম: রুবাইয়াতের অমর স্রষ্টা
রুমি: সুফিবাদের প্রবাদপুরুষ
শেখ সাদি: পুষ্প ও প্রজ্ঞার কবি
হাফিজ: কবিদের কবি
.
তারপর পড়তে থাকি-
.
পারস্য
কবির দেশ কবিতার দেশ
আজ থেকে ১৩৫ বছর আগে পারস্যদেশীয় পদ্যের গুণকীর্তন করতে গিয়ে আইন্সওয়ার্থ স্পফোর্ড নামে এক মার্কিন পণ্ডিত লিখেছিলেন, ‘এই কবিতার জন্ম হয়েছে এমন এক দেশে যেটি প্রকৃতির আশীর্বাদে ধন্য । এদেশের জলবায়ু মৃদু, স্বোতস্বিনীগুলো স্বচ্ছ, তৃণ প্রান্তর শ্যামলিমায় ভরা; আছে আকাশ ছোঁয়া পর্বত, উত্তাল সমুদ্র আর তরঙ্গিণী তটিনী । ...
.
প্রকৃতির আশীর্বাদে ধন্য সেই দেশে কবিতা ধরা দিয়েছে বার বার বহুরূপে- পারস্য কবিদের অসামান্য কাব্য প্রতিভায়। প্রতিভা দীপ্ত সেই সব কবিদের সৃষ্টি ও তাঁদের জীবনের নানা ঘটনার বর্ণনা পড়ছি-পারস্য দেশে ঘুরছি লেখকের সাথে। পাঠের আনন্দ টুকু সাথে নিয়ে শেষ করছি আজকের মত। আশা করি, আপনিও ‘পারস্যের পাঁচ গোলাপ’-এর গন্ধে মাতোয়ারা হবেন।
.
অন্যান্য যে বইগুলো সংগ্রহ করেছি, সেই সব বই নিয়েও সংক্ষিপ্ত পাঠপ্রতিক্রিয়া লিখতে চাই, যেন মেলা চলাকালীন বইয়ের বিক্রি আশানুরূপ হয়।
.
মো. শামছুল ইসলাম
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৮:৫৪