করোনার কারণে গত দুবছর বাসায় ঈদ সংখ্যা রাখা হয় নি। এবার এক জনের লেখা পড়বো বলে দুটো ঈদ সংখ্যা রাখা হলো– দেশ রূপান্তর ও ইত্তেফাক । রোজার মধ্যে দুটোই একটু নেড়ে-চেড়ে দেখলাম। তারপর দেশ রূপান্তরের “অব্যবহৃত নাকফুল” উপন্যাসটা নিয়ে বসলাম। কিছু দূর পড়ে বুঝতে পারলাম রোজার মধ্যে টেস্ট খেলে মজা পাচ্ছি না। ( উপন্যাসকে আমি টেস্ট ক্রিকেট বলি, আর গল্পকে ওয়ান ডে।) এবার ওয়ান ডে আমেজে ইত্তেফাকের গল্প “দূরাগত ধ্বনি” শুরু করলাম। রোজার মধ্যেই গল্প পড়া শেষ। তারপর ভাবলাম নীতুকে নিয়ে। যে কোন ভালো গল্প পড়েই আমার এমন টা হয়; তার মুখ্য চরিত্রটা নিয়ে ভাবি।
.
শচীন টেন্ডুলকারে মতো ছোট ছোট দৃষ্টি নন্দন শট খেলে মাসউদ আহমাদ তার গল্প এগিয়ে নিয়ে গেছেন ছোট ছোট বাক্যে। তাই গল্প পাঠে ছিল সাবলীল গতি।
.
নীতু বেসরকারী একটা ব্যাংকে চাকরি করে। টাকার লেনদেন নয়, বিভিন্ন ধরণের অ্যাকাউন্ট খোলার কাজ সে করে। এমনি এক ক্লায়েন্টের জন্য নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে গিয়ে সে অবাক ও বিস্মিত হয়। তার জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিল, এমন এক জনের চেহারার সাথে তার নতুন ক্লায়েন্টের পাসপোর্ট সাইজের ছবির হুবহু মিল। নমিনি মেয়েটার ছবি দেখে নীতুর মধ্যে ভাবান্তর হয়। রাহাত আলম ও তার বিয়ে হয়ে ছিল পরিচয় ও প্রেমে। সুখেই ছিল বেশ কিছু দিন । তারপর মতের অমিল থেকে ছাড়াছাড়ি। ভিভোর্স হয়নি । তবে কোন রাহাত এই মেয়েটাকে বিয়ে করতে গেল?
.
গল্পটা এমন ভাবে বলা, পাঠককে শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাবে। লেখক সুন্দর সমাপ্তি টেনেছেন। তারপরও আমি মনে মনে ভেবেছি, এমনটা না হয়ে এমন হলে, কেমন হতো? এখানেই লেখকের সার্থকতা। এই যে পাঠকের মনে একটা চিন্তার বীজ বুনে দেওয়া, এটাই লেখকের প্রাপ্তি। পাঠক নিজের অজান্তেই লেখককে তার মনে স্থান করে দিয়েছে।
.
নীতুর চরিত্র আর দশটা নারীর মতই। সেই কবে ছেড়ে আসা রাহাতের পাশে অন্য নারীকে দেখে সে ঈর্ষান্বিত হয়েছে।
তারপর যখন নিশ্চিত হয়েছে, এ নারী রাহাতের স্ত্রী নয়, প্রশান্ত মনে ফিরে এসেছে নিজের ঘরে। দূরাগত ধ্বনির মতো রাহাত এখনো নীতুর হৃদয়ে রয়ে গেছে, রয়ে যাবে। নারীর এই চিরন্তন রূপের অনিন্দ্য সুন্দর প্রকাশে সার্থক মাসউদ আহমাদ।
.
শেষ বিকেলের রোদ নেমে গেছে, সন্ধ্যা ঘনায়মান, আজ এখানেই শেষ করছি।
আগামী পর্বে থাকছে “অব্যবহৃত নাকফুল” ।
(চলবে...)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০২২ দুপুর ১:৫৮