Book Review: Power of Habit-Part Two -Chapter Seven: How Target knows what you want before you do: When companies predict and manipulate habits
কিভাবে কোন কোম্পানি ক্রেতার অভ্যাস ধারনা করে এবং সেটাকে বিক্রি বৃদ্ধির জন্য ব্যাবহার করে
এন্ড্রো পোল (Andrew Pole) ছিলেন একজন পরিসংখ্যানবিদ যিনি ডাটা নিয়ে কাজ করতে ভাল বাসতেন। ২০০২ সালে তিনি ডাটা বিশেষজ্ঞ হিসাবে তিনি যোগ দেন “টার্গেট” নামে খুচরা বিক্রয় (রিটেল স্টোর) ব্যাবসায়। এখানে তিনি কাজের সুযোগ পান জটিল মনস্তাত্বিক গঠনের আমেরিকান শপারদের ক্রয়ের অভ্যাস নিয়ে কাজ করার। উনার কাজ ছিল ক্রেতাদের মনের কথাকে গানিতিক মডেলে রুপান্তরিত করা যাতে সেই হিসাবে তারা কৌশল (স্ট্রাটেজি) সেট করতে পারে যাতে এই ক্রেতারা তাদের দোকানে আরো বেশী টাকা খরচ করেন। গ্রাহকদের মনস্তত্ব বিশ্লেষন করে বিক্রি বাড়ানোর প্রচেষ্টা আগে থেকেই ছিল, কিন্তু সেটা ছিল সবাইকে একই পাল্লায় মাপার মত, সাধারন অফার তৈরি করা হতো সবার জন্য (one size fit all)। কিন্তু সবার প্রয়োজন কিম্বা ক্রয়ের অভাস তো এক নয়। সুতরাং লাভ বাড়ানোর জন্য তো সবার অভ্যাসটা জানা দরকার এবং তার অভ্যাসকে উসিকেয়ে দেবার মতো অফার তৈরি করা দরকার। আর সেজন্যই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এন্ড্রো পোলের মত ডাটা বিশেষজ্ঞ এত কদর। বিভিন্ন গবেষনার মাধ্যমে মার্কেটাররা মোটামোটি নিশ্চিত কারো অভ্যাসটা পড়তে পারলে তাকে দিয়ে অনেক কিছুই কেনানো যায়। গবেষনায় দেখা যায় যে গ্রাহকরা বাসা থেকে তালিকা করে দোকানে আসে, তারাও ৫০% ক্রয় সিদ্ধান্ত নেয় দোকানে এসে, শেলফে দ্রব্য দেখার পর, তালিকার বাইরে থেকে। ২০০৯ সালে ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ক্যালিফোর্ণিয়া্র দুই গবেষক সিদ্ধান্ত টানেন গ্রাহকরা একরকম অভ্যাস চক্রের শিকার, তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অতীতের আচরনের পুনরাবৃত্তি করেন । দেখা যায় এক গ্রাহক একই ব্রান্ডের টুথপেস্ট কিনছেন, যদিও তিনি বলছেন আমি এই দ্রব্যটা ততটা পছন্দ করিনা। সুতরাং বলা যায় মানুষের ক্রয় একটা অভ্যাস তবে একেকজনের অভ্যাস একেকরকম। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস এঞ্জেলেস (UCLA) একজন ভিজিটিং প্রফেসর এলান আন্ডারসেন গবেষনা করে জানার চেষ্টা করেন কেন এবং কখন গ্রাহকদের ক্রয়ের অভ্যসে পরিবর্তন হয়। উনি সিদ্ধান্ত টানেন একজন মানুষের জীবনের কোন বড় ঘটনার ফলে ক্রয়ের অভ্যাস পরিবর্তনের সম্ভবনা অনেক বেশী যেমন বিয়ে বা ছাড়াছাড়ি, বাড়ি কেনা, সন্তানের জন্ম, চাকরি পাওয়া বা হারানো ইত্যাদি। যদিও গ্রাহকরা এই পরিবর্তন সমন্ধে খুব বেশি সচেতন নয় কিন্তু এই সময় তারা মার্কেটারদের টোপ সহজেই গিলে থাকেন। মার্কেটাররা এই সময়গুলি বের করা এবং সুযোগের সদ্ব্যাবহার করতে সচেষ্ট থাকেন। উনার এই সিদ্ধান্ত আধুনিক মার্কেটিং এর তত্ব হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এজন্যই ক্রমেই গ্রাহকদের মনস্তাত্বিক বিশ্লেষন থেকে সরে এসে ডাটার উপর নির্ভরের প্রবনতা শুরু হয় কর্পোরেট জগতে।
এন্ড্রো পোলের উপর দ্বায়িত্ব পড়ে গ্রাহকদের ক্রয় প্যাটার্ণ বিশ্লেষন করে এদের মধ্যে কারা গর্ভবতী তার পুর্বানুমান করা। আগেই বলা হয়েছে জীবনের বড় কোন ঘটনা মানুষের ক্রয়ের অভ্যাসের উপর প্রভাব ফেলে এবং এই সময় তারা মার্কেটারদের দেয়া টোপ গিলেন সহজেই। মা হওয়টা একজন নারীর জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জীবন বদলানো ঘটনা এবং গর্ভবতী মায়েরা মার্কেটারদের স্বর্ণখনি। এটা প্রায় সব মার্কেটাররা জানে এবং তাদের টার্গেট করে। নতুন মা দের আকৃষ্ট করার জন্য অনেক রিটেল কোম্পানি বিভিন্ন রকম ধরনের কর্মসুচী হাতে নেয় যেমন হাসপাতালগুলোর ম্যাটার্নিটি ওয়ার্ডে তাদের গিফট ব্যাগ এবং ভবিষ্যত বিক্রির কুপন পাঠায়ে দেন। কিন্তু টার্গেটের জন্য এটা অনেক দেরী হয়ে যায়, কারন ততক্ষনে নতুন মায়েরা সম্ভাব্য সব কোম্পানির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন, প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়। তাই যথেষ্ট সময় আগেই তাদের লক্ষ্য করে কাজ শুরু করতে চায় টার্গেট, তারা চায় কোন নারী গ্রাহকের গর্ভাবস্থার ৫-৬ মাস থেকেই তাদের টার্গেট করতে। কিন্তু এতো আগে স্বেচ্ছায় হয়ত বড় একটা অংশ নিজে থেকে এই তথ্য দিবে না। তাই এন্ড্রো পোলের উপর এই দ্বায়িত্ব পড়ে ক্রয় প্যাটার্নের ডাটা বিশ্লেষন করে গ্রাহকদের গর্ভাবস্থার সঠিক ধারনা করা এবং তাদের লক্ষ্য করে মার্কেটিং ক্যাম্পেইন করা।
২০০৩ সালে আরিস্টা রেকর্ড (Arista Record) এর স্টিভ বার্টেল একটি নতুন গান Hey Ya! বাজারে আনেন। গানটি বাজারে ছাড়বার আগে তারা বিভিন্ন রেডিও ডিজে দের মতামত নেন। শুধু তাই নয় একটি কম্পিউটার প্রগ্রাম Hit Song Science ব্যাবহার করে গানটির জনপ্রিয় হবার সম্ভবনা যাচাই হয় সেখানেও সেটি উচ্চ নম্বর লাভ করে। কিন্তু বাজারে আসবার পর প্রচলিত পদ্ধতিতে ডাটা বিশ্লেষন করে দেখা গেল গানটি জনপ্রিয় হয়নি বরং গানটি রেডিওতে গাওয়া হলে স্টেশন বদলানোর পরিমান বলে দিচ্ছিল গানটি আসলে লোকজন অপছন্দ করছে। আরিস্টা রেকর্ড এই গানটির পিছনে বড় বিনিয়োগ করেছিল এবং তারা এটাকে জনপ্রিয় করতে ছিল বদ্ধপরিকর। বিভিন ব্যক্তি এবং গবেষনায় দেখা যায় মানুষের মস্তিষ্ক “পরিচিত” গান শুনতে চায়। যদিও একজন মানুষ মুখে বলে এটা আমি অনেকবার শুনেছি এবং বিরক্ত হয়ে গেছি কিন্তু সেই গানটা যখন রেডিওতে বাজে তার অবচেতন মন তাকে বলে এটাতো শোনা গান, এটা জানি, পছন্দ করি এবং আমি আরেকবার শুনতে পারি। একটা অভ্যাস চক্রের পুনরাবৃত্তি ঘটে, পরিচিত গান (ইংগিত/CUE), গানট শোনা (কাজ/routine) আর মনের পফুল্লতা (পুরস্কার/reward)। গানটি স্টিকি হয়।
আমাদের মস্তিষ্ক পরিচিত শব্দকে পছন্দ করে এটার স্নায়ুতান্ত্রিক ব্যাখাও দেয়া যায়। গান শোনার সময় মস্তিষ্কের অনেকগুলো অংশ চালু হয় যেমন অডিটরি করটেক্স, থ্যালামাস, সুপিরিওর পেরিইটাল করটেক্স। মস্তিষ্কের এই অংশ গুলো বিভিন্ন প্যাটার্ণ চিহ্নিত করতে এবং কোনটাকে আলাদা গুরুত্ব দিতে হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কাজ করে। অনেক শব্দ একসাথে শোননার সময় মস্তিষ্ক কোনটাকে গুরুত্ব দিবে এই সিদ্ধান্ত তাকে নিতে হয়, এই জন্য আমাদের মস্তিষ্ক বাচ্চার কন্ঠ, কোচের বাশির শব্দ কিম্বা রাস্তার গোলমাল সহজেই আলাদা করতে পারে। একটি গানেও অসংখ্য টোন, পিচ, অভারল্যাপিং মেলোডি কম্পিটিং শব্দ থাকে যেটা প্রত্যেকবার শোনার সময় বিশ্লেষন করতে হলে মস্তিষ্ককে বেশ কাজ করতে হয়। মস্তিষ্ক সেই কাজটা না করে অভ্যাস চক্র অনুসরন করে এবং পরিচিত শব্দ খুজে। এজন্যই পরিচিত গানগুলি স্টিকি হয়। এটা দিয়ে ব্যাখা করা হয় কেন Hey Ya! গানটি জনপ্রিয়তা পাচ্ছিল না, এটা সমসাময়িক জনপ্রিয় গানগুলির চেয়ে সম্পুর্ন আলাদা ছিল। পরে রেডিও স্টেশনগুলি এটিকে দুটি জনপ্রিয় গানের মাঝে স্যান্ডুইচ করে বাজানো শুরু করে। একসময় এটা গ্রাহকদের মস্তিষ্কে পরিচিত গানের স্থান দখল করে এবং অবশেষে জনপ্রিয় হয়। এটি গ্র্যামি পুরস্কার জিতে, সাড়ে পাচ মিলিওন এলবাম বিক্রি হয় এবং রেডিও স্টেশনগুলি মিলিওন ডলারের ব্যাবসা করে।
১৯৪০ দশকের গোড়ার দিকে আমেরিকা তার দেশে উতপাদিত মাংসের বেশিরভাগ ইউরোপে পাঠানো শুরু করে সেখানে যুদ্ধরত সৈনিকদের খাবার ঠিক রাখবার জন্য। দেশে মাংসের অভাব দেখা যায়। তারা আশংকা করলেন এটা চলতে থাকলে দেশে থাকা জনগন আমিষের অভাবে ভুগবে। সরকার তখন সমাজবিজ্ঞানী, নৃবিজ্ঞানি এবং মনোবিজ্ঞানীদের নিয়ে একটা দল তৈরি করলেন যাদের কাজ হলো আমেরিকানদের অর্গান মিট (কলিজা, কিডনি, ভুড়ি ইত্যাদি) খাবার অভ্যাস যেন জনগন গড়ে তুলে সে ব্যাবস্থা করা। তারা এটা নিয়ে বভিন্ন গবেষনা করে সিদ্ধান্তে পৌছান যে খাবার অভ্যাস পরিবর্তন করতে হলে নতুন খাবারটিকে যতদুর সম্ভব প্রচলিত খাবারের আদলে ছদ্মাবরন (কেমোফ্লেজ ) করে সরবরাহ করতে হবে। এটা সফল করতে হলে গৃহিনীদের জানতে হবে এসব অর্গান মিট কভাব রান্না করলে এটা দেখতে, স্বাদে এবং গন্ধে সাধারন মাংসের মত হব, যাতে খাবার টেবিলে তারা তাদের পরিচিত খাবারের অনুভুতি পায়। সরকারের কাছ থেকে গৃহিনীরা চিঠি পেতে লাগলো যেখানে বলা হলো স্বামীরা সাধারন স্টেক এর মতই কিডনির মাংস পছন্দ করে। কসাইরা মেনু দিতে শুরু করল যেখানে বলা হয়েছে কিভাবে কলিজা রান্না করলে সাধারন মাংসের মত মনে হবে। দ্বীতিয় বিশ্বযুদ্ধের কয়ক বছর দেখা যায় অর্গান মিট আমেরিকারনদের প্রিয় খাবারে পরিনত হয়। এরপরেও সরকার বিভিন্ন ডায়েট বদলের পরিকল্পনা করে কিন্ত কোথাও নতুন খাবারকে পুরাতন পরিচিত খাবারের আদলে কেমোফ্লেজ করা হয়নি, সেগুলি বাস্তবে পরিবর্তিত করাও সম্ভব হয়নি।
যখন আপনি নতুন কিছু বিক্রি করতে চান, হোক সেটা নতুন গান, খাদ্য অথবা বাচ্চার খেলনা, একই শিক্ষা/নিয়ম। নতুন কিছুকে পুরাতন অভ্যাসের মোড়কে ধরায়ে দিন, মানুষ এটা সহজে গ্রহন করবে। এই শিক্ষা শুধু বড় কোম্পনির ক্ষেত্রে নয়, এটা দিয়ে একজন তার ব্যক্তিগত জীবনেও পরিবর্তনে সাহায্য করতে পারে।
আমেরিকার একটি বড় নন-প্রফিট প্রতিষ্ঠান YMCA, যাদের আমেরিকা জূড়ে ২৬০০ ব্যায়ামাগার এবং কম্যুনিটি সেন্টার ছিল। তারা ২০০০ সালে দুইজন পরিসংখ্যানবিদ নিয়োগ দেন স্ট্রাটেজি ঠিক করার জন্য যাতে তাদের সদস্যদের ধরে রাখতে পারে। তারা দেড় লক্ষাধিক সদস্যদের মধ্যে জরীপ করে সিদ্ধান্তে আসেন অত্যাধুনিক ব্যায়ামের মেশিন কিম্বা আধুনিক আভ্যন্তরীন সাজসয্যা মানুষকে ধরে রাখতে পারেনা। বরং গ্রাহকদের ধরে রাখার ক্ষেত্রে মানুষের সামাজিক অভ্যাস ভুমিকা রাখে। যখন তারা দেখে জিমে কেউ একজন তার নাম মনে রেখেছে, তারা ভালো অনুভব করে, আবার যাওয়ার প্রেরণা পায়। যদিও তারা জিমে যায় ব্যায়াম করার জন্য কিন্তু তাদের কছে সেখানে একজন মানুষের সাথে সংযোগ ট্রেডমিলের সাথে সংযোগের চেয়ে বেশী মুল্যবান। একই কারনে যারা একটা গ্রুপ তৈরি করে ব্যায়াম করে তাদের এই অভ্যাসে টিকে থাকা সহজ হয়।
একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, কোম্পানিগুলো ডাটা বিশ্লেষন করে একজনের অভ্যাস সমন্ধে সেই ব্যক্তির চেয়েও বেশী জানবে তার অভ্যাস সমন্ধে। ডাটা থেকে আপনি একজনের পছন্দ সমন্ধে জানবেন কিন্তু নতুন অভ্যাস মার্কেটিং করতে হলে আপনাকে জানতে হবে কিভাবে এটাকে তার পরিচিত অভ্যাসের আদলে উপস্থাপন করা যায়। লেখক বলেন আমি এন্ড্রো পোলের সাথে শেষ সাক্ষাতকারের সময় তাকে বললাম আমার স্ত্রী গর্ভবতী এবং আমি টার্গেট থেকে কিছু কুপন আশা করছি যাতে বেবির জন্য কিছু জিনিস আমরা কিনতে পারি। পোল হেসে বলে, অপেক্ষা করেন, আপনার কি প্রয়োজন তা আপনি নিজে উপলব্ধি করার আগেই আমরা আপনাকে কুপন পাঠায়ে দিব।
এর পরের অধ্যায়ে আমরা দেখব কিভাবে সামাজিক অভ্যাস কাজ করে।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:০২