somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এখানে আপনার আমার দায় কতটুকু?

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিরোনামটা শিরোনামহীন হতে পারতো। বা একজন ক্রিম আপা ও আমরা। অথবা অন্য অনেক কিছুই হতে পারতো। সে যাক গে, মূল কথায় আসি। এই বিষয়ে কয়েকটা লাইন না লিখলে নিজেকে নিজের কাছে অপরাধী মনে হচ্ছে।এক মহিলার ভিডিও গত কয়েক মাস আগে না জেনো গত বছরে বিভিন্ন গ্রুপে দেয়া হয় ফান পোস্ট হিসেবে। সে দুই আঙুল দিয়ে ক্রিম মুখে ঘষতে ঘষতে বলতো কিরিমটা এইভাবে লাগাবেন। ভালোই বুঝতে পারছিলাম ইচ্ছে করে মহিলাকে ভাইরাল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাতে পরে তার মাধ্যমে টু পয়সা রোজগার করা যায়। হয়েছে ও তাই। এখন ঐ মহিলা ভাইরাল। ফেইসবুক খুললেই এই মহিলার ভিডিও। অন লাইন বিক্রেতা থেকে শুরু করে নায়িকা পর্যন্ত তার ভয়েস রেকর্ডের উপরে টিক টক ভিডিও আপলোড দিচ্ছে। কোন ভিডিওতে সে গালি দিচ্ছে। কোন ভিডিওতে সে ইংরেজির ভুল উচ্চারণ করছে। তার মুখ থেকে কিছু একটা বের হতে দেরি। ব্যাস সবাই ঝা্ঁপিয়ে পড়বে কে কার আগে তার কথাগুলি দিয়ে টিক টক ভিডিও বানাবে। নায়িকা, ডাক্তার সহ অনেকেই দেখলাম বাদ গেলেন না। আমার চোখে যতবারই এই ধরনের ভিডিও আসে ততবারই আমি রিপোর্ট দিয়ে দিই।
এর বাইরে কিছু করতে পারিনা।

করোনার সময়ে অন লাইন কেনা কাটা অনেক জনপ্রিয় হয়েছে নিসন্দেহে। আমরা নিজরাও বিভিন্ন পেইজ থেকে কেনাকাটা করি।তাদের সার্ভিস ভালো এবং পণ্যও ভালো দিচ্ছে বলেই কিনি। আমি যাদের থেকে কেনাকাটা করছি তাদের কেউই এই ধরনের টিক টক ভিডিও করেন না। ভদ্রভাবে আসেন নিজের পণ্য দেখান।
কিন্তু অন্য যারা নাচতে নাচতে পণ্য দেখান, ক্রিম আপার কথার রেকর্ডে টিকটক ভিডিও বানিয়ে রাতে দিনে ভিউ বাড়িয়ে বিক্রি বাড়ান। তাদের আমার দুইটা কথা শুনাতে খুব ইচ্ছে করে।
এখন আবার যার যত ফলোয়ার তার তত চাহিদা। সে অভিনেতা, গায়ক, লেখক যে ই হোক।
এই গেলো একটা। আরেকটা হলো সারাদিন বিভিন্ন পেইজের নিউজ আসে খুবই অশ্লীল ভাষায়।অমুক নায়িকার ছবি ভাইরাল।নেটিজনদের ঘুম হারাম। তমুক নায়িকার (শব্দগুলি ব্যবহার করতে চাচ্ছি না)। আমি ভাবতাম এইসব ছাগু পাগু নিউজ কে দেখে! কয়েক মাস আগে জানতে পারলাম মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
এখনের প্রজন্মের কয়েকটা ছেলেমেয়ে একসাথে এক রুমে বসলে গল্প করে না। একসাথে বসে মোবাইল টিপে।
যতবার নিজের ছয় মাসের ছেলেটার দিকে তাকাই ততবার আতশবাজির শব্দের কারণে মারা যাওয়া ছোট্ট ছেলটার চেহারা চোখে ভাসে।
দিনের মধ্যে কত শতবার আবরার ছেলেটার চেহারা চোখে ভাসে। একজন মেধাবী শিক্ষার্থির প্রাণ গেলো অন্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে।
রানু নামের মহিলাটাকে যে গণপিটুনিতে মারা হলো? এখানে কার হাত ছিলো? আমাদের কি কিছুই করার ছিলো না।
এই যে মরার সময়ও একটু লাইভে আসতে হয়, খুন করার সময়ও লাইভে এসে খুন করতে হয়। কারো কোন উপকার করতে গেলে ছবি তুলে করতে হয়।
ঐদিন দেখলাম লাইক ভিউ বাড়ানোর জন্যে কোন দেশে যেনো এক দম্পতি বাচ্চা দত্তক নিয়েছে। লাইক ভিউ বাড়ার পর আবার বাচ্চা আরেকজনকে দিয়ে দিয়েছে।
আরেকজন লাইক ভিউ বাড়াতে গিয়ে দূর্ঘটনা জনকভাবে স্বামীকে হারিয়েছে।
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর মাগো ওরা বলে যতবার আবৃত্তি করি আপনা আপনি চোখ ভিজে যায়। অথচ সেই কবিতা এক মেয়ে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সেক্সি ভাবে বলার চেষ্টা করেছে। তাও বলতে পারেনি। কবিতার লাইন মনে থাকে না। সেই মেয়ের নাকি এখন কত শত ফলোয়ার।
সড়ক দূর্ঘটনায় কেউ আধমরা হয়ে পরে থাকলে তাকে ধরার কেউ থাকেনা। বেচারা ছটফট করতে করতে মারা যায়। আশেপাশের মানুষ তখন লাইভ করতে ব্যস্ত।
লঞ্চ দূর্ঘটনা কত দ্রুত ভুলতে পেরেছেন?
কয়দিন পরপর জাপানের উদাহরণ আসে। পড়তে ভালো লাগে। নিসন্দেহে জাপানের মানুষ অসাধারণ এক জাতি। তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সবই অসাধারণ!
কিন্তু আপনি কি জানেন আপনি যে দেশটাতে জন্মেছেন সে দেশটা কত অসাধারণ। এদেশের সংস্কৃতি, এদেশের মানুষজন। নয় মাসে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনা একটা দেশ।ভাষার জন্যে প্রাণ দেয়া জাতি পৃথিবীর কোথায় খুঁজে পাবেন?
একজন মাওলানা ভাসানী, একজন বজ্র কন্ঠের ধ্বনি র শেখ মুজিব,এমন নেতা জন্মেছে যে দেশে সে দেশে আপনার জন্ম। গর্ব হয়না বলেন? একইসাথে লজ্জা ও হয় না বলেন? লজ্জা হয় না চারপাশে এত এত হিপোক্রেসি দেখে? সমাজের এত এত অধো পতন দেখে? এখানে কি আপনার আমার কিচ্ছুটি করার নেই? আমরা কি অন্তত আমাদের আশেপাশের মানুষগলিকেও পল্টাতে পারিনা?
একজন হুমায়ুন ফরিদী কে, একজন আলী যাকেরকে, একজন রাইসুল ইসলাম আসাদকে কতটুকু সম্মান দিতে পেরেছি?
ভারত নাকি একসময় ভয় পেতো আমাদের নাটক না তাদের মার্কেট দখল করে ফেলে। আর এখন সেই ভারতের চ্যানেলের মানহীন নাটকগুলি ঘরে ঘরে। অবস্থা এখন এমন ভারতীয় চ্যানেল না চললে ঘরে চুলাও জ্বলবে না। আর আমাদের নাটকের মান তো নামতে নামতে
কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে বলার অপেক্ষা রাখে না। এই নিয়ে কি আপনার আমার করার কিছু আছে? একবার ভাববেন?
আমাদের স্কুলটা খোলার পরে প্রথমবার যখন একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন করতে গেলাম ভাবলাম একটা উদ্যোগ নিই আমদের শিক্ষার্থীরা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাথে মিলে এই দিনটা উদাযাপন করুক। তারাও জানুক ফেব্রুয়ারীর একুশ তারিখ আমাদের কাছে কেন একটা বিশেষ দিন। তারা ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানুক। তারাও ভাষা নিয়ে অহংকার করুক। কিন্তু বাস্তবে দেখলাম ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়! কিছুক্ষণ পরপর নিজেদের মধ্যে মারামারি, অকথ্য ভাষায় গালাগালি। গায়ের থেকে কি দুর্গন্ধ! একটু পর পর ঐ একটা কথা ম্যাডাম কিছু নাস্তা দিবেন বলছিলেন কখন দিবেন। খুব লজ্জা পেয়েছিলাম। দেশটা পৃথিবীটা যাদের সাথে ভাগাভাগি করে থাকি তাদের নূন্যতম মানবিক চাহিদাটাও পূরণ হয় না। সেটা আমাদের খবর ও হয় না। আমাদের এত চাহিদা পূরণ হয় তবু আমাদের চাহিদা মিটে না। এত খাই তারপরও
খাই খাই স্বভাব যায় না। আশেপাশের মানুষ খাচ্ছে নাকি তাদের গায়ে দেয়ার কাপড়টা আছে নাকি, গা ধোঁয়ার সাবানটা অন্তত আছে নাকি তাও আমরা জানি না। এই শিশুগুলি একদিন বড় হয়ে ( আমাদের প্রতি খুব স্বাভাবিক ভাবেই অনেক অনেক ঘৃণা নিয়ে) আমাদের পেটে ছুড়ি মারলে বা এর চেয়ে ভয়াবহ কিছু করলে সেই কাজের পিছে কি আমাদের কোন দায় থাকবেনা?
আবরারের হত্যাকারী সহপাঠীদের অভিভাকরা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যদি তাদের দায়িত্বটুকু যথাযথভাবে পালন করতেন
তাদেরকে মনুষ্যত্বের দীক্ষা দিতেন বিশ্ব বিদ্যায়কে যদি রাজনীতি থেকে দূরে রাখা যেতো তাহলে হয়তো আমারা আবরারকে হারাতাম না
আপনার বিভিন্ন কর্মকান্ডের দরূণ আপনি আপনার শেষ বয়সে নিজেকে আবিস্কার করলেন নিঃসঙ্গ, একা। আপনার আশেপাশে কেউ নেই। আপনার মনে ভয় ঢুকে গেলো আপনি মরে পঁচে গেলও কউ জানতে পারবে না তাই বুদ্ধি করে লাইভে এসে আত্মহত্যা করলেন। আপনার মত আধ পাগল আরও কয়েকটাকে ভুল রাস্তা দেখিয়ে দিয়ে গেলেন। ভাইরাল প্রেমি জাতিকে ভাইরাল হওয়ার আরেকটা টপিক ধরিয়ে দিয়ে গেলেন। আত্মহত্যার আগে কি অন্য পথ গুলি একবার পরখ করে দেখেছিলেন? আর কিছু না পারেন এলাকার মসজিদটা একবার ঝাড়ু দিয়ে দেখতেন যে হেন কাজ করেছেন তার চেয়ে অনেক ভালো কাজ হতো মনেও শান্তি পেতেন, মরলেও দেখার মানুষের অভাব হতো না। কুরআন, বাইবেল, ত্রিপিটক কিছু কি একবার পড়ে দেখার সময় বের করেছিলেন? কোন এতিমের মাথায় হাত বুলিয়ে বা কোন বাউলের আস্তানায় গিয়ে একবার শেষ চেষ্টা করেছেন? পৃথিবীর থেকে৷ এত কিছু নিয়েছেন যাবার আগে তার ঋণ শোধ করতে নামলেও ঐ লাইভ আত্মহত্যার চেয়ে ভালো কিছু একটা করা যেতো বলে আমার বিশ্বাস।
লেখা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। লেখায় কোন ছব্দ খুঁজেতে যাবেন না। হতাশ হবেন। আমিও হতাশার থেকে বাঁচতে লেখাটা লিখলাম।
লেখা কোত্থেকে কোথায় গেছে জানি না। ভালো থাকবেন। আপনার আশেপাশের মানুষদেরও ভালো রাখবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ১২:২১
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×