somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফাঁকি

২৭ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কি ফাঁকি দেয় সে আমারে! শুধু আমাকে কেন? নিজেকেও। ধারাবাহিকভাবে ফাঁকি সে দিতে পারেনা। ফাঁকে ফাঁকে ফাঁকি। এই ফাঁকিতে পড়েই আমার মেজাজ যায় খিঁচড়ে। মেজাজ তো আর খাঁচার পাখি নয় যে যখন তখন বশে থাকবে। তাই তো মনের সাথে মেজাজও যায় বিগড়ে। তখন ভাঙ্গিঁ। এটা সেটা অনেক কিছু। সাথে নিজেকেও। ভাঙ্গাঁর সময় আগুন থাকে। ভাঙ্গাঁর পর সেই আগুনে জল পড়ে। জলে ভেজা ছাই হয় মেজাজ। তখন মনকষ্ট সিক্ত হয় ভাঁঙ্গার অনুতাপে। কিন্ত তখন বড্ড দেরী হয়ে যায়। করার কিছুই থাকেনা। ফাঁকি ফাঁকিতে ভরা চারিদিক চারিপাশটা। ফাঁকিবিহীন এই সমাজ সংসার অচল। ফাঁকিকে মেনে না নিতে শিখলে সমস্ত মনটাই ফাঁকা হয়ে যাবে। তাই ফাঁকির সাথে চলার অনুশীলনে আমি কিছুটা ব্যাতিব্যস্ত। তবে বড্ড কষ্ট, হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগে। কিন্ত এই জগত সংসারে মেলাতে হলে ফাঁকির সাথে নিজেকেও মেলাতে হবে। ফাঁকি দিতে হবে। ফাঁকি নিতে হবে। এর ফলে ফাঁকি ফাঁকিতে বোঝা পড়াটা সুন্দর হবে। নতুবা সংঘর্ষ অনিবার্য। ফলশ্রুতিতে পতন। হৃদয়ে সম্পর্কে ইত্যাদি ইত্যাদিতে ভালবাসুন, ফাঁক রেখে- কষ্ট কম পাবেন। তবে ফাঁকি দেবার কৌশলটা জানতে হবে যাতে করে ফাঁকিটা ধরা না পড়ে। না হলে যে ফাঁকি মেরে সুখ নেই।

আসলে ফাঁকি একটি শিল্প। এই শিল্পকে রাঙ্গিঁয়ে রসিয়ে সাজাতে হয়। কখনো রং তুলিতে। কখনো কখনো কথা মালার বৃষ্টিতে। কখনো কাঁদনে, আবার কখনো হাসিতে। সুনিপুণ শিল্পীর পক্ষেই সম্ভব সুনিপুণ ফাঁকি তৈরী। জীবনটাই কি একটা বিস্ময়কর সুন্দরতম অনন্যময় ফাঁকি নয়? মৃত্যুর ফাঁকে পড়ে মুহুর্তেই পুরো ফাঁকি হয়ে যায়। যে জীবনে স্পন্দন ছিল, গতি ছিল মৃত্যুর করাল থাবায় তা শুধুই ফাঁকিতে পরিনত হয়। মৃত্যুই সত্য আর সবই ফাঁকা। ফাঁকিতে ফাঁকিতে ভুবন ভরাট। একজন শিল্পীকে ফাঁকি বিশেষজ্ঞ হতে হবে।ফাঁককে ভরাট করতে না পারলে ফাঁকি দেয়া যায়না। এজন্যে যথোপযুক্ত মাল মশলাও দরকার। মঞ্চ অভিনয়ে প্রচুর ফাঁক ফোঁকড়কে একজন দক্ষ অভিনয় শিল্পী ফাঁকির মাধ্যমে দর্শক শ্রোতার দৃষ্টি আড়াল শ্রুতি আড়াল করে। যে কোন মঞ্চ শিল্পীকে দক্ষ ফাঁকি শিল্পীও হতে হবে এবং এর জন্যে যথেষ্ট উপস্হিত বুদ্ধি থাকতে হবে।ফাঁকির মাধ্যমে ফাঁককে ফাঁকা হতে না দেয়া। ফাঁকির দুনিয়ায় ফাঁকির মাধ্যমেই ফাঁকিকে করায়ত্ত- এই আর কি! তবে যথেচ্ছা ফাঁকির ব্যবহার আত্মারই অবমাননা,যা আমরা প্রতিনিয়ত দেখি এবং করি। দৃষ্টির সীমানায় কিংবা অনুভব করি দৃষ্টির অগোচরে। দেশ আমাদের গড়ে পিঠে তোলে এই আশায় আমরা আমাদের সম্ভাবনার ফল দেশকে দেব কিন্ত সেই আশায় গুড়ে বালি দিয়ে আমরা দেশকে ফাঁকি দেই। আমরা আমাদের মেধাকে দেশে ব্যবহার না করে অন্য দেশে ব্যবহার করি নিজেরা প্রাচুর্যে ভরপুর হওয়ার জন্যে। দেশকে প্রাচুর্যে ভরপুর করার জন্যে নয়। এ জন্যেই দেখা যায় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের দেশের মেধা সম্পন্ন ছেলে মেয়েরা দেশের টাকায় বিদেশে পড়ে উচ্চ ডিগ্রী লাভ করে দেশে ফিরে যায় না। তারা বসত গড়ে অন্য ঠিকানায়।আবার অনেকেই দেশে থেকেও শুধুমাত্র নিজেকেই দেয়, দেশকে দেয়না।যারা দিতে চায়, বিভিন্ন ফাঁককে পূরণ করতে চায় তাদের সংখ্যা খুবই কম এবং তারা বড়ই নিস্প্রভ ফাঁকিবাজদের উজ্জ্বল আলোকে। তাই তো স্বাধীনতার আট ত্রিশ বছর পূর্তিতেও দেশের ঔজ্জ্বল্য তেমন চোখে পড়ে না। চারিদিকে নেই নেই আর ফাঁকে ফাঁকে ভরা। এই ফাঁকে পড়েই সাধারন জন জীবন অতিষ্ট। তাদের নাভিশ্বাস উঠছে। তারা একটি দক্ষিণমুখী জানালা খুঁজছে প্রাণ ভরে সুমিষ্ট সুশীতল বাতাস নেবার জন্যে। বাংলার মাটিতে আমরা এবড়ো থেবড়ো ফাঁক চাই না। দক্ষিণমুখী জানালা তূল্য ফাঁক চাই।

আমি ও ইদানিং ফাকিঁ বিশেষজ্ঞর খাতায় নাম লিখিয়েছি এবং ক্রমে ক্রমে ফাকিঁবাজ হয়ে উঠছি। নতুবা ঘোড় দৌঁড় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছি। সাংসারিক কাজকর্মে ফাকিঁ মারা আমার দৈনন্দিন অভ্যেস হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কিছু কিছু ফাকিঁ দিয়ে মনটা বিষন্ন হয়। এই যেমন গেল শনিবার আমি ও আমার ফাঁকি বিশেষজ্ঞ বন্ধু মেট্রোতে চড়ার জন্যে পার্ক মেট্রো ষ্টেশনে গিয়েছি। উদ্দেশ্য এলোপাতাড়ি ঘুরে বেড়ানো। আমরা যে মুহুর্তে ষ্টেশনে পৌঁছালাম সেই মুহুর্তেই একটি মেট্রো আমাদের চোখের সামনে দিয়ে চলে গেল। অল্পের জন্যে ছোঁয়া গেল না । মেট্রোয় উঠতে না পেরে যে মুহুর্তে যাত্রীদের জন্যে রক্ষিত চেয়ারটিতে বসতে গেলাম সেই মুহুর্তে চোখে পড়লো চেয়ারটির এক কোণে একটি প্লাষ্টিক ব্যাগ মালিকবিহীন পড়ে আছে। কোন যাত্রী তাড়াহুড়োতে ফেলে গেছে। ব্যাগটিকে ফাঁক করে একটু চোখ বুলালাম। সদ্য কেনা টির্শাট অথবা স্ল্যাকস হবে বলে মনে হলো। বন্ধুটিকে বললাম-“ চলো উপরে গিয়ে মেট্রোম্যানের কাছে এগুলো দিয়ে আসি। যে এগুলো হারিয়েছে সে হয়তো ফিরে এসে তার কাছে খোঁজ করতে পারে। বন্ধুটি আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে অনড় হয়ে বসে রইল। বার বার বলা সত্বেও যখন সে আমার কথায় কান দিলো না তখন আমিও নিশ্চল হয়ে বসে রইলাম।
ওর উপর নির্ভরশীল হয়ে আমার দায়িত্বকে ফাঁকি দিলাম।ইতি মধ্যে দুটো কালো মেয়ে এসে আমাদের পাশে বসলো । ব্যাগটির দূরত্ব ও আমাদের বসার দূরত্ব দেখে তাদের মনে ব্যাগটির মালিকানায় সন্দেহ দেখা দিল এবং ব্যাগটি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগল কিন্ত তা কেমন যেন গতি পাচ্ছিল না যেহেতু আমরা পাশে বসে আছি। এক সময় মোটামত মেয়েটি আমাকে জিজ্ঞেস করলো-ব্যাগটি আমার কিনা। আমি না সূচক মাথা নাড়তেই তার ব্যাগটির উপর হাত সঞ্চালন বেড়ে গেল এবং কালো মুখে সাদা দাঁতগুলো ঝিলিক দিলো। আমি অবাক বিস্ময়ে দেখলাম-মেট্রো আসতেই মেয়েটি তার দেহটি হেলিয়ে দুলিয়ে ব্যাগটি হাতে নিয়ে অন্য কম্পার্টমেন্টে উঠলো। আর আমার মন দায়িত্বহীনতার অপরাধে ভার হয়ে রইল।

আরেকটি বিষয়েও ফাঁকিবাজ হয়ে উঠছি। চিঠি না লেখাতে । অনেকটা বছর আমার চিঠি লেখা হয় না। চিঠি লেখা ও পাওয়া আমার অসম্ভব প্রিয় অভিব্যাক্ত ছিল। এই প্রিয় বিষয়টি এথন অনেক দূরে চলে গেছে। মা প্রিয় মুখদের বহুদিন লেখা হয়না । চিঠি লিখতে বসলে চারিদিকের দৈন্যতা এসে কাগজে ঘোরাফেরা করে। ইচ্ছে জাগে না প্রিয় মুখগুলোনকে নিজের দৈন্যতা তুলে ধরে ওদের মনকে বিষন্ন করে দেই।তাই এক রকম ফাঁকি দিয়ে নিজের অবস্হানকে ওদের কাছ থেকে আলাদা করি।

যাকগে এবার বলি স্বাধীনতার কথা। যে স্বাধীনতা অর্থাৎ যে সার্বিক স্বাধীনতার স্বপ্ন ছিল, তা প্রাপ্তির মাঝেও ফাঁক রয়ে গেছে। স্বপ্ন ও প্রাপ্তির মাঝে যোজন যোজন ব্যবধান। অর্থনৈতিক মুক্তি, সুষম বন্টনেও ফাঁকি।

এমন কি এই লেখালেখিতেও ফাঁকি। কারন গদ্য লেখায় যে ধৈর্য্য, জ্ঞান, সময় ও নিবিষ্টতা লাগে তার হয়তো অনেকাংশ আমাদের নেই। একই বৃত্তে ঘুরে ফিরে আমরা সবাই। আমরা সবাই অল্প শ্রমে বিরাট লাভ খুঁজি এবং এই জন্যেই আমরা শুভংকরের ফাঁকিতে পড়ি।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×