বর্তমান প্রজন্ম ঠিক কোথায় যাচ্ছে এটা নিয়ে আমি ভীষণ চিন্তিত, এটা এখন শুধুই চিন্তার বিষয় নয় সমাধানের বিষয় হয়েও দাঁড়িয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে বিকৃত মনোভাব আর মস্তিষ্ক নিয়ে বেড়ে উঠবে আমাদের প্রজন্ম, ফলশ্রুতিতে নৈতিক অবক্ষয় আর অপরাধে ছেয়ে যাবে পুরো জাতি। আমি আমার প্রত্যক্ষ করা ও মিডিয়া-পত্রিকায় প্রকাশ করা কিছু ঘটনা শেয়ার করছি ব্লগে।
ঘটনাঃ
১. কয়েকদিন আগে দেখলাম ফেসবুকে একটা ভিডিও সেই লেভেলের ভাইরাল হয়েছে, ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একজন মেয়ে তার অন্তর্বাসের ফিতা কেটে এনে বয়ফ্রেন্ডের হাতে পরিয়ে দিচ্ছে, শুধু সেই মেয়েই নয় আরও অনেক মেয়েই এই কাজ করছে তাও সেটা কোনো এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিতরে। এটাই নাকি ট্রেন্ড চলছে, এই কাজ না করলে নাকি প্রেমিক সমাজে মুখ দেখানো যাচ্ছেনা।
২. একবার আমার এক মেয়ে কাজিন আমাকে বলছিলো; ওরা বান্ধবীরা নাকি একজন আরেকজন কে জিজ্ঞেস করে, দোস্ত কয়টা পোলা খাইলি? একটা সময় ছেলেরা এই বিকৃত কাজে প্রতিযোগিতা করতো, এখন মেয়েরাও এতে পিছিয়ে নেই। রাস্তায় কয়েকজন মেয়ে একসাথে থাকলে ছেলেদের দেখলে ব্যাড কল দেয় ইভেন মাল ও বলে! এটাই এখন ট্রেন্ড।
৩। আমার ভাতিজা ক্লাস থ্রীতে পড়ে, একদিন সন্ধ্যাবেলা ওর মা ওকে পড়াতে বসিয়েছে, কোনো একটা কাজে আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। খেয়াল করলাম আমার ভাতিজা তার মিডল ফিঙ্গার দেখিয়ে তার মাকে জিজ্ঞেস করছে এটার মানে কী? ভাবী পুরাই থ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভাতিজাকে জিজ্ঞেস করলাম এটা কোথায় পেলে? সে বলে তার এক ফ্রেন্ড নাকি কাকে এটা দেখিয়ে ফাঁক বলছে! বুঝুন অবস্থা! ক্লাস থ্রীর একটা বাচ্চা সে মিডল ফিঙ্গার দেখিয়ে অন্যকে ফাঁক বলা শিখে গেছে। অথচ এই বয়েসে আমি আলাদা জেন্ডারই চিনতাম বলে মনে হয় না।
৪। গত পরশু একটা নিউজ দেখলাম, ষাটঊর্ধ্ব এক মহিলা মেয়ের জামাইয়ের জন্য গরুর মাংস নিয়ে মেয়ের বাড়ি গিয়েছেন, মেয়ের জামাইকে খাওয়াবেন বলে। রাতে সেই মেয়ের জামাই শ্বাশুড়িকে প্রেশারের ওষুধ বলে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে রাতভর ধর্ষণ করেছে! সেই মহিলা মিডিয়ার সামনে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, আমি নিজের ছেলেরে মতো যাকে মনে করতাম সেই আজ আমাকে এই কলঙ্ক দিলো।
৫। পাশাপাশি প্রতিবেশী দুই পরিবারে জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিলো, এর মধ্যে এক প্রতিবেশী পরিবার আরেক পরিবারকে বলেছিলো তোদের আমরা এমন কলঙ্ক দিবো যা সারা জীবনেও মুছবেনা। যেই কথা সেই কাজ, যে পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়েছিলো সেই পরিবারে একজন বিধবা বৃদ্ধা ছিলেন তার ছেলেদের সাথেই মূলত জমি নিয়ে বিরোধ হচ্ছিলো হুমকি দেওয়া প্রতিবেশী পরিবারের ছেলেদের। একদিন রাতে হুমকি দেওয়া পরিবারের ১৬-১৭ বছরের এক ছেলে এসে ভিকটিম পরিবারের বৃদ্ধার ঘরের জানালা ভেঙ্গে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে রক্তাক্ত করে, সেই বৃদ্ধা নাকি ছেলেটাকে বারবার বলছিলেন তুই আমার নাতীর বয়সী তুই এই কাজ করিস না আমার সাথে, আমি বৃদ্ধ মানুষ আমাকে ছেড়ে দে কিন্তু সেই নরপিশাচ সেই কথা না শুনে মুখ চেপে ধরে তাকে ধর্ষণ করে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে এমন নির্মম ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন সেই বৃদ্ধা।
৬। ক্লাস ফাইভের কয়েকজন ছেলে মিলে সিনেমার মতো কায়দায় একটি মেয়েকে ধরে ধর্ষণ করেছে। জানতে চাইলে বলা হয়েছে তারা মুভি দেখে এসব শিখেছে। এখন মুভি থেকে শুরু করে শিশুতোষ অনেক কার্টুন আছে যেখানে ভালোবাসা, চুম্মাচাটি দেখানো হয়।
৭। বাসায় আমার এক ভাতিজী খেলার ছলে গোসল করছে, যে গোসল করছে সে অন্য ভাতিজীকে বলছে লুকিয়ে লুকিয়ে তার গোসল দেখতে। বাসা থেকে বলা হল, এটা আবার কেমন খেলা? তার উত্তরে বললো তারা টিভিতে দেখেছে একজন বাথরুমে গোসল করছে অন্যজন লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে। তাই তারা এভাবে খেলছে।
৮। আমার ভাতিজার যখন টিচার আসে তখন আর পড়া রেডি করা ব্যাতীত বাকি সকল সময় মোবাইল না হয় টিভিতে মুখ গুজে থাকে, এই সময় দুনিয়া উলটে গেলেও তাকে সেখান থেকে ইচ্ছেমতো মাইর দেওয়া ব্যাতীত উঠানো যায় না। হয়ও তাই, প্রতিদিন মাইর পড়ে পিঠে। যখন নেট লাইন বা বিদ্যুৎ থাকেনা তখন কিন্তু সে আবার ঠিকি নানান রকমের ইনডোর খেয়ার ব্যস্ত থাকে।
৯। আমার ফুপু ভীষণ অসুস্থ, কোমড়ের ব্যথায় বিছানা থেকে মুভ করতে পারছেন না, সারা রাত না ঘুমিয়ে একাধারে বসে রাত কাটিয়েছেন, পাশে ফুপা বসে ছিলেন। ভোরবেলায় আমাকে ফোন করলেন বাসায় গিয়ে দেখি ফুপু কান্না করেই যাচ্ছেন, ঈদের রাত বলে ডাক্তারের ব্যবস্থাও করা যায়নি এতো রাতে। বাসায় গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম মিরাজ কোই? ফুপু বলে সারা রাত নেট ব্রাউজ করে এখন পড়ে পড়ে ঘুমচ্ছে, মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম এ কেমন ছেলে! মায়ের এমন অবস্থায় কারো ঘুম আসে? আমি দৌড়ে গিয়ে ডাক্তার নিয়ে এলাম। খবর পেয়ে বাসায় অনেকেই এসেছেন, ভালোই কথাবার্তা হচ্ছে, ডাক্তার ট্রিটমেন্ট করে চলে গেলেন। ফুপুর আদুরে ছেলে তখনও গুমচ্ছে!
১০। আমার আরেক কাজিন হোস্টেলে থেকে বড় হয়েছে, বাবার অঢেল টাকা। হোস্টেল থাকা অবস্থায় ইচ্ছেমতো টাকা উড়িয়েছে, এখনো উড়াচ্ছে। এই ছেলের বাবা-মা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রতি তার কোনো মায়া নেই। সে তার জগতে চলে, তার মতো করে। শুধুমাত্র টাকার প্রয়োজন হলে বাবা মায়ের সাথে কথা বলে টাকা নেয়, এর বাইরে আর কোনো কথা বলেনা। অথচ ওর মা-বাবা খুব করে ওর সান্নিধ্য চায় কিন্তু পায় না।
১১। আমার এক পরিচিত মহিলার ছেলে, বয়স খুব বেশী হলে ১৩-১৪ সেই ছেলে নাকি দিনরাত পর্ণ মুভিতে বুঁদ হয়ে থাকে। কিছুদিন আগে আমার এক কাজিনের মা আমাকে তার ছেলের সম্পর্কে বিচার দিলো, বললো তার ছেলেও নাকি খারপ ছবি দেখে, সে এটা আন্দাজ করতে পেরেছেন এবং বিছানায় বার কয়েক স্পার্ম ও পড়ে থাকতে দেখেছেন কন্ডম সহ। আমার এই কাজিনের বয়স ও খুব বেশি না, আমার চেয়ে ৯ বছরের ছোট হবে। এই হচ্ছে অবস্থা! তার বসয়ে আমি বন্ধুদের মুখে উল্টাপাল্টা কিছু শুনলেও মুখ ঘুরিয়ে রাখতাম
১২। তথাকথিত টিকটক সেলিব্রিটির সাথে টিকটক করতে গিয়ে মেয়ে টিকটকার গ্যাং রেপ হচ্ছে, সেই ভিডিও ধারণ করে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে ভারতের পতিতালয়ে।
১৩। যে ওয়েতে তাপ দিয়ে টিশার্টে স্টিকার বসানো হয়, সেই ওয়েতে ঠোঁটে রঙ মেখে ,কোনো এক বিশেষ কাগজে সেই রঙ মাখা ঠোঁটে ইচ্ছেমতো চুমিয়ে সেই ঠোঁটের ছাপ তাপ দিয়ে টিশার্টের বুকে লাগিয়ে বয়ফ্রেন্ডদের উপহার দেওয়া হচ্ছে। এটা না করলেও নাকি প্রিমিক সমজে আর সম্মান থাকছেনা প্রেমিকের।
এরকম আরও অনেক ঘটনা আছে যা লিখে শেষ করা যাবেনা। আমাদের সকল পরিবারের দায়িত্ব আধুনিকতার নামে আমাদের পরিবারের বাচ্চারা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে এবং কাদের সাথে মেলামেশা করছে খোঁজ রাখা। সময়ের স্রোতে গাঁ ভাসিয়ে স্বধীনতা দেবার নামে আমাদের বাচ্চাদের জীবন কে ধ্বংস করে দিচ্ছি কি না সে বিষয়েও আমাদের খেয়াল রাখা উচিৎ, পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তারা ঠিক কী করছে সে বিষয়েও নজর রাখা উচিৎ। যদি আমরা সবকিছু এভাবে লাগামহীন ভাবে ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে বসে থাকি তাহলে সত্যিই আমাদের খুব বাজে কিছুর অম্মুখীন হতে হবে এবং তা খুব শীঘ্রই।
ছবিঃ গুগল
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫১