somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাওন আহমাদ
স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়,তাকে সঙ্গে নিয়ে চলি।ভালো লাগে ভাবতে, আকাশ দেখে মেঘেদের সাথে গল্প পাততে, বৃষ্টি ছুঁয়ে হৃদয় ভেজাতে, কলমের খোঁচায় মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে প্রকাশ করতে...

বিচারের অপেক্ষায় কত আছিয়া, কত তনু?

১৬ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বর্তমান সময়ে চরম উদ্বেগের নাম ধর্ষণ। আজকাল খবরের কাগজ খুললে কিংবা বিভিন্ন সোশ্যাল সাইটে চোখ রাখলে, হরহামেশাই নিকৃষ্ট এই অপরাধের খবর চোখে পড়ে। প্রাপ্ত বয়স্ক থেকে শিশু-কিশোর কেউ-ই যেন বাদ পড়ছে না এই মরণ থাবা থেকে। এইতো দিন কয়েক আগে, পুরো দেশ আছিয়ার পাশবিক অত্যাচার ও নির্মম মৃত্যুর সাক্ষী হলো। তার এই ঘটনা গোটা দেশবাসীকে স্তব্ধ করে দিয়েছে, ভাসিয়েছে বেদনার অশ্রুতে।

দেশবাসীর মনে এখন একটাই প্রশ্ন, আছিয়া তো নির্মমতা সইতে না পেরে যাত্রা করল অনন্তকালের পথে কিন্তু যারা এই অপরাধের সাথে জড়িত তাদের কী যথাযথ শাস্তি হবে? আছিয়ার বাবা, মা কী পাবে সন্তান হত্যার বিচার? এরকম প্রশ্ন আসা অবান্তর কিছু নয়। দেশে এরকম বহু আলোচিত ধর্ষণের ঘটনা আছে, যুগ পেরিয়ে গেলেও সেগুলো বিচারের মুখ দেখেনি।

আছিয়া যখন হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে, পুরো দেশ যখন তার ফিরে আসার অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে তখনি ঘটে আরেক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। বরগুনায় এক কিশোরীকে অপহরণ ও ধর্ষণের বিচার চেয়ে মামলা করার ছয় দিনের মাথায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বাবা। তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে নিজ বাড়ির পেছনের ঝোপ থেকে। স্বজনদের দাবি, ধর্ষণ মামলার জের ধরে অভিযুক্তের পরিবার প্রতিশোধ নিতে তাকে হত্যা করেছে। এই হচ্ছে বর্তমান চিত্র। ধর্ষণের বিচার তো হচ্ছেই না বরং বিচার প্রার্থীকেই হটিয়ে দেওয়া হচ্ছে দুনিয়া থেকে। এখন দেশের কাছে সেই কিশোরীর প্রশ্ন, নিজের প্রতি অবিচারের বিচার চাইব নাকি বাবা হত্যার বিচার?


তনুর কথা নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে? তার ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে এক আলোচিত হৃদয়বিদারক ঘটনা। তনু ২০ মার্চ ২০১৬ বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন। সেদিন রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের একটি জঙ্গল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে তদন্তে দেখা যায়, তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। সেনানিবাসের মতো একটা জায়গা যেখানে কঠোর নিরাপত্তার বলয় ঘিরে রাখে, সেখানে একদল পশু তনুর শরীরটাকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেললো অথচ কেউ টেরও পেল না। কোটি বাঙালির প্রশ্ন, সত্যিই কী কেউ টের পেল না, নাকি ইচ্ছে করেই ধামাচাপা দেওয়া হলো? আজ এতগুলো বছর পরেও তার প্রতি নির্মমতার বিচার হয়নি। আর কোনোদিন হবে বলেও মনে হয় না।


কয়েক বছর আগে তনুর বাবা কেঁদে কেঁদে বলেছিলেন, ‘বেঁচে থাকতে মনে হয়, মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারব না। তনুর পরিবার দেশের কাছে বিচার না পেয়ে, আল্লাহ তাআলার কাছে বিচার দিয়ে রেখেছেন।
আমাদের দেশে এরকম অনেক নাম না জানা আছিয়া, তনু রয়েছে যারা বিচার পায়নি। এ দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে তারা আকাশের দিকে তাকিয়ে অভিশাপের পাহাড় গড়ে তুলছে। এভাবে যদি অপরাধীরা আইনের ফাঁক গলে মুক্তি পেয়ে যায় তাহলে কোনোদিন এই অপরাধ বন্ধ হবে না। এখনি যদি এই অপরাধের লাগাম টেনে না ধরা যায় তাহলে সামনে আরও খারাপ দিন অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।


সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে ধর্ষণ। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯ সালে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা দেশে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১,৪১৩ নারী ও শিশু, যেখানে ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৩২। বর্তমান সময়ে এই সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে তা আমরা খুব সহজেই অনুমান করতে পারছি। ধর্ষণ এমন একটি ভয়াবহ ও অমানবিক অপরাধ, যা শুধু একজন ভুক্তভোগী নারী, শিশু বা পুরুষের জীবনকেই ধ্বংস করে না, বরং পুরো সমাজে এক ধরনের ভয় ও অনিরাপত্তার সৃষ্টি করে। এটি ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে এবং অনেক ক্ষেত্রে আত্মহত্যার মতো চরম পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়।


ধর্ষণ শুধু একটি অপরাধ নয়, এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এটি প্রমাণ করে সমাজে নৈতিক অবক্ষয় কতটা গভীর হয়েছে। ধর্ষণের জন্য কেবল অপরাধীই দায়ী নয়, সেই সমাজও দায়ী, যেখানে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয় না, যেখানে ভুক্তভোগীকেই দোষারোপ করা হয়, এবং যেখানে নারীর প্রতি সম্মান ও সুরক্ষা যথাযথভাবে নিশ্চিত করা হয় না।

ধর্ষণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে শুধুমাত্র কঠোর শাস্তির বিধান করাই যথেষ্ট নয়, বরং সমাজে নৈতিকতা, পারিবারিক শিক্ষার গুরুত্ব, ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধের প্রচার, এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করাও জরুরি। ইসলামে ধর্ষকের যে শান্তির বিধান রয়েছে, সেভাবে বিচারকার্য পরিচালনা ও বাস্তবায়ন করলে, উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে ধর্ষণ। আসুন আমরা সবাই এই জঘন্য পাপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই, বিচারের ফাঁক-ফোকর বন্ধ করে, যথাযথ বিচার নিশ্চিত করে দেশে এই পাপের কবর রচনা করি।

ছবিঃ গুগল
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:২০
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×