somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাওন আহমাদ
স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়,তাকে সঙ্গে নিয়ে চলি।ভালো লাগে ভাবতে, আকাশ দেখে মেঘেদের সাথে গল্প পাততে, বৃষ্টি ছুঁয়ে হৃদয় ভেজাতে, কলমের খোঁচায় মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে প্রকাশ করতে...

কোনো কিছুই শক্ত করে ধরে রাখতে পারিনি

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি জীবনে কখনোই কোনো কিছুকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারিনি। না প্রিয় মানুষ, না প্রিয় কাজ, না কোনো স্বপ্ন। কখনো তারা নিজেরা সরে গেছে দূর দিগন্তে, নয়তো আমি নিজেই তাদের বাঁধন আলগা করে চলে এসেছি। কেন এমনটা হয়েছে, কেন এই স্ব-নির্বাসন—তার কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। হয়তো কখনো আমি খুঁজতেও যাইনি সেসব কারণ।


একটা সময় ছিল, যখন এফএম রেডিওর সুর মূর্ছনায় ডুবে থাকত শহর। সারারাত মানুষ জেগে থাকত প্রিয় কথাবন্ধুর কণ্ঠ শুনতে। আমিও শুনতাম; শুনতে শুনতে হঠাৎই এক তীব্র ইচ্ছা জন্মায় মনে—"আমি হব সেই 'কথাবন্ধু', যার কথার জাদুতে বুঁদ হয়ে থাকবে মানুষ।"


শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। সেই ইচ্ছের পিছু ছুটতে গিয়ে, জীবনের প্রথম ইন্টারভিউতেই অপ্রত্যাশিতভাবে ধরা দেয় স্বপ্ন। শুরুটা ছিল সিনেমার মতো। সিনিয়র ভাইয়া-আপুরা আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন—বলতেন, "একদিন তুই অনেক নাম করবি, অনেক দূর যাবি।" কিন্তু বিধাতার অন্য খেলা! সহসাই আমার ভেতরে বেজে উঠল বিদায়ের সুর। মনে হলো, 'আর নয়'। কোনো কারণ ছাড়াই, সেই স্বপ্নের ক্যারিয়ার ছেড়ে চলে এলাম। এরপর কিছু স্টেশন থেকে ডাক এসেছে, ফোনকল, মেইল—কিন্তু আমি আর ফিরিনি। কেন ফিরিনি—তা আজও আমার কাছে স্পষ্ট নয়।


রেডিও ছেড়ে পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলেও এর রেশ আমার ভেতরে কোথাও একটা খুব গোপনে রয়ে গিয়েছিল। কথা বলার জন্য মনটা ছটফট করত। উচ্চস্বরে বই, পত্রিকা, কবিতা পড়তাম। এসব করতে করতে আবৃত্তির প্রতি ভালো লাগা জন্মায়। শুরু করি আবৃত্তি। প্রতিযোগিতা, স্টেজ পারফরম্যান্স—একটার পর একটা। জেলা পর্যায়ে সেরা হওয়ার সম্মানও আসে হাতে। কিন্তু হঠাৎ এক সকালে মনে হয়, অন্যের জন্য আর নয়, এবার যা করব, সব নিজের আনন্দের জন্য।


মাঝে একটা অবাক করা ঘটনা ঘটেছিল। তখন আমি স্টেজ পারফরম্যান্সের পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রুপে নিজের আবৃত্তি শেয়ার করতাম। একদিন অপরিচিত এক নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ আসে। ভদ্রলোক নিজের পরিচয় দেন—দেশের প্রথম সারির গ্রুপ অব কোম্পানির একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর। আমি তো হতবাক। তিনি জানালেন, তাঁর লেখা কবিতাবলি নিয়ে একটি আবৃত্তির অ্যালবাম বের করবেন—যেখানে আরও আবৃত্তিকারদের আবৃত্তি থাকবে। তাঁদের সঙ্গে আমাকেও আবৃত্তি করতে হবে। প্রথমে স্ক্যাম ভেবেছিলাম। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম—ভদ্রলোক কোনো স্ক্যামার নন।


তাঁর লেখা কবিতাই ছিল আমার পাবলিকলি শেষ আবৃত্তি। এরপর বিভিন্ন প্রোগ্রাম থেকে ডাক এসেছে। কিন্তু আমি কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছি। একসময় মানুষ বুঝে যায়—আমাকে ডেকে কোনো লাভ নেই। তাই তারা আমাকে ডাকা বন্ধ করে দেন। এখন টুকটাক অফিসের প্রোগ্রামে আবৃত্তি করি, কিন্তু সেটাও খুব বেশি নয়।
কৈশোর থেকেই লেখালেখির একটা ঝোঁক ছিল আমার। লুকিয়ে রাখা ডায়েরির পাতাগুলো ছিল আমার একান্ত জগৎ। রেডিওতে তা বেশ কাজে লেগেছিল; নিজের স্ক্রিপ্ট তো বটেই, অন্যদের স্ক্রিপ্ট লিখে দেওয়ার দায়িত্বও কাঁধে এসে পড়ত।


পেশাগত কারণে একসময় প্রচুর পত্রিকা পড়তে হতো আমাকে। পত্রিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে একদিন মনে হলো, নিজের ভাবনাগুলো অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিলে কেমন হয়। আমার ভাবনা কিন্তু তা অন্যের কল্পনায় ডানা মেলে উড়ে বেড়াবে। এসব ভাবতেই ভেতরটা কেমন অজানা ভালো লাগায় নড়েচড়ে উঠত। কিন্তু সংকোচ কাজ করত খুব—যদি না ছাপে? তবে লজ্জায় পড়তে হবে।


একদিন এক বন্ধুর সঙ্গে কোথাও একটা যাচ্ছিলাম। পায়ে-হাঁটা রাস্তা। হাঁটতে হাঁটতেই মাথায় একটা লেখা এল এবং ওই অবস্থাতেই সেটা শেষ করে দেশের প্রথম সারির এক পত্রিকায় পাঠালাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে সেই পত্রিকার বিশেষ এক পাতায় লেখাটা প্রকাশিত হলো। নিজের মধ্যে নতুন করে জন্ম নিল আত্মবিশ্বাস। শুরু করলাম নিয়মিত লেখালেখি—দেশের অন্যান্য জাতীয় দৈনিক, ম্যাগাজিন, নিউজ পোর্টাল, ব্লগ… লিখতেই থাকলাম।
কিন্তু এবারও হঠাৎ মনে হলো—থেমে যাওয়া দরকার। কিন্তু থামা হলো না।


এখন একটা প্রতিষ্ঠানে কনটেন্ট এবং কপি রাইটার হিসেবে কাজ করছি। সারাদিন লেখার সঙ্গেই থাকতে হয়। মাঝে মাঝে মনে হয়—এসব লেখালেখি, স্ক্রিনের আলো, ডেডলাইন—সবকিছু থেকে অনেক দূরে চলে যাই। আবার সেই মনটাই হাজারবার আমাকে বোঝায়—"তোর লেখার পথ অনেক বাকি। তোর অবশ্যই এই পথে হাঁটা উচিত।"


আমি জীবনের বাঁকে বাঁকে অনেক পছন্দের জিনিস ছেড়ে এসছি। কিন্তু লেখাই একমাত্র জিনিস—যাকে আমি ছাড়তে পারিনি, আবার সে-ও আমাকে ছাড়েনি।
আমার কাজ নিয়ে নিজের মূল্যায়ন করতে গেলে অদ্ভুত এক সংকোচ ভর করে। মনে হয়—কী সব ভুলভাল কথা বলি আমি, কী অদ্ভুত আমার গলার স্বর! মানুষ কেন আমাকে মনোযোগ দিয়ে শুনত, সেটাই বুঝে উঠতে পারি না। নিজের আবৃত্তি শুনলেও মনে হতো—কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছে না। কোনো অনুষ্ঠানের রেকর্ড শুনলে লজ্জায় মুখ লুকাতে ইচ্ছে করত। নিজের লেখা পড়লেও মনে হয়—এসব সাধারণ কথাবার্তা মানুষ কেন পড়ে, কেন প্রশংসা করে!


আমি বরাবরই প্রচারবিমুখ। প্রচার-প্রচারণা কখনোই খুব একটা স্বস্তি দেয়নি। নিজের পছন্দের লেখা ছাড়া প্রকাশিত কোনো লেখা শেয়ার করতেও ইচ্ছে করে না। মাঝে মাঝে কেউ ইনবক্সে চাইলে লিংক পাঠাই, ব্যস—এই পর্যন্তই।


ভুলে যাওয়ার প্রবণতা আমার বহু দিনের সঙ্গী; ইদানীং যেন তা আরও বেড়েছে। মাঝে মাঝে মোবাইলের পাসওয়ার্ডও মনে থাকে না। তাই ভাবলাম, মনের ভেতর জমে থাকা কথাগুলো লিখে শেয়ার করি—যদি কোনো উপদেশ বা পরামর্শ পাওয়া যায়। কোন দিন আবার ভুলের চোরাবালিতে সব তলিয়ে যায়, কে বলতে পারে!


বিশেষ দ্রষ্টব্য: আজকাল আমি বেশ কমার্শিয়াল হয়ে গেছি—এই স্বীকারোক্তি দিতেও সংকোচ নেই। সে কারণেই পোস্টে বিনা কারণে প্রচারণা থেকে বিরত থেকেছি।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১২
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×