somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইন্টারভিউ- কবি ও কবিতা

০২ রা অক্টোবর, ২০০৬ ভোর ৪:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনে ইন্টারভিউ-এ সফলতা আমার খুব কম। 15তম বিসিএস-এ ভাইভা পর্যন্ত গিয়েও উত্তীর্ণ হতে পারিনি। পেশাগত জীবনে ওটাই ছিলো আমার বড়ো ব্যর্থতা। রাগ করে তারপর আর সরকারি চাকরীই করিনি। আমার বউ বলে- তুমি বাংলার ছাত্র হলে ভালো করতে। কবিতা লিখি, বাংলার চর্চা করি ব'লে হয়তো বউ বলে এসব। তবে কবিতার ইন্টারভিউ-এ আমি সফল। জীবনে নানান ব্যর্থতার মাঝে এরকম সফলতার গল্প বলতে কার না ভালো লাগে! সে গল্পই বলবো আজ।

1986 সাল। সিরিয়াসলি-ই কবিতা লিখছি। ছাপা হচ্ছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। মনে আশা দৈনিক ইত্তেফাক-এর মতো বড়ো পত্রিকায় কবিতা ছাপাতে হবে। দিনক্ষণ ঠিক করে ময়মনসিংহ থেকে ছুটে এলাম ঢাকায়। সোজা চলে গেলাম আর. কে. মিশন রোডে। উদ্দেশ্য পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকের সাথে সাক্ষাত করা। সাথে করে নিয়ে এসেছি সদ্য লেখা কয়েকটি কবিতা। সম্পাদককে দেখাবো বলে। অনুুমতি নিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। সম্পাদক সাহেব ব্যস্ত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাঠানো চিঠি খুলছেন। কোনোটা পড়ছেন, কোনোটাতে একটু চোখ বুলিয়েই ফেলে দিচ্ছেন মেঝেতে। ইশারায় আমাকে বসতে বললেন। আমি অপেক্ষা করছি। মনে সংকোচ আর দ্বিধা-ভয়। কী জানি কী হয়!

সম্পাদক সাহেবের ব্যস্ততা শেষ। কুশল বিনিময়ের পর শুরু হলো পরিচয়পর্ব। আমি কবিতা লিখি। তখনও চলছে ছাত্রজীবন। কিন্তু তিনি আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম শুনে ভুরু কুঁচকালেন একটু। তিন-চারটে কবিতা দিলাম তাঁর হাতে। মনোযোগ সহকারেই পড়লেন। তারপর শুরু হলো আসল ইন্টারভিউ। মানে কবিতা-বিষয়ক কথাবার্তা। তাঁর মনে কোনো সন্দেহ জাগলো কীনা জানি না! তিনি বিজ্ঞ সাহিত্য সম্পাদক এবং একজন প্রতিষ্ঠিত কবি। আর আমি বাংলার ছাত্র না। তবু লিখি আধুনিক ছন্দোবদ্ধ কবিতা। সুতরাং প্রচলিত ইন্টারভিউ-এ মতোই তাঁকে ফেইস করতে হলো। কবিতার ছন্দ বিষয়ে খুঁটিনাটি প্রশ্ন শুরু করলেন তিনি। মাঝে মাঝে বিভিন্ন কবিতার লাইন বলছেন আর অন্তর্নিহিত ছন্দ জানতে চাচ্ছেন। আমিও উত্তীর্ণ হয়ে যাচ্ছি প্রতিবার। সবার শেষে যে কবির কবিতা থেকে ছন্দ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন তিনি হলেন ছন্দের যাদুকর কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। বললেন- ছিপখান তিন দাঁড় তিন জন মাল্ল্লা/ চৌপর দিনভর দেয় দূর পাল্ল্লা- বলোতো কোন্ ছন্দে লেখা এ কবিতাটি?

আমি ঘাবড়ালাম না একটুও। কারণ ততোদিনে ছন্দ সম্পর্কিত তিন-চারটে বই পড়ে ফেলেছি আমি। যদিও কবি আব্দুল কাদির-এর "ছন্দ সমীক্ষণ" আমার কাছে একটু কঠিনই মনে হয়েছিলো। একটু মাথা ঠান্ডা করে ভেবে উত্তর দিলাম- কবিতাটি দু'টো ছন্দে লিখা- স্বরবৃত্ত এবং মাত্রাবৃত্ত। সাথে সাথে টেবিলে রাখা টুকরো কাগজে লাইন বাই লাইন ছন্দ-বিশ্লেষণ করেও দেখালাম। বিজ্ঞ সম্পাদক মনে হয় খুশিই হলেন। বললেন- ঠিক আছে যাও, আমি ভালো করে কবিতাগুলো পরে পড়ে দেখবো। ছাপানোর উপযোগী হলে ছাপাবো।

খুশি মনে বের হয়ে এলাম সম্পাদকের রুম থেকে। কারণ একজন প্রতিষ্ঠিত কবি, ইত্তেফাকের সাহিত্য সম্পাদক আশ্বাস দিয়েছেন আমাকে। চলে গেলাম ময়মনসিংহ। বিপুল উৎসাহে লিখতে থাকলাম আরও আরও কবিতা। ঠিক এক সপ্তাহ পরই দৈনিক ইত্তেফাক-এর সাহিত্য পাতায় প্রথম ছাপা হলো আমার কবিতা- "দিনান্তের নারী"। আমি তৃপ্ত, আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত। মনে মনে ভাবলাম- আমার কবিতা লেখা কিছুটা হলেও তো সার্থক!

02.10.2006


বি.দ্র. "দিনান্তের নারী" কবিতাটি আমার ব্ল্লগে পোস্ট দেয়া আছে এবং প্রকাশকাল উল্ল্লেখ আছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বস্তিবাসী সেই অগ্নিকন্যাকে নিয়ে লেখা একটি কাব্যগাথা

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৫৫


ঢাকার আকাশ তখন ধুলোমাখা সন্ধ্যার রঙে ছিল ডেকে
বস্তির সরু গলিতে শিশুদের কান্না
নর্দমার স্রোতের মতো দীর্ঘশ্বাস ফেলে
সেই অন্ধকার জন্মঘরে প্রথম আলো দেখেছিল
এক বস্তিবাসী কন্যা শিরিন
এখনো এক অচেনা নাম
যার ভেতর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাবুল আলীই আমাদের বাংলাদেশের প্রতীক

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৩৭



আপনাদের কি এই ছবিটার কথা মনে আছে? এই বছরের শুরুতে চলতি বছরের জানুয়ারীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বেআইনিভাবে বাংলাদেশের জমিতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ কি শিখিয়েছে?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৬






অপমান, অপদস্থ থেকে বাঁচার উপায় শিখাইনি? ওস্তাদ মগা শ্যামী পাহাড়ে বসেও এসবের সমাধান করতে পারে, আপনি সামান্য অসুস্থতার জন্যও ব্লগে মিলাদ দেননি, দোয়া করেছেন কার জন্য? খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×