মাকে নিয়ে শুরু করেছিলাম ব্ল্লগের লিখা....wjsK। দ্বিশতাধিক পোস্টে এসে মা-ই হয়ে যাচ্ছেন এখন আমার লেখনীর বিষয়। মাকে হারিয়েছি গত 24 অক্টোবর। তারপর থেকে মার মুখচ্ছবিই ভাসছে আমার দু'চোখে। শেষ সময়ে মা আমার বাসাতেই ছিলেন। মা প্রতি রোজায়ই ঢাকাতে আমার বাসাতে কাটান। এবারও কাটালেন। শবে কদরের আগের দিন চলে গেলেন গ্রামের উদ্দেশ্যে। উপজেলা সদরে এক ভাইয়ের বাসা হয়ে যাবেন গ্রামের বাড়িতে। সাথে করে নিয়ে গেলেন আমার কিনে দেয়া কিছু কাপড়-চোপড় এবং যাকাতের টাকা। মা প্রতিবারই আমার দেয়া যাকাতের টাকা-কাপড় দরিদ্রদের মাঝে বিলি করেন নিজ হাতে। বাছাই করা দরিদ্রদের মাঝে তিনিই নিজ হাতে বিলি করেন প্রতিবার। আমিও ওনার হাতেই তুলে দিয়ে আশ্বস্ত থাকি। কারণ প্রতিবার ঠিক ঠিক মানুষের হাতে পেঁৗছে যায় তা। এবার মা পারলেন না। ঈদে আগের দিন চলে গেলেন আমাদেরকে এতিম করে। রেখে গেলেন তঁার কিছু অসমাপ্ত কাজ, ইচ্ছা।
আমার গ্রাম হিন্দু-মুসলিমের বসবাস প্রায় আধাআধি। ছোটোবেলা থেকেই আমাদের মাঝেও গড়ে উঠেছে মিলেমিশে থাকার সংস্কৃতি। ঈদ, পূজাসহ বছরের আনন্দের দিনগুলো আমরা নিজেদের মাঝে ভাগাভাগি করেই সহাবস্থান করি। একে অপরের খেঁাজ-খবর নেই। এবাড়ি ওবাড়ি ঘুরে বেড়াই, মজা করি, একসাথে খাই। আর এ সংস্কৃতি আমাদের বাবা-মা, বড়ো ভাই থেকেই আমাদের ছোটোদের মাঝে চলে এসেছে পাকাপোক্তভাবেই। মা'র ইচ্ছার সূত্র ধরে ঈদের দিন নামাজের পর চলে গেলাম সেই হিন্দু বুড়ির বাড়ি- যার সাথে মা'র সখ্যতা ছিলো সবচেয়ে বেশি। সবাই তাকে নাইল্যার মা বলে চেনেন। বুড়ির উপার্জনক্ষম একমাত্র ছেলে নাইল্যা মারা গিয়েছে ক'বছর আগে। বুড়িকে দেখাশোনার তেমন কেউ নেই। ছেলেবউ এবাড়ি ওবাড়ি কাজ করে। সংসারে বেশ অভাব-অনটন, খাবারের অভাব। সেইজন্যই মা রোযার ঈদের সময় আমার কাছ থেকে যখন যাকাতের টাকা নিয়ে আসতেন তখন আলাদা করে কিছু টাকা অথবা একটা শাড়ি নিয়ে আসতেন প্রতিবার। ঈদের খুশির দিনে প্রিয় পড়শী বুড়িকে খুশিমনে দেখতে চাইতেন মা।
বুড়ির বাড়ি গিয়ে দেখি- বারান্দায় চটের উপর বুড়ি বসা। চট, কাথা, বালিশ থেকে দুর্গন্ধ আসছে। কতোদিন যে ধোয়া হয়নি কে জানে? দেখলাম মলিন চেহারা, স্বাস্থ্য একেবারেই ভেঙ্গে গেছে। ছেলে বেঁচে থাকাকালীন যা দেখেছিলাম শরীর-স্বাস্থ্য তার ছায়টিও নেই। চোখের নিচে ফোলা, শরীরে ক্লান্তি আর অবসাদ ঘিরে আছে তাকে। আমাকে দেখেই কাদতে লাগলেন। আমি তার পাশে চটেই বসে পড়লাম। যদিও আমাকে তার ছেলেবউ টুল এনে দিতে চাইলেন, কিন্তু আমার নিতে ইচ্ছে করলো না নিতে। শুনলাম- ঢাকা থেকে আানার পরই লাঠিতে ভর করে আমার মাকে দেখেও এসেছেন বুড়ি। আমি ব্যস্ততার জন্য খেয়াল করিনি তখন। মা'র কথা বলতে লাগলেন। আমার খুব খারাপ লাগতে লাগলো। আমি বুড়ির হাতে কিছু টাকা দিতেই তার কান্নার মাত্রা আরও বেড়ে গেলো। আমার মাথায় হাত বোলাতে থাকলেন। আমার চোখেও পানি এসে গেলো। আমি আর থাকতে পারলাম না। চলে এলাম সেখান থেকে। আসার সময় মনে হলো- এ বুড়িও হয়তো চলে যাবেন আমাদের ছেড়ে সবার অগোচরে একদিন। পৃথিবীর কোনো দুঃখ, কষ্ট, কায়-ক্লেশ আটকিয়ে রাখতে পারবে না তাকে।
28.10.2006

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।

