যৌতুক এর অভিশাপ হতে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা কয়েক দশকের। এর পরেও প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতাতে এমন দু-একটি সংবাদ আমাদের বিবেক এর দ্বারে কষাঘাত করছে প্রতি নিয়ত। এই সকল প্রকাশিত ঘটনার ভিকটিম বেশীর ভাগই দরিদ্র বা খেঁটে খাওয়া শ্রেণীর হয়। তাহলে কি মধ্যবিত্ত বা উচ্চ বিত্তের সমাজ এখন যৌতুক মুক্ত? এই প্রশ্নের জবাবের পূর্বে দুটি বাস্তব ঘটনা সম্পর্কে জানি-
ঘটনা একঃ ১৯৯৪ সালের কোন এক বিকালে রেখার (ছদ্মনাম) জন্য এক সুপাত্রের সন্ধান আনলেন তার মামা। ছেলে পক্ষের কোন দাবী নেই বলে এঙ্গেজমেন্ট এর পরে ছেলের বড় ভাই রেখার বাবার নিকট হতে ছেলের আত্মসম্মান রক্ষার্থে একটি মোটর বাইক চেয়ে বসলেন। রেখার বাবা অপারগতা স্বীকার করার পরে তিনি বললেন আপনি ফার্নিচার না দিয়ে বাইক দিলে আমাদের সম্মান রক্ষা হয়! পরিবারের সকলের চাপে এবং এই যোগ্য পাত্র হাত ছাড়া করার ভয়ে রেখার বাবা বিয়ের অন্যান্য তৈজস পত্রের সাথে একটি বাইক দিয়ে জামাতার সম্মান রক্ষা করেন। কিন্তু এই লোভী মানুষগুলোর লোভ যে কত ভয়াবহ তা আজ পর্যন্ত তিনি হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছেন।
ঘটনা দুইঃ দেশের শীর্ষ স্থানীয় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম এস সম্পন্ন করা এক সুপাত্র র্যাবতির (ছদ্মনাম) পাণি গ্রহনের জন্য আগ্রহী হল। পাত্রের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে র্যাবতির বাবা খুব প্রীত হলেন কারন পাত্রের ফলাফল অনেক ভালো এবং ভবিষ্যতে বিদেশের উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে দেশে অনেক ভালো অবস্থানে যাওয়ার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে এই পাত্রের। র্যাবতির বাবার মনের ভাব বুঝতে পেরে পাত্রের বাবা তার পুত্রের বিয়ের পণ মাত্র ১০ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করলেন। ভালো পাত্র বলে অনেক কষ্টে এই টাকা যোগাড় করে তিনি ঐ সুপাত্রের বায়না পত্র সম্পাদন করে তাকে তাঁর কন্যার জন্য ক্রয় করলেন। এতে কিন্তু র্যাবতির মনে এক ফোটাও শান্তি নাই কারন তার পণের টাকা যোগাড় করতে তার বাবা সর্বস্বান্ত হয়েছেন । র্যাবতির নিত্যদিনের চিন্তা একটি আর তা হল পরের বোন গুলোর বিয়ে দেবার সময় এই পণের টাকা তার বাবা কোথায় পাবেন?
এই দুটি ঘটনা দুই ধর্মাবলম্বী মানুষদের এবং একটি আরেকটির প্রায় একযুগের অধিক পরের হলেও এর গুনগত মানের কোন পরিবর্তন এই একযুগে হয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হিসেবে দ্বিতীয় ঘটনার নায়কের জন্য আমি যেমন লজ্জিত তেমনি একজন পুরুষের মাণ সম্মান শ্বশুর বাড়ির একটি বাইকের মধ্যে নিহিত জেনেও আমি বিব্রত। কেউ হয়ত বলবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রটির ঘটনা বিচ্ছিন্ন কারন এমন ঘটনা হাজারে একটি হয় আমি বলব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য দশ হাজারে এমন একটি ঘটনাও লজ্জা জনক। এমন ঘটনার নায়কদের সনদ বাতিল করা যায় কিনা তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের ভাবা উচিৎ বলে আমি মনে করি। আমাদের সমাজে আনাচে কানাচে এমন অনেক রেখা এবং র্যাবতিরা স্বামী নামক এক পুরুষ (!) এর ঘরে যাওয়ার জন্য বা তাদের সাথে সংসার করার জন্য এমন অভিনব যৌতুকের স্বীকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এদের অনেকেই হয়ত সামাজিক অবস্থানের ভয়ে এই স্বামী দেবতার উর্বর মস্তিস্কের আবিষ্কৃত নিত্য নতুন যৌতুকের যোগান দিয়ে যাচ্ছেন। এরা নিজেরাও জানে না যে এই যে যৌতুকের জালে তাঁরা জড়িয়েছেন তা থেকে মৃত্যু ব্যতিত অন্য কেউ তাঁদের রেহাই দিতে পারবে কিনা।
প্রতিটি কন্যাই তার পিতার নিকট রাজকন্যা সেই রাজকন্যার বিয়ে যদি দিতেই হয় তাহলে এমন কোন সুপাত্রের কাছে দিন যে আপনার এই রাজকন্যাকে তার সাধ্য অনুযায়ী রানীর মত করে রাখবে। যেই রাজ পুত্রের কাছে আপনার কন্যা বিয়ে দিতে রাজপ্রাসাদ আপনার তৈরি করে দিতে হয় সেই রাজপুত্র আর যাই হোক পুরুষ নয়। তাই কন্যাদানের পূর্বে ভাল করে ভেবে নিন আপনি আপনার কন্যাকে কোন পুরুষের সাথে বিয়ে দিচ্ছেন নাকি পুরুষের বেশধারী কোন অলস হায়েনার কাছে বিয়ে দিচ্ছেন? কারন কোন পুরুষ শ্বশুর মহাশয়ের ধনে তো নয়ই নিজের পিতার ধনেও পোদ্দারি করতে লজ্জিত হয়। সে সত্তাই পুরুষ যে নিজেকে নিজের নামে পরিচিত করে এবং নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব গুলো নিজের পরিশ্রমের উপার্জন দিয়ে পালনের চেষ্টা করে।
কন্যা কে পাত্রস্থ করার পূর্বে পাত্র পুরুষ কিনা তা জেনে নিলেই হয়ত এই নিরাময়ের অযোগ্য ব্যাধির নিরাময় সম্ভব।
(এই লেখাটি প্রথম শ্রেণীর সকল দৈনিকে পাঠালেও যৌতুক হট টপিক না বলে তাঁরা ছাপাতে গরিমসি করে!! অথচ এরা সবাই নারীর পক্ষেই কথা বলার দাবী করে )
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:০৬