somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিথিলা বিষয়ে একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

১৭ ই জানুয়ারি, ২০০৭ রাত ৩:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভেবেছিলাম, মিথিলা নিয়ে লেখার এতোটাই আধিক্য যে আমার এর মধ্যে মাথা ঢোকানোর আর প্রয়োজন নেই। কথাটা সত্যি। কিন্তু হঠাৎ করেই এতোদিন পরে এই নামটা এমনভাবে আলোচিত হয়ে উঠলো যে এই নাম ঘিরে আমার এক সময়ের অনুভুতি মনের মধ্যে কেমন করে আকুলি বিকুলি শুরু করে দিলো। বিষয়টা আসলে একেবারেই ব্যক্তিগত পর্যায়ের। তারপরেও ব্লগারদের সঙ্গে শেয়ার করার ইচ্ছেটা দমন করতে পারছি না।
আমার কলেজ জীবন কেটেছে বগুড়ায়। ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের কাঁটাতারের বেষ্টনির মধ্যে। ঘটনা সেখানকারই। নতুন ভর্তি হয়েছি। বাবা নিজে গিয়ে মাঝিড়ায় এক ছাত্রবাসে আমাকে উঠিয়ে দিয়ে এসেছেন। সেখানেই থাকি। পরিচিত কেউ নেই তেমন একটা। নবীন বরণের দিন ক্যাম্পাসে যাবার পরে হঠাৎ করেই চিৎকার দিয়ে উঠলাম তুষারকে দেখে। তুষার নওগাঁয় জিলা স্কুলে পড়তো। আমি কেডিতে। কেডি-জিলার ঐতিহ্যগত রেষারেষির কারণে তুষারের সঙ্গে আমার নওগাঁতে তেমন একটা সম্পর্ক ছিলো না। কিন্তু বগুড়ায় সেই প্রায় বিদেশ বিভুঁইয়ে (!) আমরা একজন আরেকজনকে দেখে যেনো প্রাণ ফিরে পেলাম। তারপরে দেখা মিললো পুরানো বন্ধু সজল, রাজ আর মেহেদীর। আমরা একসঙ্গে নবীন বরণে ঢুকলাম।
সবাই বসে আছি। এমন সময় একটা শ্যামলা বরণের মেয়ে লিকলিকে শরীর নিয়ে হুড়মুড় করে এসে পড়লো প্রায় আমার ওপর। কী ব্যাপার, আপনি আমার জায়গায় বসেছেন? তার জ্বলজ্বলে চোখের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলি।
- না, মানে ফাঁকা ছিলো তো...
কথা শেষ হয় না। এক ঝটকায় তুড়ি মেরে কোমরে হাত দিয়ে তিনি বললেন, উঠুন।
আমি অপরাধী। উঠে গেলাম। মনে মনে আহতও হলাম।
নবীন বরণের পর সোজা কাশে। তুষার, সজল, রাজ কমার্স আর মেহেদী সায়েনেস। আমি অভাগা একাই আর্টসে। কাজেই আমি আবার সেই অসহায়। কাশে আমাদের ফরম টিচার কামরুল হুদা পথিক। ভদ্রলোক অর্থনীতির শিক, ছোট কাগজ দ্রষ্টব্যের সম্পাদক, এখন সম্ভবতঃ সাভারে আছেন। প্রথম কাশেই তিনি নানা সর্তকবাণী শুনিয়ে চলে গেলেন। বসেই আছি ডেস্কে। এমন সময় পেছন থেকে মাথায় তাচ্ছিল্য টোকা
-কী রে খুব যে বসেছিলি আমার সিটে? গ্রামের নাম কী?
প্রশ্নটার মানে ঠিক বুঝতে পারলাম না। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম।
- আরে কোন গ্রাম থেকে আসিচু?
খাঁটি বগুড়াইয়া ভাষায় এই প্রশ্ন তার মুখ থেকে বের হবার সঙ্গে সঙ্গে কাশে হাসির রোল পড়ে গেলো। আমি ইঁদুর। তারা সব বিড়াল! এরপর নানান মন্তব্য। যদিও আমি আশৈশব রাজশাহী আর নওগাঁ মিলিয়ে বড় হয়েছি। তারপরেও বগুড়ার মতো মন বড় শহরের এমন বড় বড় সব হামলায় আমি একেবারে হতভম্ব হয়ে গেলাম। মুখ দিয়ে কথা সরে না। আরেক দফা হাসির খোড়াক হলাম।
এরপর জিনা হারাম হয়ে গেলো আমার। দেখলেই টিটকিরি। হো হো হাসি। কাশে বন্ধু হলো বটে। তবে তারা সবাই বাইরে থেকে আসা। ফলে আমার সঙ্গে বন্ধুতা করতে গিয়ে পুরো সার্কেলটিই বগুড়ার বালক-বালিকাদের রঙ্গ-তামাসার বস্তুতে পরিণত হলো।
কাশে আমার মন টেকে না। আড্ডা তাই বাইরের কাশের ছেলেদের সঙ্গে। এর মধ্যেই একদিন আমাদের পিকনিক- পয়লা পিকনিক। দলবেঁধে কলেজের 6 টি বাসে করে গেলাম নাটোরের হুড়ুম চৌধুরীর বাগান বাড়িতে। সেখানে আমরা ইতিউতি ঘুরছি। আমি আর সজল পুকুরের পাশ দিয়ে জঙ্গল এলাকা এড়িয়ে সন্তর্পনে হাঁটছি। হঠাৎ করেই বালিকার চিৎকার। বন্ধু সজল আমার বরাবরই নায়কীয় স্টাইলে ছুটে যেতে সিদ্ধ। আমি কিছুটা থতমত খাই। অবশেষে আমিও ছুট লাগাই সজলের সঙ্গে। দেখি, সেই মস্তান বালিকা ধরাশায়ী। একটি বিশাল গাছের গুড়ির ফাঁকা অংশে তার বাম পা গেছে আটকে। তিনি যে গতিতে চিৎকার করছেন, তার সঙ্গে থাকা বান্ধবীটি তার চেয়েও দ্্বিগুণ আওয়াজ ছাড়ছেন। উভয়েই নিজেরা নিজের কান দু'টি হাত দিয়ে শব্দ থেকে আড়াল করে রেখেছেন। সজল, বীর বন্ধু আমার, একটানে বালিকার পা বের করে আনলো। যাক বাবা চিৎকার কমলো। কিন্তু একটু পরেই ঠাস! বালিকার সজোর চপেটাঘাত বন্ধু সজলকে কাবু করে ছাড়লো। আমরা বিহবল। বাকরুদ্ধ। বালিকা লিকলিকে শরীর মুচড়িয়ে আওয়াজ দিলো
- হারামজাদা, পা টেনে বের করতে হলে তো আগেই বের করতাম। পাটা তো ছিলে ফেলেছিস।
হনহনিয়ে হাঁটা দিলো বালিকা ছিলে যাওয়া পা নিয়ে। সজল সদ্য সকালে দাঁড়ি কামানো গালে হাত ঘষতে ঘষতে হাঁটা দিলো। আমি অভ্যাসবশতঃ মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে তার পিছু নিলাম।
পিকনিকের আয়োজন। ভাগ্যচক্রে অভিনয়ে যুগল নাম উঠলো আমার আর বালিকার। আমি তো আতঙ্কিত! কী অভিনয় করবো? বালিকা বেঁকে বসলো আমার সঙ্গে অভিনয় করবে না। অজুহাত পা ছিলে গেছে।
পিকনিক থেকে ফিরলাম। রাতে ঠিকমতো ঘুম হলো না। শঙ্কিত হলাম, মস্তান বালিকার প্রেমে পড়ে গেলাম নাকি? সারারাত অঞ্জন দত্ত কানের কাছে ভ্যান ভ্যান করলো, ,তুমি না থাকলে...'
সকালে ক্যাম্পাসে গেলাম ফুল নিয়ে। লুকিয়ে চুরিয়ে ফুলটা বালিকাকে দেবার ধান্দা। বন্ধুরা ঘোর আপত্তি তুললো। মানলাম না। বাসে ওঠার আগে ফুলটা হস্তান্তর করতে গেলাম। দেখলাম, বালিকা সিটে বসে আছে। ফুল দিয়েই ভোঁ দৌড়। পরের তিন দিন কলেজ ছাড়া। আশঙ্কা বালিকার অভিযোগে হয়তো কলেজ ত্যাগ করতে হবে। তিনদিন পর কাশে ঢুকতেই দেখলাম বালিকা হনহনিয়ে আসছে আমার দিকে। আমি কুঁকড়ে গেলাম। বালিকা ঝট করে একখানা ডায়েরির মধ্যে থেকে আধা চ্যাপ্টা গোলাপ বের করলো। আমার হাতে দিলো। মুখ ঝামটা দিয়ে বললো
- ছিলি কোথায় তিনদিন? তোর অপোয় ফুলটা বাসি হয়ে গেলো। তোর ভাগ্যে এটাই আছে। নে।
কিছু বুঝলাম না। ফ্যালফ্যালিয়ে বন্ধুদের দিকে চাইলাম। দেখলাম তারা মিটিমিটি হাসছে। বালিকা বাড়ির ঠিকানা দিলো। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো প্রসাদ নিলাম!
তিনমাস আমরা চুটিয়ে ঘুরে বেড়ালাম বগুড়া শহরের আনাচে কানাচে। না, প্রেম হয়নি আমাদের। আমরা বন্ধুতা গড়েছিলাম। সেই বন্ধুতা প্রেমে পরিণত হবার সময় পায়নি। তার আগেই নতুন ঝামেলা এসে হাজির হয়েছিলো। সে গল্প না হয় আরেকদিন বলবো।
আজ শুধু এটুকুই বলি। বালিকার নাম ছিলো মিথিলা। এখন বিচ্ছিন্ন আমরা একেবারেই। এখনো মিথিলা নামটি দেখলে কোথাও বোঝার চেষ্টা করি, এই মিথিলা কি সেই বালিকা?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×