somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার স্টাইল, আমার ভাবনা!

২১ শে অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক.

কেবলমাত্র ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি। মেসে থাকি, এক রুমে ২ জন করে। স্বাধীনতা কেবল উপভোগ করতে শুরু করেছি। সবাই সবার বাড়ী থেকে অনেক দূরে। সাবজেক্টটাই এমন যে, এর জন্য একটা করে কম্পিউটার কেনা লাগলো, অবশ্য পরে এসে বুঝতে পেরেছি যে, আসলে কম্পিউটার এর কোন দরকারই নেই। আমাদের ক্লাস এ যে ফার্স্ট হলো ডিপার্টমেন্ট এর ইতিহাসে রেকর্ড সংখ্যক জিপিএ নিয়ে, সে কিন্তু পুরো ৪ টি বছর পার করে দিয়েছিল কম্পিউটার ছাড়া। আমার দেখা প্রথম কম্পিউটার প্রকৌশলী যার নিজের কোন কম্পিউটার নেই। যাহোক, তার কথা না হয় অন্যদিন বলব, আজকে অন্য একটা প্রসংগে কথা বলি।

প্রথম সেমিস্টার এ আমাদের সময কাটতে লাগলো গল্পগুজব করে, সিনেমা দেখে আর কম্পিউটার গেমস খেলে। সারাদিন আমরা ক্লাস করতাম। বিকেলবেলা মেস এর সামনের মাঠে ক্রিকেট - ফুটবল খেলা, সন্ধ্যার পর থেকে এই রুম সেই রুম এ আড্ডা। আর রাতে যে যার মত। অনেকে পড়ালেখা করতো, অনেকে মুভি দেখতো, অনেকে গেমস খেলতো। আমার তখনকার নেশা ছিল ক্রিকেট ২০০২ আর এনএফএস ২ খেলা। আমি সারারাত ধরে খেলতাম, ভোর বেলায় ঘুমাতে যেতাম। আমার রুমমেট কিছুদিনের মধ্যেই আমার দেখাদেখি পড়ালেখা বাদ দিয়ে কম্পিউটার গেমস খেলা শুরু করলো। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে, হাসি আনন্দে, তারপর একসময় দেখি পরিক্ষা সামনে এসে হাজির। কোন সাবজেক্ট এর কিছুই পড়া হয়নি আমার। কম্পিউটার দুরে সরিয়ে রাখতে হলো বাধ্য হয়ে। আমাদের বাসার একটা রুম ফাকা ছিল। সেই রুমে ২ টা টেবিল একসাথে জড়ো করে পড়ালেখা শুরু করলাম। আস্তে আস্তে পড়ার গতি বাড়তে থাকলো, একসময় পরিক্ষাও শেষ হয়ে গেল। তারপর আবার কম্পিউটার গেমস খেলা শুরু, শুরু আবার রাত জেগে তাস খেলা। আবার আগের মধুর জীবন।

কিছুদিন পর একে একে বিভিন্ন পরীক্ষার রেজাল্ট দেওয়া শুরু হলো। আমার রেজাল্টের অবস্থা মুটামুটি, কোনটাতে আহামরি ভালো হওয়ার কোন প্রশ্নই নেই, আমি আশা করেছিলাম কোন কোনটাতে হয়তোবা খুব খারাপ হয়ে যাবে। সেটা অবশ্যি হলো না। সব সাবজেক্টের রেজাল্ট দেওয়া শেষ হলে আমি মুটামুটি বুঝতে পারলাম, ১২০ জনের ক্লাসে আমার পজিশন হবে ২০-৩০ এর মধ্যে। এদিকে আমার রুমমেট এর মন প্রচন্ড খারাপ। সব সাবজেক্টেই তার রেজাল্ট খারাপ। তার হাবভাবে বুঝা যাচ্ছে, আমার উপর সে প্রচন্ড ক্ষেপা। কথাবার্তা বলতেছে না। একটা করে সাবজেক্ট এর রেজাল্ট দেয় আর সে আবার নতুন করে পড়তে বসে। সময়ে অসময়ে পড়তে বসে। তাকে দেখে আমারও মন খারাপ হলো, আহারে বেচারা! আমার জন্য আজ তার এই দশা। আমি একদিন তাকে ডাকলাম। বললাম, আমার পড়াশুনার স্টাইলই এইরকম। সারাজীবন এই স্টাইলই ফলো করে এসেছি। সারা বছর পড়াশুনার নাম গন্ধ নাই। পরিক্ষার আগে খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে পড়ালেখা। এমনকি পরীক্ষার হলে আমি যেতাম গাদা গাদা বইপত্র সংগে নিয়ে। শেষমুহুর্তের দেখা। আমার জন্য এটাই কাজে দিয়েছে। পরীক্ষার আগের দিন রাতে গুরুজনের উপদেশ - ভালো করে ঘুমাও - আমার কোন কাজে আসতো না। এমনও হয়েছে আমি সারারাত পড়ালেখা করেছি, পরিক্ষা দিয়ে এসে তারপর ঘুম। আমি তখন একটা জিনিস আবিস্কার করলাম, অন্যসময়ে যেটা পড়তে আমার ২-৩ ঘন্টা লেগে যায়, পরিক্ষার আগে সেটা পড়তে আমার ১০-২০ মিনিট বড়জোর ৩০ মিনিট লাগে। এক একজনের এক এক স্টাইল থাকে, সবার স্টাইলই ভিন্ন। আমার কাছে মোট কথা - যার যেভাবে হয়। কেউ পরিক্ষার ১ মাস আগে সিলেবাস শেষ করবে, কেউ পরিক্ষার দিন সকাল বেলা সিলেবাস এর সাথে যুদ্ধ করবে। আমি তাকে বললাম, তুই আমাকে দেখিস না, তুই তোর মত করে পড়। সে আমার এই কথাটা মাথায় রাখলো। এর পর থেকে আমি গেমস খেলি আর তাস খেলি আর আড্ডা দেই, সেটা তার কাছে কোন বিষয় না, সে তার চাহিদামত পড়ালেখা করে যেতে লাগলো। পরের সেমিস্টারেই তার রেজাল্ট ভালো হতে থাকলো - এবং শেষেরদিকে সে প্রথম সারির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ঢুকে গেল।


দুই.

থার্ড ইয়ারে উঠে শেষ পরিক্ষার সময় হঠাৎ আমার মনে হলো, আমি শুধু শুধু পরিক্ষার আগের রাতে টেনশন নিয়ে মাথার চুল ছিড়তে ছিড়তে পড়ালেখা করি। রাতে মাঝে মাঝেই বিদ্যুত থাকে না। গরমে পড়তে কষ্ট হয়। শেষ পরিক্ষার আগে ৭ দিনের গ্যাপ। এই সাবজেক্টটা আমার খুবই পছন্দের একটা সাবজেক্ট। ক্লাসেও খুব ভালো ভাবে পড়ানো হয়েছে। মোটামুটি আমার সবকিছুই বুঝা আছে। এইবার আগে আগেই সিলেবাস শেষ করে ফেলব। আমার রুমমেট এর সিলেবাস আরো আগেই শেষ। আমিও যথারীতি পড়তে বসলাম। এবং দ্রুতই সিলেবাস শেষ করে ফেলালাম। পরিক্ষার আর তিন চার দিন বাকি, তখন আমার কয়েকবার রিভিশন দেওয়া শেষ। অন্যজনকে এটা সেটা বুঝায়েও দিচ্ছি। নিজেকে খুব হাল্কা হাল্কা লাগছে। কিন্তু বিপত্তি হলো পরীক্ষার ২ দিন আগে। আমার বারবার মনে হতে লাগলো আমি পরিক্ষায় কিছুই পারবো না। আগে কিছু পড়া না থাকলেও আমার এরকম মনে হতো না। আমি উদভ্রান্তের মত এদিক সেদিক ঘুরতে লাগলাম। সবাই রাতে পড়তে বসে, আমিও পড়তে বসি, বইপত্র যা দেখি - সবই আমার কাছে অন্য গ্রহের কিছু মনে হয়। আগে যা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি, অন্যদেরকেও বুঝিয়েছি, সেসবও আমার মাথায় ঢুকছে না। অন্যদের কাছে উল্টো বুঝতে গেলাম কিছু কিছু। তারাও আমাকে বুঝাতে পারলো না। আমার মনে পরিক্ষা নিয়ে একটা ভয় ঢুকে গেল। আমার বারবার মনে হতে থাকলো, এই পরিক্ষায় আমি নিশ্চিত ফেল করবো।

আমাদের ক্লাস এর ফার্স্ট বয় - সে আবার আমার খুব কাছের একজন বন্ধু - তার সাথে গেলাম পরামর্শ করতে - কি করা যায় এই বিষয়ে। সে সবকিছু শুনে আমাকে বললো, তুই এক কাজ কর। আগামীকাল ঘুরতে যা, সঙ্গে ক্যামেরা নিয়ে যা। সারাদিন ছবি তোল, সন্ধ্যার পর আড্ডা দে। তারপর সব ভুলে যাবি, রাতে আবার নতুন করে পড়তে বসবি। আমি তার কথা মত ছবি তুলতে গেলাম না ঠিকই (সারাদিন ঘুরাঘুরি করে ছবি তুললে রাতে ঘুম পাবে) কিন্তু সারাদিন চাচার টং এ চায়ের দোকানে বসে অন্যান্য ছাত্র, বিভিন্ন লোকজনের সাথে আড্ডা দিলাম। রাত ১২টায় মেসে ফিরলাম। তারপর পড়তে বসলাম। দেখি আমার কিছুই মনে নেই। কিন্তু ফিলিংসটা ঠিক অন্যান্য পরিক্ষার আগের রাতের মতই। সারারাত পড়াশুনা করে, পরেরদিন সকালবেলা পরিক্ষার হলে গেলাম। রেজাল্ট খারাপ হয় নাই।


তিন.

একেকজন ছাত্রের এক একটা স্টাইল থাকে, আমরা যখন জোর করে তার নিজস্ব স্টাইল পরিবর্তন করার চেষ্টা করি তখন সেটা সবসময় ভালো ফল আনতে নাও পারে। আসলে উচিৎ যে যার স্টাইলে আছে তাকে তার স্টাইলে থাকতে দেওয়া, তারপর তার স্টাইলটাকে কিভাবে আরো উপযোগী করে তোলা যাবে সেটা নিয়ে কথা বলা। তাহলেই পড়ালেখাটাকে কখনোই একজন ছাত্রের কাছে বোঝা মনে হবে না। আমি কখনই বিশ্বাস করি না যে - আগে আগে সিলেবাস শেষ করলেই ভালো ছাত্র হওয়া যায়, আর পরিক্ষার হলে পড়তে পড়তে ঢুকা একটি খারাপ ছাত্রের লক্ষণ।

- ছবি: উইকিপিডিয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৪৯
২১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×