somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যাত্রা

১৬ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনেকক্ষণ টানা ভ্রমণের পর মহাজাগতিক হলঘরটায় পৌঁছলাম । অনেকক্ষণ সময়টা কতক্ষণ সেটা হিসেব করে বলতে পারব না । সময়টা কয়েক ঘণ্টা , দিন বা মাস ও হতে পারে ।

সে এক অন্য রকম যাত্রা , আমি যেন তুচ্ছ , অতি নগণ্য এক বালুকণা , এক বিশাল , হ্যাঁ অতি বিশাল নিকষ কালো অন্ধকারের মধ্যে ছুটে চলছি । আমার গতিটা ছিল অবিশ্বাস্য । পৃথিবীর কোন জেট বিমান বা রকেট কোন কিছুর সাথে এর তুলনাই চলবে না । আর অমন অন্ধকারও পৃথিবীর কেউ দেখেনি কোনদিন ।

অন্ধকারে , প্রচণ্ড গতির সেই যাত্রা একসময় শেষ হল ।

- আর আপনার কেমন লাগছিল ? সোজাসুজি বা দিকে দাঁড়ানো লোকটা আমায় জিগ্যেস করল । মেরুদণ্ডে আঘাত জনিত কোন কারণে তার মৃত্যু হয়েছে ,পিঠে বিকৃত একটা ভাঁজ নিয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে ।
- হুম , অনুভূতি কেমন তা তখন ই বলা যায় যখন পরিপার্শ্বের সাপেক্ষে আপনি কোন একটা কিছু আপনি অনুভব করেন । নিকষ কালো অন্ধকারে , অন্ধকার ছাড়া অন্য কিছু অনুভব করা কঠিন । তবে কারও যদি দু কানে জল ঢোকার পরের সেই ভারসম্যহীন অভিজ্ঞতাটা মনে থাকে তাহলে আমারটাও বোঝা সহজ হবে ।

-
- কিন্তু জানেন , আমার ভ্রমণটা ছিল ঠিক আপনার উল্টো । খর্বাকৃতির গড়নের একজন বলল যার শরীরটা সম্পূর্ণ ঝলসানো ।
- আপনি কি আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিলেন ?

- হুম আমি চীনের ফুজিয়ান ফুজিয়ান প্রদেশে একটা খনিতে কাজ করতাম , খনিতে আগুন লেগে আমার মৃত্যু হয় । কিন্তু জানেন আমার ভ্রমণটা ছিল খুব আলোময় ।
- আলোকময় ! আপনিতো অনেক ভাগ্যবান , তাহলে তো আপনার যাত্রাটা বেশ উপভোগ্য ছিল !
- হ্যাঁ তা বৈকি , সূর্যকে আপনার চোখের তিনহাত দূরে রাখলে আপনার যেমন আনন্দ হবে তেমন ।
- কি বলেন মশাই ! আমাদের পাশের স্ফীত পেটের মহিলা ককিয়ে উঠলেন । পেটটা আড়াআড়ি ভাবে চেরা , সন্তান হতে গিয়ে মারা গিয়েছেন ইনি ।

- খর্বাকৃতির চীনা লোকটি বলে চলল ,
চারপাশে এত আলো , সাদা রঙের তীক্ষ্ণ আলো , মনে হয় শয়ে শয়ে সূর্য একত্রে রেখে দিয়েছে কেউ , আর তাদের আলো যেন লক্ষ বিদ্যুৎ চমক , এমনকি আমার বন্ধ চোখের পাতার উপর দিয়ে মাথার মধ্যে গিয়ে মাথাটাকে ভোতা করে দিচ্ছিল ।

- আর আপনি ? আপনাকে ত দেখে ফ্রান্সের মনে হচ্ছে, আর আপনার সন্তানটিই বা কোথায় ?
- না আমি ইতালিয়ান , সিসিলি দ্বীপে থাকতাম । আমার স্বামীর ইচ্ছে ছিল ঘর ভর্তি বাচ্চা । পাঁচটি সন্তানের জন্মও দিয়েছি আমি । ষষ্ঠটি হতে গিয়েই এ অবস্থা হল আমার । দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন তিনি ।

- ষষ্ঠটির জন্য খুব খারাপ লাগছে । বেচারা জানতেই পারবে না , মায়ের চুমু কেমন , আর কেমন ই বা তার কোলের উষ্ণতা ।
জানেন আমি এ ভ্রমণটা করতে চাই নি , উদাসী হয়ে বললেন তিনি ।
একটা রক্তের সাগরে ডুবে যাচ্ছিলাম আমি , সাগর বললে ভুল হবে , সে এক মহাসাগর , এমনকি মাথার উপর যেখানে আকাশ থাকার কথা ছিল সেখানটা ছিল ফাঁকা ।
আমি অনেকক্ষণ সাঁতরেছি, তার পর একসময় ডুবে গেছি , ডুবে ডুবেই শেষ হল নোনতা স্বাদের এক যাত্রা ।
কিন্তু সব বাবা মাই কি আপনার মত হয় ? অনেক দূরে থেকে বলে উঠল সবচেয়ে কম বয়স্ক মৃত ছেলেটি । বড় জোর ১৫ বছর পৃথিবীকে দেখেছে সে ।
মুখটা নীল হয়ে আছে । ওকে সবার থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে । আত্মহত্যা করেছে বলে হয়ত ।

- তুমি বাছা এত অল্প বয়সে এখানে এলে কেন ? দার্শনিকের মত চেহারার উসকোখুসকো চুলের লোকটা বলে উঠলো ।
- আমার বাবা মা বিশেষ করে আমার মা যদি আমার মনটা একবারও বোঝার চেষ্টা করত , তাহলে আর আমাকে বিষ খেতে হত না । ছেলেটা ডুকরে কেঁদে উঠলো ।
- তুমি কি কারো প্রেম এ পড়েছিলে ? পেট কাটা মহিলা জিজ্ঞেস করলেন ।
- না , আমি থাকতাম ভারতের হায়দ্রাবাদে , একটা মোটর বাইকের খুব স্বপ্ন ছিল আমার । প্রথমে অনুনয় বিনয় করে বলেছি , শোনেনি , পরে খাবার বন্ধ করে দিয়েছিলাম বলে বাবা কি মারটাই না মারলেন । আর সেদিন রাতেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এখানে আসার । দরজা বন্ধ করে বিষ খেয়েছিলাম আমি ।

- আচ্ছা বিষ খাওয়ার পর কেমন লেগেছিল ? দার্শনিকটা জানতে চাইল ।
- মনে করুন একটা ঢালাই মেশিন আপনার পেটের মধ্যে চালিয়ে দেওয়া হলে সেটা যদি আপনার পেটের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলোকে ঢালাই করতে থাকলে কেমন লাগবে আপনার ?
- আর আপনাকে দেখে ত বেশ সুস্থ মনে হচ্ছে , আপনি কিভাবে এলেন ? দার্শনিকটার মত লোকটাকে জিজ্ঞেস করল সে ।

- আমি ? আমার হৃদ-যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল । আমেরিকায় বাস ছিল আমার। সারা জীবনের সঞ্চয় শেয়ার মার্কেটে রাখলাম । একদিন গ্রাফটা গেল নিচে নেমে , তার পর নামতেই থাকলো । আর আমার হতচ্ছাড়া হৃদপিণ্ড টাও আর কাজ করবে না বলে জানান দিল ।
হটাৎ করে আমি যেন রোলার কোস্টারে উঠে গেলাম আর সেই কোস্টার যেন খাড়া আমাকে নিয়ে নিচে নামতেই থাকলো । তীব্র গতি আর পড়ে যাওয়ার ভয় দুইয়ে মিলে সমাপ্ত হল দীর্ঘ যাত্রা ।

- আমারা সবাই ত যাত্রার কথা বললাম আপনি ত একা কিছুই বললেন না , আমি আমাদের মাঝের সবচেয়ে বয়ঃ বৃদ্ধকে জিজ্ঞেস করলাম । ভ্রু ও কানের পক্ক কেশ তার দীর্ঘ বয়সের ইঙ্গিত দিচ্ছিল ।
তিনি শুধু একটু মিচকি হাসলেন । অন্য কোন দিন হয়ত বলা যাবে ।
একটা ঘণ্টাধ্বনির মত শব্দ শুনলাম, আমাদের সবাইকে প্রাথমিক মৃত রেজিট্রেশনের স্তরে নেওয়া হবে , এখানে সব কিছু খুব নিয়ম মেনে হয় ।

আমরা আবার যাত্রা শুরু করলাম । আমাদের আগের জায়গায় নতুন মৃতরা আসতে শুরু করলো । মৃত্যু যাত্রায় তাদের অনুভূতি নিয়ে ।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×