somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টুটুর ডায়েরীর একটা পাতা থেকে....

১৪ ই জুন, ২০১০ রাত ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার না, একটা অসুখ আছে!
আমি এ অসুখ সাথে নিয়ে জন্মাইনি, কিন্তু আমার জন্মের সাথে কোথায় যেন একটা সম্পর্ক আছে এই অসুখের! অসুখটা খুবই গোপন, তবুও এই অসুখ নিয়ে আমি অসুখী না, কিছুটা অবশ্য অস্থির!

আমার অসুখটা দেখা দেয় যখন আমার বয়স সতেরো। এখন আমি সাতাশ। দশ বছর ধরে এরকম একটা অসুখ পুষে রেখে আমি মোটেও দূর্বল হয়ে পড়িনি, বরং এখন আমি আগের চেয়েও অনেক বেশি সুস্থ্য! আমার অসুখের মতো অসুখ নাকি আরো অনেকেরই আছে, আমি বইয়ে পড়েছি, পত্রিকায় পড়েছি। আমার অসুখটা বলতে গেলে, অন্যদের তুলনায় খুব কমই তীব্র।

আমার খুব কলিজা খেতে ভালো লাগে! খুব মানে খুউউউব! গরু, ছাগল, মুরগীর কলিজা না! আমার ভালো লাগে, সেই সব মেয়ের কলিজা... যাদের চিবুকে তিল আছে! এই আমার অসুখ! এমনিতে আমার আর কোন সমস্যা নেই, সারা বছর কলিজা খাওয়ার জন্য অস্থিরও হয়ে থাকি না! শুধু... যখনি দেখি কোন মেয়ের চিবুকে তিল আমি অস্থির হয়ে যাই! আমার সারা শরীরে একটা শীতল তরল খুব দ্রুত ছুটাছুটি করতে থাকে, আমি এক মুহূর্তও শান্তি পাই না এরপর যতক্ষন না চিবুকে তিল মেয়েটার কলিজা আমি খেয়ে ফেলি! এমনিতে আমার রান্না খুব ভালো! কলিজার আইটেমটা আমার স্পেশালিটি! এপর্যন্ত আমি একজনকেই শুধু খেতে দিয়েছিলাম, জাভেদ আঙ্কেল কে! উনি বলেছেন, এতো ভালো রান্না উনি খুব কমই খেয়েছেন!

অসুখটা প্রথম দেখা দেয় যে বছর কলেজ থেকে পিকনিকে আমরা পাহাড় পুর গেলাম... আসলে যাচ্ছিলাম। পৌছাতে আর পারিনি। মাঝপথে বাস এক্সিডেন্ট করে, অনেকেই আহত হয়। সেই অবস্থায় আর যাই হোক, পিকনিক সম্ভব না!

আমরা ফিরে আসি। আমি বাসায় চলে যাই। বাবা শহরের বাইরে, মা এসময় অফিসে থাকে। তাই আমি চাবি দিয়ে দরজা খুলেই আবিষ্কার করি, বাসাটা অত ফাঁকা না, যতটা এসময় থাকার কথা। মা'র গলার আওয়াজ শুনতে পাই, মা আমাকে শুনতে পায়নি! মা ফোনে কথা বলছিলো মশগুল হয়ে...
"জাভেদ, আর কত দেরী করবা? সেই দুপুর থেকে বসে আছি অফিস ফাঁকি দিয়ে, আর কত দেরী?.... না, টুটুর আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে, টেনশান নাই!.... টুটুর বাপতো আসতে আসতে রাত হয়ে যাবে... হুমমম, জলদি আসো না!"

আমি কিছুক্ষনের জন্য পুরাপুরি ব্ল্যাংক হয়ে যাই! বুঝে পাই না কি করবো? মাকে ডাক দিতেও অস্বস্তি লাগছে, মা যদি লজ্জ্বা পায়? মা, মানে জাভেদের প্রেমিকা.... আমার বাবা, মানে টুটুর বাপ.... আর আমি টুটু মিলে একটা পারফেক্ট ফ্যামিলি, তাই আমি জেনে এসেছি এতোদিন ধরে! আমি কিছু বলতে পারি না, শুধু একটু ফুঁপিয়ে উঠি! মা পেছনে ঘুরে আমাকে দেখে থতমত খেয়ে যায়! কিছু বলতে পারে না, হাত থেকে ফোনের রিসিভারটা নামাতেও ভুলে যায়! আমি মা'র সামনে এসে বসি, তার হাত থেকে রিসিভারটা তুলে নিই। মাকে বলি, "আমাদের একটা পারফেক্ট ফ্যামিলি ছিলো!" মা কিছু বলতে চায়, পারে না... কারন, আমি রিসিভারের তীব্র আঘাতে তার ছোট্ট মাথার খুলিটাকে থেতলে দিই! আমার মা খুব নরম আর চুপচাপ, সবাই বলতো আমি নাকি একদম আমার মায়ের মতো হয়েছি!

মা'র লাশের দিকে অনেকক্ষন ধরে তাকিয়ে থাকি... আর ভাবি, কি করা যায়? তখন মনে পড়ে যায়, কিছুদিন আগেই একটা হরর মুভিতে দেখেছিলাম, কিভাবে একটা পিশাচ কচকচ করে কলিজা খায়! আমি দ্রুত রান্নাঘর থেকে মাংস কাটার ছুরি নিয়ে আসি। বায়োলজি ক্লাসের ব্যাং কাটার জ্ঞান নিয়ে মাকে কেটে ফেলি, মা'র কলিজা টা বের করে আনি।বাবার আসতে আরো দেরী, কিন্তু জাভেদ আঙ্কেল যেকোন সময় চলে আসবে...
আমি আর জাভেদ আঙ্কেল একসাথে ডিনার করি। উনি এসে মাকে না দেখে খুব অবাক হয়েছিলো। আরো অবাক হয়েছিলো আমাকে দেখে! আমি বলি, মাকে আমি দেখিনি। মায়ের তো এসময় অফিসে থাকার কথা!

পরদিন আমার জন্মদিন ছিলো! সেইবারই প্রথম আমার জন্মদিন সেলিব্রেট করা হয়নি, এরপর আর কখনোই হয়নি! বাবা মাকে হারিয়ে এতোটাই শকড হয়ে গিয়েছিলো, যে আর কখনোই কথা বলতে পারেনি! মাকেও আর কেও খুঁজে পায়নি! মায়ের অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগের দিন দুপুরে সে ছুটি নিয়ে চলে গিয়েছিলো! আর কখনোই খুঁজে পাওয়া যায়নি! মাকে আমি লুকিয়ে রেখেছিলাম আমারই ঘরের পেছনের আম গাছটার নিচে। কেও কেন জানি, খুঁজেই পেল না! এখনো ঐ গাছের আম খেতে মায়ের মতো লাগে! আমার মা! যার ছোট্ট মুখের পাতলা চিবুকে ছিলো একটা ছোট্ট তিল!

(টুটু কখনোই জানতে পারেনি, মা, বাবা আর জাভেদ আঙ্কেল মিলে আসলে টুটুর জন্মদিনের সারপ্রাইজ পার্টির প্ল্যান করেছিলো, আর জাভেদ আঙ্কেলের সাথে মা'র শপিং এ যাওয়ার কথা ছিলো, টুটুর জন্য কেনাকাটা করতে! টুটু কখনো এটাও জানতে পারেনি যে, ওদের ফ্যামিলিটা আসলেই পারফেক্ট ছিলো!)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১১ রাত ১১:০৯
১৫টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×