somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একলামীর দিন-রাত-সন্ধ্যা-বিকাল!

১৫ ই অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গলার ভেতরে একটা মরুভুমির জন্ম নিয়ে ঘুম ভাঙ্গে মুনাজের। মুনাজ চোখ না খুলেই, পাশ না ফিরেই টের পায়, সে নাই যার থাকার কথা ছিলো, মৌমী চলে গেছে... মুনাজের গলার শুষ্কতা নামতে থাকে আরো গভীরে, আর তখনই মুনাজের মাথায় প্রশ্নটা আসে...
'মৌমীর বয়স কত ছিলো?'
মৌমীকে কখনো জিজ্ঞাসা করা হয় নাই, দরকারও পড়ে নাই...
মৌমীর প্রত্যাশিত চলে যাওয়ার সাথে একটা অপ্রত্যাশিত চিঠিও আবিষ্কার করে মুনাজ...

মুনাজ,
আমি চলে গেলাম। আপনি হয়তো জানেন না, কিন্তু আপনার সমস্যা আছে।
অথবা, আপনি নিজেই একটা জন্মগত সমস্যার নাম। সব সমস্যাই সমাধান থাকে, কিন্তু আপনার কোন সমাধান নাই।
এখন আর আপনার প্রতি আমার কোন অভিযোগ ও নাই, কখনো অভিযোগের অভ্যাসও আমাদের ছিলো না।
ভালো থাকবেন, আমি জানি, আপনি ভালোই থাকবেন।
তিন বছর দীর্ঘ সময়... যেকোন ভুলকে টেনে নেয়ার জন্য। আর না টানতে চেয়েই আমার এই চলে যাওয়া।

মুনাজকে চিঠিটা বিষ্মিত করে। এতটা গভীরতা মৌমীর সাথে উঠতে, বসতে, শুতে, খেতে, ঘুমাতে কখনো টের পায়নি। কিছুটা আকস্মিক আকর্ষনও টের পায় নিজের ভেতরে, যদিও তারচেয়ে মরুভূমির উপস্থিতিই বেশি স্বচ্ছ...

মুনাজের শব্দ ভালো লাগে না, সূর ভালো লাগে না, রং ভালো লাগে না, মানুষ ভালো লাগে না। মুনাজের শুধু নিজেকে ভালো লাগে। আয়নায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখতে ভালো লাগে!

একদিন শহরে রোদের বন্যা হয়েছিলো। সবাই ভেসে গেছিলো সেই বন্যায়...
মুনাজের সেদিন জ্বর ছিলো, সে জ্বরের ঘোরে কাঁপতে কাঁপতে আয়নায় নগ্ন নিজেকে দেখছিলো, আর তখনই কলিংবেল বাজিয়ে মৌমী ওর জীবনে আসে। মৌমী জানায় তারা প্রতিবেশী, আর তার ঘরের সব মানুষ রোদের বন্যায় ঝলসে গেছে। শুধু সেই বেঁচে আছে... মুনাজ চেনে তা তাকে, তাই প্রমান হিসাবে মৌমী তার শরীরের কিছু পোড়া দাগ আর তার ভোটার আইডি দেখায়। এরপর তারা এক সাথে থাকতে শুরু করে। এছাড়া উপায়ও ছিলো না। কারন, মুনাজের বাড়ীতে একটাই ঘর, একটাই জানালা ও একটাই দরজা...

একসময় তাদের মধ্যে ভালোবাসা বাসি হয় প্রচুর পরিমানে। তারা আনন্দিত হয়, আর পরিচিত হয়। এভাবে অনেকদিন যায়, এবং শহরে একটা মাঝারী মাপের সুনামী হয়। সেইদিনও মুনাজের জ্বর ছিলো। সে নগ্ন নিজেকে আয়নার সামনে বসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলো... মৌমী ঘরের একমাত্র জানালার ধারে বসে দেখছিল সুনামীতে ভেসে আসা ও যাওয়া মানুষদের। নগ্ন মুনাজ এখন আর মৌমীকে টানে না...

হঠাৎ ই সে দেখে প্রদীপকে... ভেসে যেতে। প্রদীপকে মৌমী দেখেছিলো অনেক বছর আগে, একটা দ্বীপে, পিকনিকে গিয়ে। প্রদীপকে দেখে মৌমী উত্তেজিত হয়, তাকে ডাকে। প্রদীপ জানায়, সে সাতার জানে না না... তাই ভেসে যাওয়াই তার নিয়তি। মৌমীও চায় প্রদীপের সাথে ভেসে যেতে, কিন্তু পারে না, কারন, তার সুইমিং কস্টিউমটা পুরানো মডেলের। এখন আর এই ডিজাইন কেও পড়ে না... তাই সে প্রদীপকে জানায়, যদি সে কথা দেয় আগের ঠিকানায় থাকবে তাহলে সে বাসা বদলাবে... প্রদীপ কথা দেয়!

মুনাজ জ্বরের ঘোরে এইসব ভাসা ভাসা কথা শুনে বোঝে, মৌমীর আর এই একঘরের জীবন ভালো লাগে না। কিন্তু মুনাজ কি করবে? তার শব্দ ভালো লাগে না, সূর ভালো লাগে না, রং ভালো লাগে না, মানুষ ভালো লাগে না, শুধু নিজেকে ভালো লাগে। আয়নায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখতে ভালো লাগে!

মুনাজ মরুগলায় ভাবে, তার সমস্যাটা কি? নিজেকে আয়নায় দেখা? না বিশেষ দিনগুলাতে জ্বরে পড়া? তার গলায় এই মরুভূমির জন্মের কারনও সে খুঁজে পায় না... শুধু কেমন একটা আজব ধরনের মায়া বুকের মধ্যে চিনচিন করতে থাকে মৌমীর জন্য... আবারও নিজের একলা ঘরে থাকতে পারার একলামীটাও কি ভীষন ভালোলাগার মতো ঘিরে ধরে তাকে!!

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১১ রাত ১১:০৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×