আমাদের দেশে নারীরা এখন স্বাবলম্ভি, তারা প্লেন চালায়, ট্রেন চালায়, দেশ ও চালায়। সংসার ধর্ম পালন করা থেকে শুরূ করে তারা সব কিছু সামলায়। তারপর ও তারা ঘরে ঘরে নিগৃহীত হয়। কেউ জানতেও পারে না তারা অপমানিত হচ্ছে, তাদের আঘাত করা হচ্ছে। তারা কাউকে জানতে দেয় না। কারন তারা বাঙ্গালি নারী। আমরা অনেকেই পত্রিকার পাতায় বা টিভি নিউজে মেয়েদের উপর নির্যতনের খবর দেখে ভর্ৎসনা করি, মনে মনে আফসোস করি, মুখে নারী জাগোরনের কথা বলি, কিন্তু এখনো এই শিক্ষিত সমাজে অনেক মানুষরূপি পশু বাস করে যারা মেয়েদেরকে নানা ভাবে নির্যতন করে আসছে, চাই সে মানসিক হোক বা শারীরিক। কয়টা সংবাদ আমাদের নজরে আসে, আর কয়টা আমরা জানতে পারি। ঐ মেয়েটাই হয়তো তার নিয়তির কাছে সময় চেয়ে নেয়। হয়তো সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে, সময়ের সাথে সব কিছু বদলে যাবে। এমন ভাবে দিন চলে যায়, মাস চলে যায়, বছরও কেটে যায়। মেয়েটার আর সমাজের কাছে বলা হয় না। জীবনাবসান পর্যন্ত সে বুঝে উঠতে পারে না তার আসলে আরো অনেক আগেই মুখ বুঝে থাকা নয়, প্রাণ খুলে কথা বলার দরকার ছিল। তাহলে আজ আমাদের রোমানা মনজুরের কাহিণী শুনতে হতো না, বা অন্যকোন শিক্ষিত পরিবারের মেয়েদের অকালে প্রাণ বলি দিতে হতো না।
শারমিন তার বাবা-মায়ের শেষ সন্তান। বয়স ত্রিশ হয়েছে। তিন বোন আর এক ভাইয়ের সে আদরের হবে এমনটাই স্বাভাবিক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিজের স্বাধীনতা, অধিকার আর নিজস্ব আয় এ স্ববলম্ভী হওয়ার অপরাধে তার মায়ের পেটের ভাই তাকে নিষ্ঠুর ভাবে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করেছে। এখন সে মহাখালির আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন । শারমিনের বাবা-মা এখনো জীবিত কিন্তু তারা অসুস্থ, তাদের সামনেই তার মেয়েকে এমন নির্দয় আর পশুর মত মেরে জখম করেছে। প্রথম বার তাকে আহত করার পর সে ক্ষোভে ১০টি ঘুমের অসুধ খেয়ে নেয়, এর ফলে তার সেই জানোয়ার রুপি ভাই তাকে অচেতন অবস্থাতেই বিছানা থেকে টেনে হিচরে বাথরুমে নিয়ে যায়, সেখানে ফেলে তাকে ইচ্ছা মত পা দিয়ে লাথি মারে, মোটা লাঠি দিয়ে পেটায় তারপর চুলের মুঠি ধরে বালতির পানিতে চুবিয়ে ধরে, দেয়ালের সাথে মাথা ঠোকায়, এমনকি বাথরুমের কমডেও তার মাথা ঢুকিয়ে অমানুসিক এবং বর্বরোচিত ভাবে তাকে আহত করে এবং এ সবই হয় তার বৃদ্ধ মা-বাবার সামনেই। তার মা ছেলের পা জড়িয়ে ধরলে তাকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে ঐ নরপিচাশের একটুও লাগে নি। শারমিন যখন তার স্বম্ভিত ফিরে পায় তখন সে অনুভব করে তার শরীরের অস্তিমজ্জায় আর কিছু অবশিষ্ট নেই, সব কিছু ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। কোথাও হাত দেওয়া যাচ্ছে না। ব্যথায় কাতরে উঠে সে। এতকিছুর পরও সেই নরপশু তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দিচ্ছে না, বার বার হুমকি দিচ্ছে চলে আসার জন্য এবং শারমিন কে যারা সাহায্য করছে তাদেরও সেই নরপশু দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। আর এমন ঘটনা একদিন হয়নি শারমিনের সাথে, বার বার হয়েছে এবং অনেক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও হয়েছে। সব কিছু সবাই মুখ বুজে সহ্য করেছে আপন ভাই বলে। কিন্তু আর কত, এই যুগে এমন শিক্ষিত সমাজে এই অত্যাচার আর কত দিন একজন নারী সহ্য করবে। প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ওার পর তার কি অধিকার নেই নিজের মত বাচঁতে, নিজের মত তার জীবনকে গুছিয়ে নিতে? তার কি অপরাধ চাকরি করতে চাওয়া, নিজের মত করে জীবনটাকে সাজিয়ে নেওয়ার, কারো সাথে একটা সুখের স্বপ্ন দেখার। আমাদের এ সমাজ কি তাকে সে সুযোগ দেবে না, বার বার সে কি এভাবে অবদমিত হবে, শারমিন কি মাথা তুলে তার অধিকার আদায় করতে পারবে না?
হ্যা, শারমিন পারবে, আইনি সহায়তা নিবে, তার অধিকার আদায় করে নিবে, কিন্তু তার পাশে দাড়াবার মত কেউ নেই, প্রতিনিয়ত সে জীবনের হুমকি নিয়ে রাত কাটাচ্ছে আর কাতরাচ্ছে। আমাদের সমাজ কি শারমিনের জন্য কিছু বলবে না? নিরবে কি সবাই সবকিছু সহে যাবে। প্রতিবাদ করার জন্য কি ওর পাশে কেই এগিয়ে আসবে না? বিবেকবান সমাজের কাছে শারমিন জানতে চায়?