কয়েকদিন আগে এক প্রকান্ড বড়লোকের ছেলের বিবাহ পরবর্তি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। বাড়িতে ঢুকেই আমার চক্ষুচড়কগাছ। বাড়ির আয়তন ১ বিঘা। ঢাকা থেকে কিছুটা দূরে, এত সুন্দর করে সাজান হয়েছে বাড়ীটা যে ঢুকেই মাথা ঘুরে গেল।
যেতে যেতেই আমাদের প্রায় রাত ১০টা বেজে গেল। আমি এক বড় ভাইয়ের সৌজন্যে সেখানে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। তো সেখানে ঢুকেই আলোর ঝলকানিতে প্রথমে মনে হল এ আমি কোথায় এসে পড়লাম, দেশে নাকি বিদেশে। যাই হোক বাসার ভেতরে গিয়ে প্রথমে বসলাম, বাসাতো নয় যেন রাজমহল। মখমল আর মারবেল, ইসপাত আর সিরামিক. . . .
ধরা যাক এক কথায় দামি জিনিস দিয়ে যা করা যায়। আমার এখন পল্লীকবি জসীমউদ্ দীনের আসমানী কবিতাটার কথা অনেক মনে পড়ছে।
"আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও
রহিমদ্দীর ছোট্ট বাড়ি রসূলপুর এ যাও।
বাড়ি ত নয় পাখির বাসা -ভেন্না পাতার ছানি,
একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।
একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,
তারির তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে। "
আমাদের দেশে আসমানীরা আগেও ছিল এখনও আছে আর বড়লোকরাও ছিল এখনোও আছে।
ঐ বাসায় রাত ১০টায় আমাদেরকে নাস্তা দেওয়া হলো। গল্প শুনছিলাম এই বিয়েতে মোট ২৫ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। বউ এর জন্য ডায়মন্ড এসেছে ইংল্যান্ড থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের । ইন্ডিয়া, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর থেকে অন্যসব শপিং করা হয়েছে। এমনকি বিয়ের দাওয়াত পএটি ছাপানো হয়েছে দিল্লী থেকে, যার দাম পড়েছে প্রতিটি ৩৫০০টাকা করে। দাওয়াত পত্রটি সাজিয়ে রাখার মত একটা জিনিসই বটে। দুটো দামি বাক্স তার মধ্যে কত্ত কারুকাজ। সেই অনুষ্ঠানে গান গাইতে এসেছিল আমাদের জনপ্রিয় ব্যান্ড সোলস্। তারা কোথাও পারফর্ম করতে কত টাকা নেয় একটু অনুমান করুন। আরো খরচের হিসাবের কথা ত বাদই দিলাম। আর সেদিনের অনুষ্ঠানটি ছিল বিবাহ এর পর বৗভাত এর আগের দিনের আয়োজন। এমন করে ১৫দিন ধরে এমন আয়োজন প্রতিদিনই চলবে। সেদিন লটারির ব্যবস্থা ছিল। আর পুরস্কার হিসেবে ছিল টিভি, ফ্রিজ, ব্যংকক এর এয়ার টিকেট সহ আরো অনেক মূল্যবান আকর্ষনীয় সামগ্রি। রাত বাড়ে আমাদেরও ক্ষুধা লাগে, কিন্তু খাবার আসে না। এখন সবে মাএ সন্ধ্যে হল। রাত এখনো অনেক বাকি। বাড়ির সুইমিং পুলটা সুস্দর করে সাজানো। পুলের উপর অটো ঢাকনা লাগানো হয়েছে বিদেশ থেকে এনে। সেই অনুষ্ঠানে আরবি গানের অনেক আধিক্ক লক্ষ্য করলাম।
এত কিছু করে বিয়ে শাদিতে এত খরচা করে যাচ্ছে ছেলেটির পরিবার। মাশাআল্লাহ তাদের আনেক আছে কিন্তু ছেলেটি কি জানে যে তার বাসার আশে পাশে আধপেট খেয়ে থাকা মানুষের সংখ্যা কত হতে পারে। একজন মন্তব্য করছিল এদের টাকা মানুষের রক্ত চোষা টাকা, আমাদের শ্রমিকদের ন্যার্য মজুরি না দিয়ে এসব টাকা তাদের কাছে আসে।
একজন মানুষের কত টাকা হলে সে নিজেকে সংযত রাখবে। টাকা তাদের কাছে গাছের পাতার মত। অনেক ধরে আছে, শুধু পেড়ে নিয়ে আয়। আমাদের দেশে শ্রমিকরা মজুরি পায় না, কৃষকেরা মূল্য পায় না, রাস্তায় মানুষ ফুটপাত পায় না, ভেজাল মুক্ত খাবার পায় না, বাচার জন্য পানি পায় না, চিকিৎসা পায় না। আমাদের দেশে এত কিছুর অভাব থাকা সত্তেও কিছু মহল অনেক বিলাসিতায় জীবন কাটায়। এই টাকাগুলো দিয়ে কত মনুষের কত স্বপ্ন পূরণ হতো! কত মানুষের মুখে হাসি ফুটান যেত।