ঈদের আগে সবা্রই টাকার দরকার, চাই সে ফকিরেরই হোক কিংবা মস্ত বড়লোকের। আমাদের মত ছাপসাদের যে দরকার নেই তা নয়। ফকির খুজে মনুষের দুয়ারে, কেরানি খোজে বসের দুয়ারে, দোকানি খোজে সদাই বেচে আর ছিনতাইকারি খোজে!!!!!-ছিনতাইকারি খুজবে কেন, ওরা ত ছিনাইয়া নিবে।
যার থেকে যা পাবে তা নিবে। কাল রাতে তাই তো দেখলাম নিজ চোখে, এবং জীবনে এই প্রথমবারের মত। এতদিন মানুষের কাছে শুধূ কহিনী শুনে আসছিলাম। আজ নিজেই ভিকটিম হয়ে গেলাম।
রাত তখন ১২টা বাজে, আমাকে এক ভাই মটরসাইকেল এ শাহবাগ নামিয়ে দিল। ৩নম্বর এর জন্য দাড়িয়ে আছি, আশেপাশে লোকজন বলল তারা অনেক্ষন
থেকে অপেক্ষা করছে বাসের জন্য। এর মধ্যেই একটা মাইক্রোবাস এয়ারপোর্ট যাওয়ার জন্য ঢাকতে থাকলো, অমনি লোকজন হুরমুড়িয়ে তাতে উঠে গেল। আমিও আর বেশি কিছু চিন্তা করলাম না, কারন এমন অনেকদিনই এই কাজটা করেছি। আমার এক ভাই বারণ করেছিল এসব গাড়িতে যেন না উঠি। তারপরও বীর দর্পে আমার জান নাইকন টাকে নিয়ে কতবার উঠে গেছি। তারপর গাড়ি চলা শূরু করলো। এরপরের ঘটনা শুনলে আপনারা ভয় পেতে পারেন।
গাড়িটা বেশ বড়সড়ই, এর মধ্যে তিন ধাপে সিট সাঝানো। আমি জায়গা পেয়ছিলাম সবার পেছনে একদম কোনার ডান দিকে। গাড়ি যথারিতী চলতে শুরূ করলো আর একটা লোক বক বক করতে আরম্ভ করলো্। চারটা ছেলে শপিং ব্যাগ সমেত উঠেছে, হাতে টাকা পয়সা দেখে আঁচ করা যায়। বাহারি মোবাইলেও সমাদৃত। পট পট করেই যাচ্ছে অন্য বাঁচালটার সাথে। বলে ভয় পাইয়েন না ভাই এয়ারপোর্ট নামিয়ে দিলে আমরা পৌছায়া দিব। ছোকরারা বলছে -আরে ভাই আমরা কাওলার পোলা কিসের ভয়, আমরা ভয় পাই না। আমি শুধূ চুপ করে শুনছিলাম আর বিরক্ত হচ্ছিলাম। গাড়িতে উঠে সাধারনত দোয়াদূরুদ পড়ি তাই করছিলাম। এর মধ্যে আমার বন্ধু ফোন দিল যে সে বনানীর দিকে আছে। আমার আবস্থান জানলো তখন গাড়ি ফ্লাইওভার এর উপর থেকে নেমেছে মাএ। আমি তাকে বললাম এখন আর নামবো না তুই খিলক্ষেত এ দাড়া আমি এসে দেখা করছি। বনানী পার হয়ে বিশ্বরোড এর কাছে আসা মাত্রই একটা লোক সামনের সিট খেকে খান....পোলা বলে পেছনের সিট এ আসতেছে, পরে দেখি আরো ৩/৪ জন লোক তার সাথে সূর মেলাল। আমি এক মিনিট থ হয়ে থাকলাম, জীবনে ত এমন আজিব জিনিসের মুখোমুখি হই নাই। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। আমি যেহেতু পছেনের সিট এ ছিলাম আমার কাছ পর্যন্ত আসতে তার একটু সময় লাগবে। এর মধ্যে "আমরা কাওলার পোলা" এর একটারে চড় থাপ্পড়, খিল ঘুসি মারা শুরু করে দিছে। আর গালাগাল ত চলছেই। আমি এমন worst case scenario তে একদম মাথাটা ঠান্ডা রাখলাম। আর আল্লাহতাআলা কে ডা্কতে লাগলাম। আমার কাছে মোবাইল ছিল দুইটা। এর একটা সাথে সাথে বন্ধ করে কোমরে গুজে ফেললাম। আমার কাছে তেমন কোন টাকা-পয়সাও ছিল না। আমি আরেকটা মোবাইল আর মানিব্যাগ হাতে রাখলাম। কারন মো্বাইল এখন গরূ-গাধার কাছেও থাকে। এখন একটা্ও না পেলে মাইর শুরূ করবে। যারা একটু উচ্চু-বাচ্চ করেছে তাদেরই মারধর করছিল। তবে তাদের হাতে কিছু দেখিনি। শূধূ বলছিল যা আছে দিয়ে দিন আপনাদের কিছু করবো না, আমরা শুধূ টাকা আর মোবাইল নিব। অনেকে সিম কার্ডটি ফেরত দেওয়ার জন্য কাকুতি মিনতি করছিল। তারাই উত্তর দিল নামার সময় সিম কার্ড ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে।
আমার কাছে এসে খুব ভাল করে সার্চ করলো, বললাম আমি ছা্এ, আমি শপিং করি নাই, আমার কাছে আর কিছু নাই। আমার মানিব্যগ এ দান করার জন্য ভাংতি কিছু টাকা ছিল, আমি বললাম এগুলো আল্লাহর অয়াস্তে দেয়ার জন্য, বেটা বলে আপনার ভাংতি পয়সা নিমু না। তন্যতন্য করে মানিব্যগ হাতালো, ছোট একটা ব্যাগ ছিল সব কিছু দেখলো। আমি একদম চেষ্টা করেছি বিচলিত না হবার জন্য। কারন এসব পরিস্থিতিতে আপনি যত পেনিক হবেন তত তারা চান্চ নিবে। যাদের কাছে শপিং এর ব্যগ ছিল তা্ও ভাল করে ঘেটে দেখলো। গাড়ি কিন্তু আমাদের নিয়ে এর মধ্যে উত্তরা হয়ে বনানী হয়ে কয়েকবার চক্কর দেওয়া শেষ। আমাদের তল্লাসি শেষে সবার সব কিছু নেওয়ার পর গাড়ি থামলো নেভি হেড কোয়াটারের একটু আগে অন্ধকার জায়গাটেতে। রাস্তায় পুলিশ টহল দিচ্ছে, তারা এসবে তোয়াক্কা করে না। একটা পুলিশের গাড়ি সেখান দিয়ে যাচ্ছিল, অন্যরা সেটা থামালো আমি অন্য একটা বাস ধরে খিলক্ষেত খানায় ইনফরম করলাম, জানি কোন কাজ হবে না, তারপরও দায়িত্ত পালন করলাম যদি একটু তোড়জোড় করে অন্যরা হয়তো বাচতে পারবে। এভাবে কিন্তু প্রতিদিনই হচ্ছে বিশেষ করে ঈদের এই সময়টাতে। সুতরাং সাবধান।
কিছু উপদেশবানী-
১. এসব পরিস্থিতিতে কখনো হিরোগিরি দেখাতে যাবেন না। জিনিসের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।
২. নেভার এভার অনেক কষ্ট হলেও এমন অপরিচিত গাড়িতে উঠবেন না।
রাত করে পাবলিক বাস এ চড়ার চেষ্টা করবেন।
৩. রাস্তায় দামি মোবাইল বা দামি জিনিস নিয়ে শো দেখানোর চেষ্টা করবেন না। কারন আমরা তাদের দেখি না তারা আমাদের দেখে।
৪. আনেক টাকা বা দামি জিনিস নিয়ে চলাচল করলে খুব সতর্ক এবং সিমপল ভাবে খাকার চেষ্টা করবেন যেন কেই বুঝতেই না পারে আপনার কাছে কিছু আছে।
৫. ফোন এ আনেক নাম্বার এর পাশাপাশি পুলিশ এর নাম্বার ও যেন থাকে, খানার কর্মকর্তা, র্র্যাব, এমবুলেন্স এবং ইমার্জেন্সি এর নাম্বার খাকা জরূরী।
৬. প্রাইভেট যান এ উঠলে গাড়ির নম্বর টুকে রাখবেন।
৭. ঢাকা শহরের অবস্থা্ অনেক খারাপ তাই আনক সতর্ক থাকতে হবে নাইলে ধরা খাইতে হবে ।