somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ নূর হোসেনের মন ভাল নেই।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নূর হোসেনের দেহটা ২৭ বছরের পুরনো হয়ে গেছে।কিন্তু এতটা বয়সেও সে এতটুকুন বদলায়নি।বরং সে আগের মতই আছে। সেই আগের মতই হালকা পাতলা গড়ন, সেই কোকড়ানো অগুছালো চুল।সেই হাড় মাংসের পেটা শরীর। একটুও বদলায়নি সে। বদলায়নি তাঁর ঝলসানো নীল রঙ্গের জিন্সের প্যান্ট। নষ্ট হয়নাই বুক পিঠে লেখা গনতন্ত্রের পোস্টারটি। এখানেও নূর হোসেনের খটকার মত লাগে। যখন পেটের ঠিক ডান পাশে গুলিটা এসে লাগলো প্রথমে একটা শীতল অনুভূতি টের পেলো সে। তাঁর পর কয়েক সেকেন্ড। খুব যন্ত্রণা হচ্ছিল তাঁর,তবু সে মনে মনে প্রার্থনা করছিল বুকের যে অংশটায় স্বৈরাচার নিপাত যাক লেখাটি আছে সেটা যেন রক্তের দাগে নষ্ট না হয়ে যায়। নূর হোসেন আরো একবার কেঁপে উঠেছিল, তাঁর পিঠের যে অংশে গণতন্ত্র মুক্তিপাক লেখা ছিল রক্তের স্রোত বেয়ে সেদিকেই যাচ্ছে।নূর হোসেনের চোখে তখন পানি জমাট বেধেছে। সে প্রার্থনা করছে কোনো ক্রমেই যেন তাঁর লেখা গুলো নষ্ট না হয়ে যায়।এই লেখাগুলোর উপরেই যেন নির্ভর করছে দেশের গণতন্ত্রের মুক্তি। স্বৈরাচার এক নরপশুর হাত থেকে প্রিয় জন্মভূমির মুক্তির। তাঁর পর নিরবতা। সুনসান- শান্তি শান্তি শান্তি।

মৃত হয়েও নূর হোসেন আজ মৃত নয়।তাঁর বুক পিঠে লেখা আজও সেরকমই আছে যে রকম থাকার কথা ছিল। সেই সাতাশির দশ নভেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত নূর হোসেন এখানেই। এই চত্বরে যেখানে ইট বালু সিমেন্ট দিয়ে তাঁর নাম কেউ লিখে দিয়েছে।তাঁর আশে পাশেই সে ঘুরে বেড়ায় গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, বায়তুল মোকাররমের এ রাস্তা ও রাস্তা। এর মধ্যেই অনেক কিছুই বদলেছে। বদলেছে মানুষ,বদলেছে রাস্তা,বদলেছে আশে পাশের ইট পাথরের ইমারত। কত পুরনো মুখ হারিয়ে গেছে কত নতুন নতুন মুখ এসেছে। আগের থেকে মানুষ এখন অনেক বেশী বেড়েছে।

তাঁর পুরনো ব্যাবিট্যাক্সিটা প্রথম প্রথম এখানে সেখানে দেখা যেত। তাঁর পর আর দেখতে পায়নি। এখনতো ঢাকা শহরে আর ব্যাবিটেক্সি চলে না। তাঁর বদলে এখন এসেছে সিএনজি অটো রিক্সা। কিন্তু নূর হোসেনের কাছে তাঁর বেবি ট্যাক্সিটিকেই ভাল লাগতো। বেবি টেক্সির সেই পেট্রলের পোড়া গন্ধ সেই বট বট বট ইঞ্জিনের বিকট শব্দ। অনেক দূর থেকেই জানান দিত নূর হোসেনের বেবি টেক্সি।

মৃত্যুর ঠিক কিছু মূহুর্ত আগে প্রিয় নেত্রী শেখ হাছিনার সাথে তাঁর দেখা হয়েছিল। নেত্রী তাঁর সামনেই গাড়িটি থামিয়ে ছিলেন। হাত দিয়ে ইশারা করতেই সে সামনে ছুটে যায়। শেখ হাছিনা অনেকটাই শাসনের সুরে বললেন ,– জলদি জামা গায়ে দাও, পুলিশ তো তোমাকে গুলি করবে। উদোম বুকে পিঠে স্লোগান লেখা নূর হোসেন তার প্রিয় নেত্রীকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো। নেত্রীর শাসনে যেন সে নতুন উদ্যোমে প্রচন্ড সাহসী হয়ে উঠলো। প্রিয় নেত্রীর আশির্বাদে নিজেকে গর্বিত অনুভব করলেন। তাঁর পর আবার শ্লোগান দিতে দিতে ছুটে গেলেন উত্তাল জনসমুদ্রের দিকে। তখন কেইবা জানে এই যাওয়াই যে তাঁর জীবনের শেষ যাওয়া।

আজ এত বছর পর নূর হোসেনের মন ভাল নেই। তাঁকে তাঁর যন্ত্রনা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। না পাওয়ার যন্ত্রনা,হতাসার যন্ত্রণা,অপমানের যন্ত্রণা। যে যন্ত্রণা গুলির আঘাতও তাঁকে দিতে পারেনাই। যখন সে দেখে তাঁর প্রিয় নেত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে সেই নরপশুটি নির্জজ্জের মত শুকরের হাসি হাসছে। নিজেকে তখন খুব অপরিচিত মনে হয় নূর হোসেনের। অপরিচিত লাগে প্রিয় নেত্রীকে। বুকে পিঠে লেখা গনতন্ত্রের শ্লোগানগুলো থেকে তখন ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয়ে আসে। ব্যাথায়, যন্ত্রনায় কুঁকড়ে ওঠে নূর হোসেন। যন্ত্রণা, কেবল যন্ত্রণা, কেবল যন্ত্রণা।নূর হোসেন কি কাঁদছে? তাঁর তো কাঁদার কথা ছিলনা! তবে এ কান্না তাঁর কিসের?
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২৮
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×