somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কামরূপ কাহিনী।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেই এক দেশ বটেই কামরূপ কামাখ্যা।যাদু-টোনা, তন্ত্র-মন্ত্র, পাহাড়-পর্বত আর অরণ্যে ঘেরা স্বপ্নীল স্বর্গ।প্রাচীণ রূপ কথা, গল্প,ইতিহাস আর কিছু পৌরাণিক কাহিনীর এক অন্য ভুবন।যদিও এই ঐতিহাসিক রাজ্যের সময়কাল চতুর্থ থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে ছিল কিন্তু বহুপর পর্যন্ত এর উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রাচীন এবং মধ্যযুগে ঐতিহাসিকগণ কামরূপ নামেই এর উল্লেখ করেছেন। কামরূপ রাজ্যের সময়সীমা শেষ হবার পর মুসলিম গ্রন্থসমূহে কামরূহ বা কামরূদ নামে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। কলিকা পুরাণ এবং সুয়ানচাং এর মতে এই রাজ্যের পশ্চিম সীমানায় করতোয়া নদী এবং পূর্বে সাদিয়ার নিকটবর্তী দিক্কারবাসিনী মন্দির ছিল । বর্মণ বংশ, ম্লেচ্ছা বংশ এবং পাল বংশ রাজ্যটি দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত শাসন করে যার পর কিনা খেন বংশ রাজধানী আরো পশ্চিমে সরিয়ে নিয়ে যায় এবং রাজ্যের নামকরণ করে কামাতা রাজ্য। সুতরাং কামরূপ রাজ্যের অস্তিত্ব পাল রাজাদের পতনের সাথেসাথে দ্বাদশ শতাব্দীতেই শেষ হয়ে যায়। এই রাজ্যের নাম আজো আসামের কামরূপ জেলার মধ্য দিয়ে বেঁচে আছে।

ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর এই তিনজন হচ্ছেন সৃষ্টি, স্থিতি এবং ধ্বংসের দেবতা। সৃষ্টির একবারে আদি মুহূর্তে সৃষ্টি কর্তারা যখন জগত তৈরির কাজে ব্যস্ত হলেন। পাগল শিব তখন গভীর ধ্যানে মগ্ন হলেন। ধ্বংসের দেবতা যদি অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নেন তাহলে সৃষ্টি হবে কি করে। ব্রহ্মা, বিষ্ণু পরলেন মহা ফাঁপরে। বিষ্ণুর বুদ্ধিতে ব্রহ্মা নিজের মানসপুত্র দক্ষকে ডেকে পাঠালেন। দক্ষ এলেন ব্রহ্মার কাছে। ব্রহ্মা তাঁকে বললেন, তোমাকে একটা কাজ করতে হবে। দক্ষ পিতৃ আজ্ঞা পালনের জন্য উন্মুখ হয়ে উঠলেন। বলুন পিতা আমাকে কি করতে হবে। ব্রহ্মা তখন বললেন, দেখো দেবাদিদেব মহাদেব মহাযোগে তন্ময় হয়ে আছেন। এইরকম ভাবে চললে সৃষ্টির ব্যাঘাত ঘটবে। ধ্বংস না হলে সৃষ্টি করবো কি করে ? তুমি জগন্মাতার পূজা করো। প্রার্থনা করো তিনি যেন তোমার কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করে শিবের পত্নী হন। পিতৃ আজ্ঞা পালনে দক্ষ তৎপর হয়ে উঠলেন। এবং নিজের কাজে মনোনিবেশ করলেন। দেবী মহামায়া দক্ষের আকুল প্রার্থনায় প্রীত হয়ে আবির্ভূতা হলেন। দক্ষকে এই বর দিলেন আমি তোমার কন্যা রূপে জন্মগ্রহণ করবো এবং শিবকে স্বামীরূপে গ্রহণ করবো। কিন্তু একটা কথা তোমায় মনে রাখতে হবে, যখনই আমার অনাদার হবে আমি দেহত্যাগ করবো। দক্ষ দেবী মহমায়ার কথা মেনে নিলেন। যথা সময়ে মহামায়া দক্ষরাজার পত্নী বীরিণীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করলেন এবং মহাদেবকে বিবাহ করলেন। মহামায়া সতী নাম নিয়ে স্বামীর সঙ্গে চলে এলেন শ্বশুর বাড়ি কৈলাসে। কিছুদিন পর স্বর্গরাজ্যে একটা অনুষ্ঠানে দক্ষরাজ নিমন্ত্রিত হয়ে এলেন। দেবসভা মাঝে পাগল শিব শ্বশুর দক্ষকে পাত্তাই দিলো না। জামাই-এর এরকম অভব্য ব্যবহারে দক্ষ বেশ অপমানিত বোধ করলেন। শিবকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য দক্ষরাজ এক শিব হীন যজ্ঞের আয়োজন করলেন। তাতে দেবর্যি নারদকে ত্রিভুবনের সকলকে আমন্ত্রণের কথা বললেও শিবকে আমন্ত্রণ জানাতে নিষেধ করলেন। যথা সময়ে দক্ষরাজের যজ্ঞ শুরু হলো। নারদের মুখে সতী পিত্রালয়ে যজ্ঞ হচ্ছে শুনে, সেখানে যাওয়ার জন্য উন্মুখ হলেন। স্বামীর অনুমতি নেওয়ার জন্য তাঁর কাছে এলে শিব পাত্তাই দিলেন না। শেষে সতী দশমহাবিদ্যা রূপ দর্শন করালেন। তখন শিব সতীকে পিত্রালয়ে যাওয়ার জন্য অনুমতি দিলেন।

এরপর সতীদেবী পারিষদদের নিয়ে যজ্ঞ স্থলে উপস্থিত হলেন। কিন্তু পিতা দক্ষ সতীকে দেখে গালমন্দ শুরু করলো। কেন সে নিমন্ত্রিত না হয়েও এখানে এসেছে। শিবের গুষ্টির তুষ্টি পূজো করলো। অতো লোকের মাঝে পতিনিন্দা শুনে সতীর মুখ চোখ লাল হয়েগেল। যজ্ঞস্থলেই সতী দেহত্যাগ করলেন। সদাশিব তার দুই চেলা নন্দী- ভিরিঙ্গির মুখে সতীর দেহত্যাগের কথা শুনে খেপে লাল হয়ে গেল।বীরভদ্রাদি অনুচরদের নিয়ে শিব দক্ষের যজ্ঞশালায় উপস্থিত হলেন। সতীর মৃত মুখ দেখে শিব আর স্থির থাকতে পারলেন না। সঙ্গে সঙ্গে অনুচরদের বললেন যজ্ঞ লণ্ড-ভণ্ড করে দাও আর দক্ষকে হত্যা করো।শিবের আজ্ঞা পেয়ে অনুচরেরা সব লণ্ড-ভণ্ড করে দিল। ধর থেকে দক্ষের মথা আলাদা করে দিল। দক্ষরাজের স্ত্রী শিবের শ্বাশুড়ী জামাই-এর কান্ডে হতবাক। স্বামীর মৃত্যুতে শোকাতুর হয়ে উঠলেন। তিনি শিবের কাছে স্বামীর প্রাণভিক্ষা করে স্তব স্তুতি করতে শুরু করে দিলেন। শেষে শিব ছাগলের মুন্ডু কেটে দক্ষের মাথায় বসিয়ে দিয়ে তাকে জীবনদান করলেন। এরপর শিব অনুচরদের কৈলাসে পাঠিয়ে সতীর দেহ নিয়ে ত্রিভুবন দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করলেন। শিবের এই উন্মত্ত আস্ফালনে ত্রিভুবনে প্রলয়কান্ড শুরু হয়েগেল। ব্রহ্মা ভয়ে তটস্থ হয়ে সৃষ্টি রক্ষার তাগিদে বিষ্ণুর কাছে উপস্থিত হলো। যেহেতু উনি এই ধরাধামের পালনকর্তা। সতীর শবদেহ চিন্ময়বস্তু। শিবগাত্র স্পর্শে তার মহিমা হাজার গুণ বেরেগেছে। জগৎপালক বিষ্ণু তখন জগতের মঙ্গলকামনার্থে তাঁর সুদর্শন চক্রের সাহায্যে ধীরে ধীরে একান্ন খন্ডে বিভক্ত করলেন। দেবীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধরাধামের যেখানে যেখানে পরলো সঙ্গে সঙ্গে তা পাথরে পরিণত হলো। সেই সব স্থান পবিত্র মহাপীঠ রূপে প্রসিদ্ধ লাভ করলো। এই একান্নটা মহাপীঠ ছাড়াও ছাব্বিশটা উপপীঠ রয়েছে।

কামরূপে মায়ের মাতৃ যোনি পতিত হয়েছিল।যে স্থানে দেবীর যোনি পতিত হয়েছিল সেই স্থান হচ্ছে তীর্থচূড়ামণি। আগেগার মানুষের মুখে প্রায়শই একটা প্রবাদ প্রচলিত ছিলো- সব তীর্থ বার বার গঙ্গাসাগর একবার। তখনকার সময় সাগরতীর্থে যাওয়াটা ভীষণ বিপদ সঙ্কুল ছিল। বঙ্কিমচন্দ্র এই বিষয়কে নিয়ে সাগরসঙ্গমে লিখেছিলেন । তীর্থচূড়ামনির অর্থ হলো। সব তীর্থের মধ্যে সেরা তীর্থ স্থান। যেখানে সতীর যোনি মন্ডল পতিত হয়েছিল সেই জায়গাটাকে বলে কুব্জিকাপীঠ। কথিত আছে যোনিরূপ যে প্রস্তরখণ্ডে মা কামাক্ষা অবস্থান করছেন, সেই শিলা স্পর্শ করলে মানুষ মুক্তিলাভ করে। এই প্রসঙ্গে কালিকাপুরাণের একটা গল্প ছিলো। কালিকাপুরাণের ছাব্বিশতম অধ্যায়ে কামাক্ষার বর্ণনা রয়েছে। পূর্বে এই পর্বতের উচ্চতা ছিল শতেক যোজন। কিন্তু মহামায়া সতীর যোনি অঙ্গ পতিত হওয়ার পর এই উচ্চ পর্বত মহামায়র যোনি মন্ডলের ভার সহ্যে করতে না পেরে কেঁপে উঠলো এবং ক্রমশঃ পাতালে প্রবেশ করতে লাগলো। তখন শিব, ব্রহ্মা, বিষ্ণু প্রত্যেকে একটা করে শৃঙ্গ ধারন করলেন। তাদের সঙ্গে মহামায়া স্বয়ং সমবেত হলেন। এবং পাতাল প্রবেশ থেকে রক্ষা করলেন এই শৃঙ্গকে। ফলে পর্বতের উচ্চতা একশতো যোজন থেকে এক ক্রোশ উঁচু হয়েগেল। আর মতৃ যোনি পতিত হওয়ার ফলে পর্বতের রং নীল বর্ণ আকার ধারণ করলো। তাই পর্বতের নাম হলো নীলকণ্ঠ পর্বত। অনেকে আবার নীলাচল পর্বতও বলে।

এই মহামায়া নিখিল জগতের প্রকৃতি এবং এই জগতের প্রসব-কারিণী তাই ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর তাকে ধারণ করে রেখেছেন।এদিকে মহাযোগী মহাদেব, স্ত্রী সতী বিরহে পাগল প্রায় অবস্থা। তাঁর মনে মহাবৈরাগ্যের উদয় হলো। তিনি হিমালয়ের দুর্গম স্থানে গিয়ে তপস্যায় নিমগ্ন হলেন। সেই মহাযোগীর ধ্যান ভঙ্গ করে কার সাধ্য। দক্ষযজ্ঞে সতীদেবী প্রাণত্যাগ করার পর গিরিরাজ হিমালয়ের গৃহে মেনকার গর্ভে কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করলেন। শিশু কন্যাকে সকলে গিরিজা, পার্বতী আরও নামে ডাকতে শুরু করলেন। এদিকে পিতামহ ব্রহ্মা তারকসুর নামে অসুররাজের কঠোর তপস্যায় সুপ্রসন্ন হয়ে তাকে বর দিলেন ত্রিভুবন শিবের ঔরাসজাত সন্তান ভিন্ন কেউই তাকে বধ করতে পারবে না। ব্রহ্মার বরে বলীয়ান তারকাসুর ত্রিলোক জয় করে দেবতাদের প্রজা বানিয়ে দিলেন। ইন্দ্র প্রভৃতি দেবগণ ব্রহ্মার শরাণাপন্ন হয়ে তাঁকে সব জানালেন। ব্রহ্মা সব শুনেটুনে বেশ চিন্তিত হয়ে পরলেন। ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর তিনজনে সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয়ের কর্তা একজন এইভাবে উদাসীন হয়ে পরলে সৃষ্টিরক্ষা করা মহা মুস্কিল। তার ওপর তারকাসুরের ঝামেলা। ব্রহ্মা তখন দেবতাদের ডেকে বললেন,সতী দেহত্যাগের পর গিরিরাজের ঔরসে মেনকার গর্ভে স্থান পেয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন। একমাত্র শিব বীর্য হতে উৎপন্ন সন্তান তারকাসুরকে বধ করতে পারবে। সবশুনে-টুনে দেবতারা যেন একটা ক্ষীণ আলোর রেখা দেখতে পেল। প্রথমে শিবের ধ্যান ভঙ্গ করতে হবে, দ্বিতীয় শিবের বিয়ে দিতে হবে। চলো নারদের কাছে। নারদ দেবতাদের কথা শুনে আনন্দে নেচে উঠলেন। চলে গেলেন হিমালয় রাজের কাছে। গিরিরাজ এবং তার স্ত্রী মেনকা সব শুনে মহা খুশী। তার কন্যার সঙ্গে শিবের বিয়ে হবে। এর থেকে সুখবর আর কি আছে।
অনেক খোঁজা খুঁজির পর মহাদেবের দুর্গম যোগসাধনের স্থান খুঁজে বার করা হলো। গিরিরাজ হিমালয় এবং তাঁর স্ত্রী মেনকা দেখে এলেন শিবের সেই সাধনের স্থান। তাঁর রাজপ্রসাদ থেকে সেটা খুব একটা দূরে নয়।দেবর্ষি নারদের কথা মতো তিনি পার্বতীকে পাঠালেন মহাদেবের পূজা আর সেবা করার জন্য। পার্বতীও মহা আনন্দে সখীদের নিয়ে প্রত্যহ শিবের পূজা শুরু করলেন। সতীর মুখের ছায়া পার্বতীর মুখ মন্ডলে।

একবার শিবের ধ্যানভঙ্গ হলে তিনি যদি পার্বতীকে দেখেন তাহলে পার্বতীকে পাওয়ার জন্য তিনি উদগ্রীব হয়ে উঠবেন। মহাদেব নিজেই গিরিরাজের কাছে বিবাহের প্রস্তাব পাঠাবেন। কিন্তু মহাযোগী শিব একদিনও পার্বতীর উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন না। ব্রহ্মা বিষ্ণু পরলেন মহা সংকটে। দেবতাদের সঙ্গে ব্রহ্মা বিষ্ণু পরামর্শ করে স্থির করলেন, একমাত্র শিবের মধ্যে কামের উদ্রেক জাগাতে পারলেই তার ধ্যানভঙ্গ হওয়া সম্ভব।
ডাক পরলো কাম দেবের। বুঝিয়ে দেওয়া হলো তার কাজ। যথা সময়ে কামদেব স্ত্রী রতিকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হলেন হিমালয়ের শিখরে। ফুল শর নিক্ষেপ করে কামদেব মহাদেবের ধ্যানভঙ্গ করলেন। ধ্যানভঙ্গ হওয়ার পরই মহাদেবের রোষানলে পরলেন মদন কামদেব। শিবের তৃতীয় নয়নের অগ্নিবর্ষণে কামদেব ভষ্মে পরিণত হলো। রতি মূর্ছাগেল। দেবতারা পরলেন মহা বিপদে। এক বিপদ যায়, আর এক বিপদ এসে উপস্থিত হয়। দেবতারা কোনপ্রকারে রতিকে সুস্থ করে বললেন, তুমি ভয় পরিত্যাগ করে এই ভস্মগ্রহণ করো,শিব সুপ্রসন্নহলে আমরা তোমার প্রাণবল্লভকে পুণঃ জীবনদান করবো। কামদেব ভষ্মীভূত হওয়ার পর শিবের উগ্রচন্ডীভাব কিছুটা স্তিমিত হলো। পার্বতীর দিকে চোখ পরতেই তিনি চঞ্চল হয়ে উঠলেন। খুব চেনা চেনা মুখ। তারপরেই আবার গম্ভীর হয়ে নিজের যোগাসন থেকে উঠে সেই স্থান পরিত্যাগ করলেন। পার্বতীও ছাড়বার পাত্র নয়। শিবকে পাওয়ার জন্য তিনি তপস্যায় ব্রতী হলেন। শিব পার্বতীর তপস্যায় গলে জল হয়েগেলেন। সময় সুযোগ করে মহাধুমধাম সহকারে তিনি পার্বতীকে বিবাহ করলেন। দেব-দেবাদিদেব সকলেই মহাদেবের বিবাহে উপস্থিত রইলেন। রতিও সেই বিবাহে উপস্থিত হলেন। নিজের স্বামীকে ফিরে পাবার জন্য তিনি শিবের কাছে কাকুতি মিনতি করতে শুরু করলেন। দেব-দেবীগণ সকলেই শিবের কাছে প্রার্থনা করলেন রতির স্বামী কামদেবকে পুনঃ জীবিত করা হোক।

শিব রতির হস্তে ধরা সেই ভস্মাধারে তাঁর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। সেই ভস্মাধার থেকে কামদেবের পুনঃ জন্ম হলো। রতি স্বামী পেলেন। কিন্তু এই কামদেবের রূপের বিপর্যয় ঘটেছে। কামদেবের সেই কাম রূপ স্বরূপ-কান্তি আর নেই। দুজনেই আবার শিবের কাছে প্রার্থনা করলেন,ফিরিয়ে দেওয়া হোক তার আগের রূপ। তখন মহাদেব বললেন। ভারতবর্ষের ঈশানকোনে নীলাচল পর্বত রয়েছে। সেখানে সতীদেহের একান্নটা খন্ডের এখনো একটা খন্ড অনাবিষ্কৃত রয়েছে। সেটি মহামায়ার মহামুদ্রা। সেখানে গিয়ে দেবীর মহিমা প্রচার এবং প্রতিষ্ঠা করলে তুমি তোমার আগের রূপ আবার ফিরে পাবে। কামদেব নীলাচলে এসে মহামায়ার সেই মহামুদ্রা প্রস্তরখন্ড রূপে খুঁজে পেলেন এবং ভক্তি সহকারে পূজা পাঠ করলেন। মহামায়া কামদেব এবং রতির প্রার্থনায় তুষ্ট হয়ে তাঁকে তার আগের রূপ প্রদান করলেন। এই যে কামদেব এখানে এসে তাঁর আগের রূপ ফিরে পেলেন তাই জায়গার নাম হলো কামরূপ। কামদেব তাঁর স্বীয় রূপ ফিরে পাবার পর। দেবীর পূজা যাতে সঠিক ভাবে হয় তাই তিনি বিশ্বকর্মাকে ডেকে পাঠালেন। মহামায়ার জন্য মন্দির তৈরি করতে হবে। বিশ্বকর্মা জায়গা দেখে ভীষণ আনন্দ পেলেন। সব শোনার পর তিনি মন্দির নির্মান করলেন। মন্দিরের গায়ে চৌষট্টি যোগিনী, আর আঠারোটা ভৈরব-মূর্তি খোদাই করলেন। কামদেব এই মন্দিরকে আনন্দাখ্যা মন্দির নাম জগতে প্রচার করলেন। আর মহামায়া মায়ের মহামুদ্রার নাম হয় মনোবভগুহা।অতীতে কামরূপে বহু হিন্দু রাজা রাজত্ব করেছেন। কিন্তু তাদের ধারাবাহিক ইতিহাস বিলুপ্ত। অনেক ধর্মবিপ্লব এবং যুগবিপ্লবের সাক্ষী কামদেব প্রতিষ্ঠিত মন্দির কামরূপ কামাখ্যা। কালের অতলে একদিন প্রায় বিলুপ্ত হয়েগেল এই মন্দির। নীলাচল পর্বতের ওই স্থান ঘনো জঙ্গলে ভরে গেল। শক্তিময়ী মাতা কামাখ্যার কথা ভুলেই গেল সকলে। বৌদ্ধযুগের পর গুপ্তবংশের রাজারা কামরূপে বেশ কিছুদিন রাজত্ব করেন। বিশেষ করে বিক্রমাদিত্যের সময় থেকে হিন্দুধর্ম আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১১৫০ সালে পালবংশের ধর্মপাল বর্তমান গৌহাটির পশ্চিমখণ্ডে রাজত্ব করতেন। তিনি খুব ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিছিলেন।

তিনি আবার কামাক্ষা দেবীকে নীলাচল পর্বতে খুঁজে বার করে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। ধর্মপালই মায়ের যথাবিধি পূজার্চনার জন্য কান্যকুব্জ থেকে অনেক সদব্রাহ্মণকে কামরূপে নিয়ে আসেন। এরা বাসত্তরীয় ব্রাহ্মণ নামে খ্যাত। এঁরাই কামাক্ষা দেবীর মন্দিরের আদি পূজারী। পালবংশের শাসনের পর মন্দিরের আবার অবলুপ্তি ঘটে। মা কামাক্ষা হারিয়ে যান নীলাচলের গহীণ অরণ্যে। বারভুঞ্যাদের সময় মন্দিরের ইতিহাস অতোটা পরিষ্কার জানা যায় না।পরে কামরূপের শাসন ভার করায়ত্ত করেন মেছ বা কোচবংশীয় শাসনকর্তা। এরা হাজো বংশীয় নামে পরিচিত ছিলেন। ১৪৮৫ সালে এই বংশের বিশু নামে এক শক্তিমান পুরুষ রাজা হন। ১৪৯০সালে তিনি হিন্দুধর্ম গ্রহণ করে বিশ্বসিংহ নাম পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর ভাই শিশু শিবসিংহ নামে পরিচিতি লাভ করেন। পরে এই বিশ্বসিংহ মন্দিরের পুনর্নির্মাণ করেন।

(পূর্বে অন্য দুটি ব্লগে প্রকাশিত)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:৩২
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×