প্রেমের গান লিখেছেন কখনো?
এই নাগরিক যান্ত্রিকতায় , ব্যস্ততায় কখনো কি সাদা মাটা কথা গুলো প্রেমের গান হয়ে ডানা মেলেছে ?
গলির মুখের আবর্জনার বিকট গন্ধ আর নাগরিক কাকের ক্ষুধার্ত চাহনি কি কখনো কি হতে পেড়েছে একটি প্রেমের গান ?
এই সময় অথবা ঝাপসা হয়ে ওটা কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন এই অসময়। এই অসময়ে বেড়ে ওঠা নিদারুন অভিমান কি একটি প্রেমের গান হতে পেড়েছে ?
যাক , প্রশ্ন অনেক হয়ে গেলো। নিজেকেই প্রশ্ন গুলো করি মাঝে মাঝে।
আমাদের এই ঢাকা শহরের উত্তরায় রাস্তার পাশের গাছ গুলো কেটে ফেলার হচ্ছে। কারণ জানিনা। জানতে ইচ্ছে করেনি।
শুধু আসা যাওয়ার মাঝে লোকাল বাসের (যাকে পরিবহন সমিতি 'সিটিং বাস' বলে ) জানলা নিয়ে কেটে নেয়া গাছের গুড়ি গুলো পরে থাকে দেখি। এই ধুলো বালি ময়লা আর অবহেলার শহরে প্রেমের গান কে আঁকড়ে ধরতে ইচ্ছে করে খুব। গাছের গুঁড়িতে মেলে দেয়া রঙিন লুঙ্গিটা বাতাসে কেন জানি স্বপ্ন হয়ে দোলা দেয় প্রতিনিয়ত।
হেরে যাওয়া ,ফেলে আসা , হারিয়ে ফেলার এই উদাসীন শহরে কখনো কখনো প্রেমের গান বাঁধতে ইচ্ছে হয় খুব। বেহায়ার মতো।
নাগরিক কবিয়াল কবীর সুমন প্রেমের গান লিখেছিলেন ' চাইছি তোমার বন্ধুতা ' অ্যালবাম এ ১৯৯৬ সালে। এরপর কেটে গেছে সময়। সুমন চট্টোপাধ্যায়, কবীর সুমন হয়েছেন। হেরে যাওয়া শহর আর জীবনের প্রতিচ্ছবি খুব একটা বদলায়নি।
গান : আমার প্রেমের গান
কথা , সুর ও সংগীত : কবীর সুমন
অ্যালবাম : চাইছি তোমার বন্ধুতা
যদিও আকাশ ধোঁয়াশায় মৃয়মান
তোমার জন্য লিখছি প্রেমের গান।
গলির মুখেই নোংরা-আবর্জনা
আস্ত নরকে নাগরিক আনমনা
মোড়ের সেলুনে রেডিওয় মুলতান
তোমার জন্য লিখছি প্রেমের গান।
বাজারের শাক-সবজির অবশিষ্ট
নালায় ভাসছে কবেকার উচ্ছিষ্ট
ইটে মুখ ঘষে কাক দেয় ঠোঁটে শান
তোমার জন্য লিখছি প্রেমের গান।
কেটে নেয় গাছ গুড়িটা রয়েছে পড়ে
তাতে মেলে দেওয়া রঙিন লুঙ্গি ওড়ে
রাস্তার কলে রিক্সাওয়ালার স্নান
তোমার জন্য লিখছি প্রেমের গান।
ছোট্ট দোকানে খই মুড়ি চানাচুর
নকুল দানায় পিঁপড়ের ঘুরঘুর
সামনেই আছে খয়ের সুপুরি পান
তোমার জন্য লিখছি প্রেমের গান ।
বেঞ্চিতে আছে বেকার ছেলেটা বসে
বন্ধুর কাঁধে বিষন্ন মুখ ঘষে
কমলো কিছুটা যুবকের অভিমান
তোমার জন্য লিখছি প্রেমের গান ।
সব অভিমান আকাশের চেনা চেনা
সবার জন্য সুদিন কি আসবেনা
উত্তর চেয়ে আকাশ পেতেছে কান
আমিও পেতেছি আমার প্রেমের গান।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:১১