somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার সোভিয়েত শৈশব - আমার শৈশবের স্কুল !

২৮ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১.

অংক কষা ফেলেই ছুটলাম বাগানের ছেলেগুলোর কাছে। ছুটছি, দেখি সামনে মাস্টার মশাই।
বললেন , ' কি করছিস ? বাতাসের সাথে পাল্লা দিচ্ছিস ?"
' না এমনি আর কি , বাগানে যাচ্ছি '
ওঁর পাশাপাশি চলছি আর ভাবছি , এইবার নিশ্চয় জিজ্ঞেস করবেন অঙ্কটার কথা।
কি বলবো ? এখনতো কষা হয়নি!
উনি কিন্তু বললেন :
'দিব্যি আবহাওয়া ...'
বললাম , ' দিনটা ভালোই ', আর মনে মনে ভয় : হটাৎ যদি অঙ্কটার কথা তোলেন।
বললেন , ' নাকটা যে তোর লাল হয়ে গেছে। ' বলে হাসলেন।
'নাকটা আমার এমনই , চিরকালই লাল।'
'তাহলে লাল নাক নিয়ে দিন কাটাবি ?
ভয় পেয়ে গেলাম :
'কিন্তু কি করবো?'
'বিক্রি করে নতুন একটা নাক কিনে না।'
'আপনি ঠাট্টা করছেন। '
আবার হাসলেন উনি।
আমি কিন্তু ভাবছি কখন অংকের কথাটা ওঠাবেন। কিন্তু না , অঙ্কের কথা জিজ্ঞাসায় করলেন না। ভুলে গেছেন নিশ্চয়।
পরের দিন ডেকে পাঠালেন :
'কই , দেখি কি কষেছিস। '
ভোলেন নি তাহলে !



২.

মাস্টার মশাই বোর্ডের দিকে ফিরতেই আমায় টুক করে ডেস্কের নিচে। যখন দেখবেন আমি নেই , তখন নিশ্চয় ভয়ঙ্কর অবাক হবেন।
সত্যি, কি ভাববেন তখন ? সবাইকে জিজ্ঞেস করবেন কোথায় আমি --- ওহ , কি হাসির ব্যাপারই না হবে! কিন্তু আধা ঘন্টা কেটে গেলো , ডেস্কের নিচে সেই বসে আছি তো আছিই। কখন ওর চোখে পড়বে যে আমি নেই? এদিকে ডেস্কের নিচে বসে থাকাও সহজ নয়। দ্যাখো না চেষ্টা করে। পিঠ টন টন করছে। কাশলাম একবার , কিন্তু কেউ নজর দিলো না। না, আর পারিনা। সেরিওজা-টা আবার কেবলই পা দিয়ে গুঁতিয়ে চলেছে। সত্যিই পারলাম না। ক্লাস শেষ হবার আগেই উঠে পড়লাম। বললাম :
'মাফ করবেন পিওতর প্রত্রভিচ...'
মাস্টার মশাই বললেন :
' কেন ? কি ব্যাপার ? বোর্ডে আসতে চাস ?'
'না , মাফ করবেন মানে, আমি ডেস্কের নিচে বসেছিলাম...'
'তা কেমন লাগলো সেখানে ? আরামে বসা যায় বুঝি ? আজ দেখলাম তুই এতটুকু গোলমাল করিস নি ক্লাসে। বরাবর এমনি চুপচাপ থাকলে মন্দ হয় না।'

৩.

ঘন্টা পড়তেই বেরিয়ে এলাম স্কুলের আঙিনায়। চমৎকার দিন। ঝড় নেই। বৃষ্টি নেই। বরফ নেই। কেবলই ঝলমলে রোদ।
হঠাৎ দেখি বেড়াল ওঁৎ পাতছে। ভাবলাম , কোথায় ওঁৎ পাতছে বেড়ালটা দেখি তো।
চুপি চুপি পিছু নিলাম বেড়ালটার। হঠাৎ লাফ দিলে বেড়ালটা। দেখি কি, দাঁতে তার একটা পাখি --- চড়ুইছানা! বেড়ালটার লেজ টেনে ধরলাম:
' দে এক্ষুনি, দে বলছি পাখিটা। '
পাখিটা ফেলে দিয়ে পালালো বেড়াল।
ক্লাসে নিয়ে এলাম পাখিটাকে।
লেজের খানিকটা ছিঁড়ে গেছে।
সবাই ঘিরে ধরলো আমায়, চ্যাঁচাতে লাগলো :
' আরে দ্যাখ দ্যাখ পাখি ! জ্যান্ত পাখি !'
মাস্টার মশাই বললেন :
'বেড়ালে পাখি ধরে গলায় কামড়ে। তোর পাখিটার ভাগ্যি ভালো। কেবল লেজের উপর দিয়ে গেছে। '
সবাই পাখিটাকে ধরে দেখতে চায়। কিন্তু কাউকে দিলাম না আমি। ওটা পাখিরা পছন্দ করে না।
পাখিটাকে গিয়ে রাখলাম জানালার বাজুতে। ঘুরতেই দেখি , পাখি আর নেই !
'ওরে ধর, ধরে ' বলে চেঁচিয়ে উঠলো ছেলেরা। পাখি কিন্তু উড়েই গেলো।
তবে আমার কোনো দুঃখ হলো না। আমিই যে ওকে বাঁচিয়েছি। সেটাই তো বড় কথা।

-----------------------------------------
বৃষ্টি আর নক্ষত্র - নামের শৈশবের একটা রাশিয়ান বইয়ের খানিকটা অংশ ! মাঝে মাঝে শৈশবের সেই রাশিয়ান বইগুলো বুকের মাঝখান থেকে আচমকা বের হয়ে আসতে চায় লেখায়। খুব ছোটবেলায় যখন আব্বা আমাকে বই পড়ে শোনাতেন , যখন আমি বানান করেও পড়তে পারতাম না , যখন আমি স্কুলেও যেতাম না -- তখন থেকেই রাশিয়ান বইগুলো আবার সাথেই আছে। তাই সেই 'ছোটমানুষের ' বইগুলোকে মাঝে মাঝে আমি শৈশবের স্কুল বলে ডাকি !

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×