বইয়ের নামঃ কল্পতরু
লেখাঃ কর্নেই চুকোভস্কি
অনুবাদঃ ননী ভৌমিক ( আমার শৈশব আপনার কাছে ঋণী )
'রাদুগা' প্রকাশন - মস্কো
দে ধোলাই
লেপখানা মেলে ডানা,
বালিশটা পালালো,
কম্বল
উড়ে গেলো,
বড়ো দেখি জ্বালালো।
মোমদানিটা , লেড়ে বাবা,
স্টোভের পিছে , যায় না ভাবা !
বই কইরে ,
বইও পালায়
ডিঙি মেরে
খাটের তলায় !
যাক – গে মরুক , যা হয় হোক ,
চা খাওয়া যাক দু-চার ঢোক।
সামোভারটা আঁতকে উঠে
ভুঁড়ি কাঁপিয়ে পালায় ছুটে।
হলো-টা কি ?
বিদিকিচ্ছে !
ঝাঁকে ঝাঁকে
ডাক দিচ্ছে,
হাঁক দিচ্ছে,
পাক দিচ্ছে চরকি পাকে ?
ইস্ত্রি কিনা
জুতোর
পিছে,
বুটজোড়া যে
কেকের
পিছে,
পিঠেটা মিছে
ইস্ত্রি
পিছে,
বেল্ট খুঁজছে
শিক
গাছি –
সব জুটছে,
সব ছুটছে,
ঘুরছে খেয়ে ডিগবাজি।
হঠাৎ মায়ের ঘর খুলে
ল্যাগবেয়ে তার ঠ্যাং তুলে
হুড়মুড়িয়ে ওয়াশ-স্ট্যান্ড
বেরিয়ে এলো ড্যাডাং ড্যাং।
--ওরে তুই কেলেভূত, শাঁখচুন্নির পুত ! –
বলে মাথা দুলিয়ে, --
ঘাড়ে তোর ময়লা ,
নাকখানা কয়লা,
মুখখানা গোমড়া ,
এতো তুই নোংরা ,
রেখে তোকে ন্যাংটা
এমন কি প্যান্টটা,এমন কি প্যান্টটা
ছুটে গেলো পালিয়ে !
সকাল হতেই শত শতই
হাঁসের ছানা , ইঁদুরছানা ,
বেড়ালছানা , ভোঁদরছানা
নিয়ম করে হাত মুখ ধোয়।
একলা তুই-ই মুখ ধূলি না ,
একলা তুই-ই জল ছু’লি না ,
হয়ে রইলো কেলেভূতো ,
তাই পালালো মোজা জুতো।
আমি সেই মহা ওয়াশ-স্ট্যান্ড
বিশ্ববিদিত ধোলাইরাম,
পেছনে আমার ড্যাডাং ড্যাং,
সৈন্য সিপাহি দু-দুম দাম !
এক্ষুনি যদি মেঝেতে পা ঠুকে
ডাক দিয়ে সব সৈন্যদের,
ভিড় করে তারা কামরায় ঢুকে
তুমুল কান্ড বাঁধাবে ঢের ,
লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে এসে রুখে রুখে
ঘোর মজাখানা পাওয়াবে টের।
আর তুই ভুত রাখছি বলে—
মাথাখানা তোর সটান ধরে
সেরেফ জলে,
সেরেফ জলেই
গু’জে দেবে বেশ ঝপাং করে!—
এই বলে শেষে গামলায় ঘাই মেরে
হাঁক দিলেঃ রে-রে- রে-রে !—
এমনি যতো বুরুশগুলো
হুরুশ করে ঝাঁপিয়ে এলো,
চললো কোষে গা ডলানি,
সেই সঙ্গে গুনগুনানি:
--লাগাও ধোলাই, ডলায় , মালাই
ময়লা বলে পালাই পালাই!
নোংরা ছেলের ছাল তুলবো,
ধুইয়ে ছেলের রূপ খুলবো ! --
লাফিয়ে উঠে সাবানখানা
ধরলো চেপে চুলের গোছা,
ফেনায় সে তো আছেই জানা,
চোখে শুধু হুলের খোঁচা।
গা রগড়াবার ছোবড়া তো নয়,
পিঠেতে বিছুটি, কত আর সয়,
পিঠটান দিয়ে সোজা রাস্তায়,
ছোবড়া কি ছাড়ে , সেও পিছে ধায়।
বড় পার্কটার রেলিং টপকে
ভাবলাম, যাই ওপাশে সটকে।
যত ছুটি তত তেড়ে আসে জোরে
পিঠ জ্বলে গেলো আঁচড়ে আঁচড়ে।
ভাগ্যিটা ভালো , কুমির মশায় ,
সেজে গুজে সাথে নিয়ে ছেলেপিলে,
পার্কে স্বাস্থ্যলাভের আশায়
হাওয়া খাচ্ছিল তিনজনে মিলে ,
হটাৎ হা করে , ছোবড়াকে ধরে ,
ছোবড়াকে ধরে স্রেফ খেলো গিলে।
তারপর সেকি খেঁকালো
আমায়,
থাবখানা তুলে ঝাঁকালো
আমায়:
--এক্ষুনি ঘরে ফিরে যা ---
বলছি
--নইলে, নইলে অল্প –
বলছি,
--আস্তোই গিলে ফেলবে!—
বলছি।
সত্যি যদি খেয়েই ফেলে পাছে ,
দে-ছুট সোজা ওয়াশ-স্ট্যান্ডের কাছে।
সাবান ঘসে,
সাবান ঘসে,
সাবান ঘসে কাদার ছাপ ,
দাগ দাগালি,
ঘাড়ের কালি
এক্কেবারে ধুয়ে সাফ।
ট্রাউজারটা অমনি ওরে
এগিয়ে এলো সোহাগ ভরে ,
তার পেছনে কেকটি লাফায় :
--এই তো আমি , খান না আমায়!-
স্যান্ডউইচটা ভারি তৎপর
ঢুকলো সোজা মুখের ভেতর।
বই ফিরলো , খাতা ফিরলো,
পাটিগণিত , ব্যাকরণ
হাত-পা ছুড়ে শুরু করলো
নাচন , কুঁদন।
হটাৎ পেছনে ড্যাডাং ড্যাং
সৈন্য সিপাহি দু-দুম দাম
নিয়ে ছুটে এলো নাচিয়ে ঠ্যাং
বিশ্ববিদিত ধোলাইরাম ,
আমাদের সেই ওয়াশ-স্ট্যান্ড,
চুমুটুমু খেয়ে উঠলো বলেঃ
--এই তো দিব্যি লক্ষি ছেলে,
মিছিমিছি এতো ঝক্কি খেলে!
শেষটা যা হোক অক্ষি মেলে
আদর পাবার যুগ্যি হলে!—
সন্ধ্যা সকাল ধুতে হবে
ময়লা যত গা-মুখ-হাতের।
নোংরা মতো
চ্যাংড়া যত, --
ছিছি তাদের!
ছিছি তাদের!
জয় জয় জয় গন্ধী সাবান,
ধন্যি নরম তোয়ালেখান,
খুরুশ-খুরুশ-খা
দাঁতের বুরুশটা !
এসো ভাই সব গা ধুয়ে যাই ,
লাফায় , ঝাঁপায় , ডিগবাজি খায়
টবেতে, বেসিনে, ঘরের ভেতরে,
পুকুরে, দীঘিতে, নদীতে, সাগরে
আর বাথরুম আর কলঘরে
লক্ষ বার , লক্ষ বার
জলের জয় জয়কার !
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:২৪