somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সত্যমূলক রুপকথা

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৩:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১.
শীতের সকাল। ছুটি চলছে। বাইরে শোরগোল । ঘুম ভেঙে গেল। আরে ! কিছু মিস করলাম নাকি? একটানে লেপ সরিয়ে লেপের তল থেকে বের হলাম। কোন কিছুই মিস করা চলবে না কিছুতেই । সবাই হয়তো ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। ছোটফুফুরাও ঢাকা থেকে এসেছে। সব ভাইবোন মিলে আনন্দের শেষ নেই। মনে পড়লো ,গতরাতে নন্টে ফন্টে শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মেজচাচার ঘরে , কে তুলে এনে আমাদের ঘরে শুইয়ে দিয়েছে কে জানে।
উঠোনে জটলা। মেজচাচার হাতে ব্যাগ । তাতে কয়েক রকম পাটালি গুড়ের নমুনা । সবচেয়ে ভালো গুড় দিয়ে আজ রস পিঠা বানানো হবে। চিতই পিঠা রসে ডোবানো হবে। কেনা আর টেস্ট করার গুরুত্ব পূর্ণ দায়িত্ব সব সময়ই মেজচাচার ঘাড়ে পড়ে । এ ক্ষেত্রে মেজচাচার জুড়ি নেই । দাদা জানালায় বসে তাকিয়ে আছেন। রস পিঠা দাদার খুব প্রিয়।
আনন্দমুখর পরিবেশ চলছে। সবার মধ্যে চঞ্চলতা। আমি ব্রাশে পেস্ট মাখিয়ে দৌড়ে চলে গেলাম পুকুর পাড়ে । জামগাছটার নিচে। ভাইবোনদের সাথে আড্ডায়।
পিঠা খাওয়া হবে সেই রাতে আর আমাদের উৎসব শুরু হয়েছে এখনই । এটাকেই সম্ভবত শৈশব বলে।

এতো কাল পরেও দৃশ্য গুলো একবারে জীবন্ত। টুকরো টুকরো স্মৃতিগুলো জমা করে রেখেছে ব্রেন সেল। ছোটফুফুরা ঢাকা থেকে আসার আগে চিঠি দিত। চিঠিতে নির্দিষ্ট তারিখ থাকতো না। তাই আমরা ছোটরা দুই একদিন ধরেই অপেক্ষা করতাম বাড়ির পাশের রাস্তায়। ঈদের চাঁদ দেখার মত কে আগে দেখবে এমন একটা উৎকণ্ঠা কাজ করতো।

বেঁচে থাকলে অনেক শীত পাবো। শীতের সকাল পাবো। কিন্তু সে সময়? আমার স্মৃতি কোষ সব সময় সুখের স্মৃতি জমা করে। আমি চাই আমার ছেলেমেয়েদের শৈশব আমার মতোই হোক । এমন শৈশব নিয়ে বড় হোক। মেজোচাচার বাছাই করা গুড়ের মত মিষ্টি শৈশব !

২.
একটা সময় শবে বরাত ছিল উত্‍সবের মতো। সামাজিক একটা বন্ধনের মতো ব্যাপার। পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে তর্কে যেতে চায় না। একটা সময় ছিল দিনটি নিয়ে কোন বিতর্ক ই ছিল না! দুপুর থেকে রুটি বানানো শুরু হতো একটার পর একটা চাউলের রুটি পাহাড় তৈরী করতো, আমরা ছোটরা রুটি গুনতাম আশি... একাশি...বিরাশি...
আমরা অপেক্ষায় থাকতাম আমাদেরকে কখন বাড়িতে বাড়িতে রুটি আর হালুয়া বিতরণ করতে পাঠাবে! বাড়ি বাড়ি থেকে রুটি আসা শুরু হয়ে যেত এরই মধ্যে সুজির হালুয়া, ডালের হালুয়া, ময়দার হালুয়া... আলাদা আলাদা পাত্রে তুলে রাখতাম আমরা। কত কাজ আমাদের... এরপর আমরা বেড়বো রুটি আর হালুয়া বিলি করতে, গোসল করে পাঞ্চাবী পড়ে আমরা প্রস্তুত।
ডিমের হালুয়া বরাবরই আমার খুব পছন্দ । অল্প করে রান্না করা হতো আমার জন্য, ছোটদের জন্য আর দাদার জন্য ।

ইতিমধ্যে ফকির মিসকিন দরজায় ভীড় শুরু করছে.. ওদিকটাতেও নজর রাখতে হচ্ছে! কত কাজ আমাদের...

কয়েকবছর ধরে এই সব আর ঘটে না। দেশের মানুষ ধর্ম নিয়ে অনেক জ্ঞান রাখে( !) তাই নিয়ম রীতি পাল্টে গেছে। এই সব নিয়ম রীতি অনেক কিছুই বদলে দেয়, সামাজিক বন্ধন... আন্তরিক বন্ধন কিংবা আমাদের শৈশব!

৩.
পেনসিল আর সর্বকর্মার অ্যাডভেঞ্চার
(সত্যমূলক রুপকথা)

আমাদের দুই নায়ক- যাদুকর পটুয়া,
ড্রয়িঙের মাস্টার পেনসিল আর সব
কাজের কাজী, লোহার মানুষ
সর্বকর্মা তাদের বৃত্তন্ত, তাদের
নানা অ্যাডভেন্ঞ্চার, তাদের যাদু
ইশকুলের খবর শোনাবার জন্য এবার
বিদেশ যাত্রা করল।
বইটি পড়ার পর তোমাদের অনেকেই
নিশ্চয় ধরতে পারবে যে যাদুর
ইশকুলটা খাস জীবন ছাড়া আর কিছুই
নয়। সে জীবন কিছু শিখিয়েছে,সবই
শেখাবে।

তোমরা কিন্তু
চিঠি লিখে জানাবে বইটা থেকে তোমরা কী বুঝলে,
কী শিক্ষা পেলে?

নানান জায়গা থেকে ছেলেমেয়েদের
চিঠি আমরা পাই অনেক।যাদু ইশকুলের ঠিকানাটা জানতে চায় সবাই।
একটি ছেলে লিখেছঃ 'যাদু ইশকুলের
ঠিকানাটা আমায় দিন, নিজের
জন্যে একটা বাইসাইকেল ,
টোটা সমেত বন্দুক আর দুটি দম
দেয়া খেলনা মটরগাড়ি আঁকতে চাই!'

আরেকজনের ইচ্ছে একটু অন্য
রকমঃ 'যাদু ইশকুলে ভর্তি হতে চাই, আমাদের গাঁয়ের জন্য ঠিক
এমনি একটা ইশকুল এঁকে দেবো,
ফলে সব ছেলেমেয়েই তাতে পড়তে পারবে। তাছাড়া বাড়ির
পাশে একটা নদী আঁকতে চাই,
ঠাকুরমাকে তাহলে বেশীদূর
হাঁটতে হবে না,
বুড়ো হয়ে গেছেন তো...'

দেখেছ তো, কত রকমের ছেলে আছে, কত রকম তাদের চিঠি। আমাদের ইচ্ছে কী জানো, তোমরা ওই দ্বিতীয় ছেলেটির মতো হও। কেন, সেটা নিজেরাই ভেবে দ্যাখো।
- ইউরি দ্রুজকভ
_______


বইটি যখন হাতে পেয়েছি তখন শুধু মাত্র বইয়ের উপর নিজের নাম লিখতে শিখেছি। আব্বা বই এনে দিতেন আর আমি 'সৌরভ' লিখে রাখতাম। বইয়ের উপর নাম
লেখার জন্যই সবার আগে আমাকে নিজের নাম লেখা শেখানো হয়েছিলো।

পরে যখন একটু বড় হলাম তখন জাদুর ইশকুলের চিঠির
কথা মনে হতো। একটা চিঠিও লিখেছিলাম। চাকাওয়ালা ঘর
বানাতে চেয়েছিলাম। অসুস্থ থাকতাম তো তাই চেয়েছিলাম
শুয়ে শুয়ে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াতে।

আর একটা জিনিস চেয়েছিলাম,
আমাদের বাড়িতে একটা মহিলা ভিক্ষুক
আসতো প্রতিদিন,এসে চৌকাঠে বসে বসে আমার
সাথে গল্প করতো।দুপুরে খেত। আমি উনার জন্য
একটা লাঠি আঁকতে চেয়েছিলাম, সুইচ দিলে ছোট আবার বড় হবে।মহিলাটার কোমড়ে ব্যাথা ছিলো তো! মাজা কুঁজো করে হাঁটতো। এই লাঠি এখন কিনতেই পাওয়া যায়। জাদু করা লাগে না। তবুও শৈশবের সময়টা জাদুই ছিল।

শৈশবের এইবইটি আমার সবচে প্রিয় বললে ভুল হবে না।অনেক মজা অনেক অ্যাডভেঞ্চার, অনেক শেখার আর
ঐযে 'সত্যমূলক রুপকথা' - আর বুঝেছিলাম যাদুর
ইশকুলটা খাস জীবন ছাড়া আর কিছুই
নয়। সে জীবন কিছু শিখিয়েছে,সবই শেখাবে।

আমার শৈশবটা খারাপ ছিলনা। ঠিক যেন 'সত্যমূলক রুপকথা'।

জাদুর ইশকুল নিয়ে চিঠি লেখার
ঠিকানা।
আমাদের ঠিকানাঃ
প্রগতি প্রকাশন ২১,
জুবোভস্কি বুলভার
মস্কো, সোভিয়েত ইউনিয়ন।

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২১ ভোর ৪:১২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×