ছোট্ট ছেলেটি দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেল। সে এখন 'আক্কুপুক' আর 'আক্কু'র পার্থক্য জানে। সে এখন জানে আক্কপুকের পরেই আক্কুর আগমন। বস্তুত আক্কুপুকই আক্কুর আগমণ ধ্বনি।
রাশান রাজপুত্র কে নিয়ে অনেক অনেক লেখা জমা হয়ে আছে। আগের মত আর লেখা হয় না। এখন আমরা তিনজন ইফতার করতে বসি। আজান হয়ে গেলে বলে, "বাবা..আল্লাহ ... আজান। মাম ... খাও।"
আজান না হওয়া পর্যন্ত ইফতার নিয়ে বসে থাকে! অদ্ভুত না!
অনেক বছর আগে আমরা যখন ছোট ছিলাম। যখন রোজা রাখতে পারতাম না। বাড়ির উঠানে আমাদের ইফতারের আয়োজন চলতো। উঠানে পানি ছিটিয়ে ঝাড়ু দেয়া হতো , যাতে ধুলো না ওড়ে। এরপর মাদুর বিছিয়ে দিতাম। আমরা ভাইবোনেরা কেউ বসে থাকতাম না। কেউ মাদুর বিছায়, কেউ টিনের প্লেট সাজায়, কেউ রান্নাঘর থেকে ইফতার নিয়ে আসে, কেউ শরবতে চিনি গুলায়। এমন কি যার কোন কাজ ছিল না সেও বারবার রাস্তায় গিয়ে দেখে, ' বরফ নিয়ে এখনো আসছে না কেন?'
বেলী বরফ নিয়ে আসতো প্রায় ছুটতে ছুটতে। ইদরায় ঢুবিয়ে রাখা হতো তরবুজ আর ডাব। ঠান্ডা হওয়ার জন্য। ঐগুলো পানি থেকে তোলার সময়ও আমাদের থাকা চাই। ইফতারের আগমুহুর্তে আমাদের কঠিন ব্যস্ততা। এরপর ইফতার সাজানো হলে বিছানো মাদুরে আমরা বসে পড়তাম। কড় গুনে দেখতাম প্লেটের সংখ্যা ঠিক আছে কিনা।
হ্যাঁ ঠিক আছে, ২৩ টা! আর ২টা দাদা আর দাদীর তাঁরা তো মাদুরে বসতে পারবে না। দাদা জানালায় বসে আমাদের কাজকর্ম দেখতেন আর বলতেন, কুটি ভাআআই!
জ্বী দাদা?
আজ কয় রুজা?
১৩ টা দাদা।
তুমার কয়টা?
৩ টা দাদা।
আমরা ইফতার সামনে নিয়ে অপেক্ষা করতাম । আজান হওয়ার জন্য। আজান না হওয়া ইফতারে হাতও দিতাম না। দূরে পাওয়ার হাউজ থেকে সাইরেন বেজে উঠতো। বোমা ফাটিয়েও সংকেত দিতো। দাদা বলতেন, আগে আজান হোক। দূর থেকে আজান ভেসে আসতো। আমাদের অপেক্ষা শেষ হতো।
ছোটবেলার মত এখনো আমরা ইফতার নিয়ে অপেক্ষা করি। কেউ ছেলে নিয়ে, কেউ মেয়ে নিয়ে, কেউ ছেলেমেয়ে নিয়ে। কিন্তু ছোটবেলার উঠানের সেই অপেক্ষাটা অন্যরকম ছিলো। আমাদের অপেক্ষায় আর দাদা নেই। কিংবা কে জানে, লোহার শিকের জানালা ধরে হয়তো তিনিও অপেক্ষা করেন!
কুটি ভাআআই?
জ্বী দাদা!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১:২৩