বেশ কয়েক বছর আগের কথা সব মাত্র ইন্টারমিডিয়েট ভর্তি হয়েছি। এসএসসি রেজাল্ট খারাপ ছিল না। আমাদের সময় জিপিএ ছিলনা। ছিল ডিভিশন, স্টার, স্ট্যান্ড। আমি স্টার না পেলেও সাইন্স থেকে ৭৪৩ এর মার্কস পেয়েছিলাম। মাত্র ৭ মার্কসের জন্য স্টার হয়েছিল না।
খুব একটা খারাপ লাগেনি কারণ আমি মধ্যম শ্রেণীর ছাত্রের মধ্যে পড়িনা। সারাদিন সারারাত পড়ে ভালো মার্কস পাওয়ার ধৈর্য্য কিংবা যোগ্যতা কোনটাই আমার ছিল না।
ছবি আঁকতাম, বই পড়তাম, লিখতাম, মাঝ ধরতাম, ক্রিকেট খেলতাম... সময় চলে যেতো এর মাঝেই। শুধু পড়াশোনার জন্য সময় ছিল কম। সারাজীবনই একটা জিনিস মনে গেঁথে গিয়েছিল সেটা হচ্ছে, ভালো ছাত্র হবার মত মেধা নিয়ে জন্মাইনি আমি। পড়াশোনা বিষয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখতাম এবং লজ্জায় অনেক কিছু জিজ্ঞেস করতাম না ক্লাসে।
থাক্ সেইসব কথা এখন বলছি না। অন্যকোন পোষ্টে বলে ফেলা যাবে।
এখন আসি ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারের সময়ে, যেটা দিয়েই শুরু করেছিলাম।
আমাদের ফ্যামিলিতে নামাজ পড়া নিয়ে জোর জবরদস্তি ছিল না কোন সময়। কিন্তু একটা সময় নামাজের প্রতি আগ্রহ তৈরী হলো। মসজিদের গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতাম। ফজরের ওয়াক্তে উঠতে সমস্যা হতো না কারণ বই পড়তে পড়তেই ওয়াক্ত চলে আসতো। এমনো রাত গেছে আরজআলী মাতুব্বর পড়তে পড়তে ওয়াক্ত হয়ে যেত। আজানের আগেই মসজিদে চলে যেতাম।
এভাবেই চলত। আজানের আগে মসজিদে হাজির। এমনকি একটা সময় মুয়াজ্জিন সাহেবের পাশের জায়গাটা আমার জন্য বরাদ্দ থাকতো। মসজিদের সবাই আমাকে পছন্দ করতো, ভালোবাসতো বিশ্বাস করতো।
কথা গুলো এজন্যই বলছি, কারণ মুয়াজ্জিন সাহেব হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় মসজিদ খোলা , আজান দেয়া এবং মসজিদ বন্ধ করার দ্বায়িত্ব আমার উপর পড়েছিল। পাঁচ ওয়াক্ত আজান না দিলেও দুই তিনবার দিতেই হতো।
আজান দিতে ভালো লাগলেও সুমধুর কন্ঠ ছিল না, সুর ছিল না ভালো, উচ্চারণ ঠিক ছিল না। সর্বোপরি আজান যেটাকে বলে সেটা আমার মধ্যে থেকে বের হতো না। কিছু কিছু আজান শুনি যেগুলো কানে গেলেই নামাজ পড়তে যেতে ইচ্ছা করে। আফসোস হতো এবং এখনো হয়,
আজান দিতে পারিনা বলে। আজান দেয়া আমার কাছে কোন কালেই সহজ বলে মনে হয়নি।
তারচেয়ে সহজ মনে হয়েছে কারো সাথে হেসে কথা বলা, নরম সুরে কথা বলা, আমার কথায় যেন কেউ কষ্ট না পায় সেইটা হিসেব করে কথা বলা।
আজানও তো কথা। যে কথা গুলো আপনি যত সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করবেন ততোই আপনার মনে প্রশান্তি আসবে। ইস সেই কথাগুলো মনের মত উপস্থাপন করতে পারিনি। জীবনে একটা আক্ষেপ থেকেই যাবে। তবে হ্যাঁ , আজান দেয়ার চেয়েও কঠিন কাজ হলো- সৎ থাকা, সৎ মানুষ হওয়া।
আচ্ছা, হঠাৎ আজানের কথা এলো কেন? ধর্ম আমার ব্লগীয় বিষয় নয়। আমি বহুমুখী ব্লগার নয়, যে কোন টপিক নিয়ে পোষ্ট লিখতে পাড়ার মত ব্লগীয় জ্ঞান আমি রাখি না। পোষ্ট দিতেই হবে এমনও তো কোন কারণ নেই।তাহলে ঘটনা কি?
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০২২ রাত ১০:০৬