somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে

১৫ ই মে, ২০২২ রাত ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দৃশ্যপট : ১

মেয়েটাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বুড়ো মানুষটি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
আম্মা বসো। কিশোরী মেয়েটি অবলীলায় বসে পড়লো সিটে, সংকোচহীন... যেনো এটাই তার প্রাপ্য ছিলো।
উপেক্ষা করলো বয়স্ক দাঁড়িয়ালা বাবার বয়সী মানুষটাকে।
বলা যেত, না চাচা আপনিই বসুন।কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে ধন্যবাদ জানানো হয়ত
বেমানান...মিউজিকের তাল কেটে যায়!

আমি ঠিক পেছনের সিটে। বুড়ো মানুষটিকে বসতে বললাম।
তিনি বললেন, 'না বাবা থাক...তুমি বসো, আমি সামনেই নেমে যাবো'।
আমি আর মাথা না ঘামিয়ে ঝাল মাখানো চিনাবাদাম খাওয়ায় মন দিলাম।
নিয়ন আলোয় ঢাকা শহর... একটার পর একটা ল্যাম্পপোস্ট পেরিয়ে যাচ্ছি,
দশ টাকার চিনাবাদাম শেষ হওয়ার পথে।

বুড়ো মানুষটা দাঁড়িয়েই আছেন। ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েটির
কানে ইয়ারফোন... প্রতিটি তাল ধরার চেষ্টারত! আজকালকার হিন্দি মিউজিক গুলো 'সেইরকম জোস'।

আমি বললাম, চাচা বসুন! একরোখা বুড়ো মানুষটির একই উত্তর। সামনেই নেমে যাবে...
কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে দাঁড়ির অগোচরে মুখ ঢাকে... হয়ত লজ্জায়।

গন্তব্যের বেশ কিছুটা আগেই আমি নেমে পড়লাম। ঝিরিঝিরি কয়েক ফোটা বৃষ্টি...খারাপ না। নিয়ন আলোয় আলোকিত রাস্তা... আমার যান্ত্রিক শহর... কখনো আবেগময়।

আমি হাঁটছি...হাঁটাটা জরুরী,মেদ জমেছে। এই বয়সে বুড়িয়ে গেলে চলবে না, মাজা শক্ত করে দাঁড়াতে হবে... সন্তানতুল্যদের বসতে দিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে থাকতে শিখতে হবে।

আমি বরং হাঁটি... হাঁটতে হাঁটতে ফেসবুকের জন্য স্ট্যাটাস রেডি করি।
বুড়ো মানুষটা হয়তো এখনো দাঁড়িয়ে আছে... হয়ত সামনেই নেমে যাবেন। মেয়েটার কানে হেডফোন...জোশ জোশ সব গান একের পর এক বেজেই চলেছে। হয়ত মুঠোফোন সংসার সাজাচ্ছে... সংসার ভাঙ্গছে। টিভি, ফ্রীজ, পিসি, আলমারী, এটাচড বাথরুম...গোলাপী রংয়ের বেডসীট, আকাশী বেডরুম... ছোট বাবু, বাবুর বাবার লাল টাই, চকচকে জুতো... হাতাকাটা মেক্সি, ড্রেসিং টেবিল, ওয়াশিং মেশিন, কিচেন,সোফা.... সুন্দর পরিপাটি সংসার। যে সংসারে সব ই থাকবে, শুধু বাবার বয়সী কোন বাবা থাকবে না!


দৃশ্যপট : ২


(আসুন এবার দৃশ্যপট পাল্টে ফেলি। যে দৃশ্য গুলো অহরহ ঘটে ,কিন্তু আমরা দেখিনা কিংবা লিখিনা।)

"বুড়ো মানুষটিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কানে হেডফোন লাগানো মেয়েটি , কান থেকে হেডফোন খুলে রেখে বললো,
চাচা বসুন।
বুড়ো মানুষটি বসতে চাইনা। মেয়ের বয়সী মেয়ে কে উঠিয়ে তিনি কিভাবে বসেন?
নাছোড়বান্দা মেয়েটি দাঁড়িয়ে পড়ে। বাবার বয়সী মাসুষটা কে সে কিভাবে দাঁড়িয়ে রাখবে ?
অতঃপর বুড়ো মানুষ টি বসে পড়েন সিটে। বসে মেয়েটিকে বলেন, 'মা .... তোমার হাতের ব্যাগটি আমার কাছে দাও।'
মেয়েটি ব্যাগ টি দিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে দেয়। তার খুব পছন্দের গান বাজছে ... "আমার এই দেহখানি তুলে ধরো,. তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো--. নিশিদিন আলোক-শিখা জ্বলুক গানে ॥"

মেয়েটির চোখ ভিজে ওঠে। বুড়ো মানুষ ব্যাগটা কোলে রেখে মেয়েটার দিকে তাকায়। মেয়েটার চোখ লুকিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে। একের পর এক ল্যাম্পপোস্ট পোষ্ট পার হয়ে যাচ্ছে, নিয়ন আলোর ল্যাম্পপোস্ট। নিয়ন আলোর এই শহরটা একেবারেই কি যান্ত্রিক? যারা এই দৃশ্যটা দেখেছে তাদের অজান্তেই চোখ ছলছল করে। নোনতা জলের কান্না। সব কান্নার জলের স্বাদই তো এক ‘নোনতা’..... কিন্তু এই নোনতা জল কে আমরা বলি আনন্দজল!

আমি চাইলেই নিজের সীটটি মেয়েটাকে ছেড়ে দিতে পারি। সব সময়ই আমি সেটাই করি। আজ কেন জানি ইচ্ছা হচ্ছে না। আজ থাক, মেয়েটি বরং আজ আগুনের পরশমনি ছোঁয়াক প্রাণে আর আমরা না হয় আজ আনন্দজলে ভিজি ।

বাইরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। আমি সীট ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। ঠিকই ধরেছেন। গন্তব্যের আগেই নেমে যাবো, বৃষ্টির ভেতর হাঁটবো।
আমার ভীষণ আবেগময় শহরের সমস্ত রাস্তাঘাট অঝোর ধারায় ভিজতে থাকে, ভিজতে থাকি আমি। ভিজতে থাকে নিয়ন আলোয় ল্যাম্পপোস্টে বসে থাকা নাগরিক কাকটা।


ছবিঃ ইন্টারনেট

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০২২ রাত ১২:৪৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×