আম্রপালি আম দিয়েই মনে হয় ম্যাঙ্গো ফ্লেভার আইসক্রিম বানায়। যতবার ফ্রিজ থেকে বের করে আম্রপালি খাচ্ছি ততোবার মনে হচ্ছে।
তবে আমার সবচেয়ে প্রিয় আম হচ্ছে ল্যাংড়া, গোপালভোগ আর ক্ষীরসাপাতি। এই বছর তেমন আম খাওয়া হয়নি। গোপালভোগ খাইনা দুবছর ধরে। গতবছর তো ল্যাংড়াই খেয়েছিলাম ১ মণ।
হিমসাগর একটা অদ্ভুত আম। হাতে তালু বেয়ে কবজি পর্যন্ত আমের রস আসার আগেই চেটে পুটে খেয়ে নিতে ইচ্ছা করে। ইদানীং কালের নামকরা আমের ভেতর হাঁড়িভাঙ্গা ওভাররেটেড মনে হয় , তবে খারাপ লাগে না। পছন্দের আমের ভেতর 'কোহিতুর' সম্ভবত নামের কারণে মার খেয়ে গেল। সেদিন এক দোকানী বলল, নাম শুনে কাস্টমার নাকি হাসে। এই আমের আবাদ হয়তো কম। তবে এই আম হিমসাগরের সাথে টক্কর দেয়ার ক্ষমতা রাখে।
গত দুই বছরে আরো একটা আম পছন্দের তালিকায় যুক্ত হয়েছে--‐ মল্লিকা!
তবে এই আমটা সম্ভব গৃহপালিত আমের গন্ডি থেকে বের হতে পারেনি। আবাদ এবং বাজারজাত মনে হয় সেভাবে হয় না। আমাদের বাড়িতে ছোটচাচা লাগিয়েছে। ওখান থেকেই খেয়েছি।
আমাদের কয়েকটা অপরিচিত আম গাছ ছিল। কি জাতের আম না জানার কারণে আমের বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে নাম দেয়া হয়েছিল। একটা আমের নাম ছিল 'পান পাতা'। আগের পাতা কিছুটা গোলাকার আম গুলোত ছিল পানের পাতার মত। ছোট ছোট প্রচুর আম ধরতো। দারুণ মিষ্টি।
'কটা ' গাছের আম ছিল আমার পছন্দের। একটু পাকা পাকা হলে আমার খেতে ভালো লাগতো। পেঁপের মত আম। স্বাদটা অন্যরকম। আধা পাকা আমে কয়েক দানা লবণ ছিটিয়ে খেলে অসাধারণ লাগতো। আর পাকলে তো কথায় নেই।
'মিঠি' গাছটা ছিল আমাদের বাড়ির পেছনের দিকে। রাস্তার পাশে । পরে এই গাছের পাশে আমাদের ঘর তোলা হয়। এই আম কাঁচলেও 'মিঠি' মানে মিঠা আবার পাকলেও 'মিঠি' । প্রচুর আম আসতো। ঝড়ের সময় পাড়ার ছেলেমেয়েরা এই গাছের নিচে চলে আসতো। পাকার মৌসুমে সবার আনাগোনা থাকতো এই আমের বিশেষত্ব হলো কাঁচা বা পাকা খোসাসহ খেয়ে খেলা যায়। এই আম সারাদিন খেলেও মুখে মন ভরতো না।
গত আমপান ঝড়ে বাড়ির বাইরের সিঁধুরি গাছটা পড়ে গেছিলো। এই আম গাছ নিয়ে অনেক স্মৃতি আছে। কি সুন্দর আমের গন্ধ। এই গাছের পাশে গতবছর দেখলাম একটা গাছ জন্মেছে। পাতা শুঁকে দেখলাম ঝড়ে পড়ে যাওয়া সিঁধুরি আমের গন্ধ। এইবার সেই গাছ ফল দিয়েছে।
আমার নানাবাড়ি হচ্ছে আমের দেশ। ঢাকার আম বিক্রেতারা যখন আমার কাছে ক্ষীরসা কে হিমসাগর আর হিমসাগর কে ক্ষীরসা বলে চালিয়ে দিতে চায় তখন খুব হাসি পাই।
আমার নানাবাড়িতে পুকুর পাড়ে একটা বিশাল আম গাছ ছিল। পুকুর পাড়ে বলে আমের নাম ছিল 'পাড়িল গাছ' । ঐ আম গাছের মাথায় উঠলে হার্ডিঞ্জ ব্রীজ আর ভেড়ামারা পাওয়ার হাউজের তেলের টাংকি দেখা যেতো। গাছটা এতোই মোটা ছিল অন্তত পাঁচজন পুর্ণবয়স্ক মানুষ লাগতো জড়িয়ে ধরতে। সেই আম আমরা টিপে টিপে ফুটো করে চুষে খেতাম। অসাধারণ স্বাদ।
ঢাকা শহরে যেসব আম চুষে খাওয়া যায় সেইগুলোকে আবার 'চোষা' আম বলে। 'চোষা' আসলে কোন জাত না।
সেজনানার বাড়ির পাশে একটা আম গাছ ছিল। নাম 'চম্পা' কিংবা 'চাম্পা'। বেহেশতে গেলে এই আম খেতে চাইবো। হইজগতে সম্ভবত এই আম পাওয়া যায় না। গাছটা আর নেই। কোন কলম রাখা হয়নি।
চম্পা আমের জন্য আমার মন কাঁদে।
বেহেশতে পাবো নিশ্চয়ই। বেহেশতে পাড়িল গাছও পাবো। ঐ গাছের মাথায় উঠে হার্ডিঞ্জ ব্রীজ দেখবো। ইহজগতে তো সম্ভব হয়নি।
আর চাইবো আমাদের বাড়ির পিছনের মিঠি গাছটাকে। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে এক দৌড়ে চলে যাবো গাছটার নিচে। ঘুম ঘুম চোখে আর ঝিরিঝিরি বাতাসে উপভোগ্য হবে সময়। কিংবা শৈশব।
ছবিঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০২২ রাত ১২:৪৭