দুই বছর পর বনভোজন। সবার উন্মাদনা একটু বেশি। গার্মেন্টসের ছেলে মেয়েদের আনন্দদীপ্ত চেহারা। ফ্লোরে নামলেই বোঝা যায়। চেইন স্টিজ সুইং মেশিনে বসা মেয়েটার মুখে হাসি। বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট হয়ে গেছে। শোনা যাচ্ছে ঘর ভাড়া বাড়বে। চলবে কিভাবে ? তারপরেও বনভোজনের মত উপলক্ষ সাময়িক ভাবে শান্তি দিচ্ছে।
এইবার পিকনিকে বড় ধরনের লটারির ব্যবস্থা আছে। ১৫০ টা পুরস্কার। সবাই টিকেট কিনছে। আয়োজকরা ছয় হাজার টিকেট বিক্রির টার্গেট রেখেছে।
মেয়েরা সবাই একই রকম শাড়ি কিনছে। সেই শাড়ির রং আবার ফ্লোর ভিত্তিক আলাদা আলাদা। মোটামুটি ২০০ পার্লারে বুকিং দেয়া শেষ। ছেলেরাও শার্ট প্যান্ট বানিয়ে নিচ্ছে একই রকম ফ্লোর ভিত্তিক।
গার্মেন্টস কর্মীদের উচ্ছলতার মূল আর্কষণ হচ্ছে 'কালচারাল প্রোগাম'। তারা নিজেরাই এখানে পারফর্ম করবে। পিকনিকের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে তাদের রিহার্সেল। বেষ্ট পারফরমাদের পুরস্কার দেয়া হবে। তবে তারা জানে এখানে প্রতিযোগী তাকলেও প্রতিযোগিতা নেই।
একেক ফ্লোরে একেক সময় টিফিন হয়। ঘন্টা বেজে উঠলে খাবার নিয়ে একছুটে ডাইনিংয়ে। নাকে মুখে কোন রকম দিয়ে ফিরে আসে। ফিরে রিহার্সেল দেখার জন্য বসে পড়ে। অন্য সময় দুপুরের খাবার খেয়ে কেউ কেউ হাল জিরিয়ে নেয় , কেউ হালকা ঘুমে আচ্ছন্ন হয়। কিন্তু এই কয়দিন একেবারে নিয়মের ব্যতিক্রম। পিকনিকের উচ্ছলতা সবার আগে। শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা বাচ্চা গুলোকে কোলে নিয়ে মায়েরা বসে পরে প্রথম সারিতে। তাদরে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা।
রিহার্সেল এর সময়ে প্রতিটা ফ্লোরে আমার থাকতে হয়। ওদের রিহার্সেল দেখতে হয়। সামান্য দায়িত্ব আমাকে দেয়া হয়েছে। ওদের রিহার্সেল আমি বেশ উপভোগ করি।
নাচ গান কৌতুক। পরিবেশনার অভাব নেই। এরা কেউ পেশাদার নয়। তবে এদের কেউ কেউ শাবনূর হবার স্বপ্ন দেখেছিলো। জন্মের পর মা হয়তো বলেছিলো দেখতে শাবানার মত। কেউ কেউ সালমান শাহ , কেউ কেউ শাকিব খান। অথবা কেউ গান গেয়ে আসিফ আকবর।
কিন্তু ভাগ্য এদের সেখানে নেয় নি। সেলাই মেশিন চালায়। এরা কেউ শাবনূর না শাকিব না। এরা যে সেলাই মেশিনের সাথে দেশের বিশাল অর্থনীতি চালায় সেটা কেউ এদের বলেনি। এদের কেউ বলেনি দেশের জন্য এরা চিত্রনায়িকাদের চেয়েও দামি।
কিছুদিন পর রিহার্সেল শেষ হবে। রিহার্সেলের ৪৫ মিনিট অনেক কিছু ভুলে থাকে তারা। কিংবা কে জানে চেহারায় প্রকাশ করে না হয়তো। মিউজিকের তালে তালে করতালি দিতে দিতে নিশ্চয় ভেসে আসে আলু ভর্তা আর সাদা ভাতের ছবি। সপ্তাহে একদিন মাছ , একদিন পোল্ট্রি মুরগি। আগামী দিনে হয়তো এটাও আর সম্ভব হবে না। না , সেই দুঃচিন্তা তাদের চেহারায় ভেসে উঠে না। কি দারুন ভাবেই না ঢেকে রাখে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:০২