somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কর্পোরেট ডেস্ক থেকে আমার ব্লগিং .....

০৪ ঠা মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি : আমার ডেস্কটপ

আজ অফিসে কার্ড পাঞ্চ করলাম ৯টা ৫৭ তে। মানে ৫২ মিনিট লেট। ৫ দিন লেট হলে একদিনের সেলারি কাটা যাবে।
এটাই নিয়ম।কিন্তু আজ অফিসে ঢোকার কথা ছিল ৯ টার আগে।


আজ শনিবার। বাসে উঠেছিলাম নিউমার্কেট। রাস্তা তুলনামূলক ফাঁকা। কলাবাগান , ধানমন্ডি ২৭ কোথাও জ্যাম নেই। একটানে বিজয় স্মরণী আর পর মহাখালী ফ্লাই ওভার। ফ্রাই ওভার থেকে নেমে চেয়ারম্যান বাড়িতে বাঁধলো বিপত্তি। ঘড়িতে ৮ টা ২০ বাজে। গাড়ি থমকে দাঁড়ালো। চাকা বন্ধ। চেয়ারম্যান বাড়িতে কখনই জ্যাম পরে না। কারণ কি ?
ভিআইপি যাবে ? প্রধানমন্ত্রী তো ক্যান্টম্যান্টের রাস্তা ব্যাপার করে।
শোনা গেল , সৈনিক ক্লাবের সামনে বাস এক্সিডেন্ট করেছে। ক্যান্টনম্যান্ট দিয়ে যাতায়াত করা ট্রাস্ট পরিবহন একজন মহিলা গার্মেন্টস কর্মীকে ধাক্কা দিয়েছে। সেটা নিয়ে বিক্ষোভ চলেছে। রাস্তা অবরোধ।

মোটামুটি ১ ঘন্টা বাসে বসা। অফিসের টেনশন , কাজের টেনশন। দেরি করে অফিসে ঢুকলে কেমন যেন অস্বস্তি লাগে।

আমি অফিস পিসি অন করে সর্ব প্রথম ওয়াউটলুক ওপেন করি সেইসাথে ওপেন করি সামহোয়্যার ইন ব্লগ। আউটলুকের মেইল গুলো চেক করি। গুরুত্বপূর্ণ মেইলে তাৎক্ষণিক রিপ্লাই দেই। মেইল অনুযায়ী পদক্ষেপ নিই। মূলতঃ অফিসে আমার কার্যক্রম শুরু হয় মেইল চেকের মাধ্যমে।

একজন মার্চেন্ডাইজারের হিসেবে গার্মেন্টসের অর্ডার নেওয়া থেকে শুরু করে শিপমেন্ট পর্যন্ত যাবতীয় কাজের 'সঠিক সমন্বয়' করতে হয় । আবার বলছি সঠিক সমন্বয় করতে হয়।
আরো ভালোভাবে বলতে গেলে একজন মার্চেন্ডাইজারকে বায়ার, সাপ্লায়ার, স্যাম্পল টিম, ক্যাড টিম, ডিজাইন টিম, এক্সপোর্ট ও ইমপোর্ট সার্ভিস , সিএনএফ সার্ভিস , কমার্শিয়াল টিম, প্রোডাকশন টিম, টেস্টিং ল্যাব, ফিনিশিং টিম, আই.ই.টিম, স্টোর ডিপার্টমেন্ট, ওয়াশিং ডিপার্টমেন্ট, কিউসি সহ সবার সাথে সঠিক সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ উদ্ধার করতে হয়।

এইতো গেল শুধু মাত্র সমন্বয়ের কাজ। এর বাইরেও ইনকোয়ারি শিট , প্রিকস্টিং , কস্টিং, সোর্সিং , বুকিং , ইনফরমেশন ডিটেলস শিট , প্যাকিং লিস্ট সহ খুঁটিনাটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিয়মিত করতে হয়।
এরমধ্যে মালিক কিংবা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ডাকে দিনের ভেতর দশবার তাঁদের রুমে দর্শন দেয়া , জবাবদিহি করা ইত্যাদি তো আছেই।

আমাদের নিজস্ব পাঁচটা ফ্যাক্টরি আছে। এদের মধ্যে ৩টা ফ্যাক্টরিতে আমার কাজ চলে। সেই সুবাদে সাভার ইপিজেড আর গাজীপুরে মাঝে মধ্যেই ছুটতে হয়। আমার চাকুরী মূলত ডেস্ক বেইজ হলেও মাথাটা এখানে ওখানে ছুটে বেড়ায়। ডেস্কে যতক্ষন থাকি ততক্ষন কাজের ফাঁকে সামুতে চোখ বোলাই । সামুর ট্যাব সব সময় খোলা থাকে।
আমাদের লাঞ্চ টাইম ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত। এর মধ্যেই নামাজ আর খাওয়া সেরে নিই দ্রুত। কাজের প্রেশার বেশি থাকলে লাঞ্চের সময় ঠিক থাকে না। মার্চেন্ডাইজারা টাইমলি অফিসে আসে ঠিকই কিন্তু খাওয়ার আর যাওয়ার টাইমের কোন ঠিক থাকে না। যেদিন গুরুত্বপূর্ণ ইন্সপেকশন / শিপমেন্ট থাকে সেদিন রাত করে বাড়ি ফিরতে হয়। তবে আমার চেয়ে অনেকেই অনেক বেশি প্রেশার নিয়ে কাজ করে থাকে। অন্যান্য জায়গাতে মার্চেন্ডাইজারের প্রেসার আরো বেশি।

আমি সামুর প্রতি আসক্ত। সামু কোন নেশা হয়তো আমার কাছে। আমি সামুর একজন নিবেদিত ব্লগার বলেই মনে করি। অফিসে আমার অফুরন্ত সময় নাই সামুকে দেয়ার। যেসময় টুকু অন্যরা কাজ শেষ করে অন্য ডেস্কে সময় দেয় , সেই সময় আমি সামুর খোলা ট্যাবে দিয়ে থাকি। সুযোগ পেলেই অনেকেই দিনের মধ্যে দুইবার নিচে যায়। অফিস রুলসে কিছুটা শিথিলতা আছে। সামান্য সময়ের জন্য অফিসের বাইরে যাতে পারবে। আমাদের অফিসে কোনো স্মোকিং জোন নেই। তাই অনেকেই এই সুযোগটাকে কাজে লাগায়। রেজিস্টর খাতায় রেজিট্রি করে বের হতে হয়। আউট টাইম আর ইন টাইম পরে চেক করে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের লোকজন।

খুব প্রয়োজন ছাড়া আমি বাইরে যায় না। সেই সুযোগে আমি সামুতে ঢুকি। অল্প অল্প লিখি। পড়ি অনেক কিন্তু কম মন্তব্য করি। কারণ সুযোগ থাকে কম। সুযোগ বুঝে লিখি। সামুর বেশির ভাগ লেখাই আমার 'কর্পোরেট ডেস্ক থেকে' !

শুক্রবারে আমি সামুতে এক্টিভ থাকি না। ছুটিরদিন গুলো আমার স্পেশাল। ঐদিন গুলো আমার ছেলে আর পরিবারের জন্য। তাই ঐদিনগুলোতে পোস্ট আর কমেন্ট করা হয় না। তবে পড়ি ঠিকই।

অফিসের ব্যস্ততা আমার ব্লগিংয়ের বাঁধা হতে পারিনি। চাকুরীজীবীদের ব্লগিংয়ের এছাড়া আর কোন উপায় নেই। অন্তত আমার কাছে নেই। আমি এভাবেই ব্লগিংয়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। এটাই আমার কাছে স্বভাবিক মনে হয়েছে।

আমি অফিসের কাজে ফাঁকি দেই না। অফিসকে আগাম না জানিয়ে ছুটি কাটালে ওই ছুটির জন্য আমি এপ্লিকেশন করি না , ইচ্ছা হয় না। অফিস আমার দ্বারা কোন ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি।


মাঝে মাঝে দশতলা অফিসের শার্সিতে দাঁড়ালেই হলুদ রোদ ঝলকানি দেয় চোখে। পড়ন্ত বিকেলের হলুদ রোদ। সেই চোখ ধাঁধানো হলুদ রোদে খুঁজে ফিরি কবেকার হারিয়ে যাওয়া মালাইয়ালা, রাশিয়ান শৈশব , পুঁটিমাছ ধরা বড়শি কিংবা ইমরান খান লেখা ক্রিকেট ব্যাট। খুব ইচ্ছে হয় দুহাত প্রসারিত করে রেললাইন ধরে হেঁটে যায় দূর থেকে দূরে। ভাবতে ভাবতে ফিরে আসি ডেস্কে। অনেক কাজ বাকি আছে। আমার সামনে নিরেট অনুভূতিহীন কম্পিউটার। চোখ রাখি হলুদ ডেস্কটপ ব্যাকগ্রউন্ডে, কেমন জানি ঝাপসা লাগে । নিজেকে কাঠঠোকরা মনে হয়। কাজে নিমগ্ন কর্পোরেট কাঠঠোকরা।

ছুটির ঘন্টাটা শুরু হলে বুকের মধ্যে আনচান করে। । বাসায় ফিরবো। ছেলে অপেক্ষা করছে। বড় হয়েছি অনেক আগে - তবুও "ছুটি" ,"ফেরা "এই শব্দ গুলোতে আজও মন আনচান করে । কিবোর্ডে আঙ্গুল রাখি । বিক্ষিপ্ত অনুভূতি গুলো সংকলিত করি গুটি গুটি অক্ষরে । এটাই আমার ব্লগিং ! হয়তো কর্পোরেট কাঠঠোকরারো নিজস্ব একটা জগত আছে । সেই কর্পোরেট ডেস্ক থেকে কাঠঠোকরারা ব্লগিং করে।



---------------------------
কর্পোরেট ডেস্ক থেকে
স্বপ্নবাজ সৌরভ
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:৩২
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×