বাড়ির কাছে আরশী নগর
সেথা পড়শী বসত করে,একঘর পড়শী বসত করে
আমি একদিনও না দেখিলাম তারে।।
আরশি শব্দের অর্থ হচ্ছে আয়না। আসলে এই আয়নাটা হলো মানুষের মন যেখানে কিনা বস্তু জগতের সব কল্পনা , অনুভূতি , সব দৃশ্য চিত্রপটের মত প্রতিফলিত হয়। আরশি নগর বলতে ফকির লালন এমনটাই বুঝিয়েছেন।তবে এই আরশি নগরে আবার একজন পড়শীর বসতি। সেই পড়শীর হাত পা কিছুই নেই। এই পড়শীর কাছে যেতেও অনেক বাধা। তবুও চরম আকুতি নিয়ে লালন বসে থাকেন পড়শীকে দেখার জন্য। সে পড়শীর স্পর্শে পরম যাতনা দূর হতো। অথচ ভয়ংকর সত্যটা হচ্ছে এই পড়শী আরশি নগরে বসবাস করলেও কাছে লক্ষ যোজন দূরে। সেই ব্যবধান ঘোচারোর নয়।
মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি পড়শীকে খুঁজেছেন।
তিনি বলেছেন -
প্রভু তুমি তো সব জায়গায় বিরাজমান। তবুও আমি তোমাকে পাগলের মতো খুজছি।
আবার এটাও বলেছেন -
আমি প্রভুকে বললাম, আমি তোমাকে জানার আগে মরবো না! প্রভু উওর দিলেন, যে আমাকে জানে সে কখনো মরে না!
এই পরশীকে খুঁজতে খুঁজতে বিপন্ন মনসুর আল-হাল্লাজ বলেই ফেললেন, আনাল হাক্কা, অর্থাৎ আমিই পরম সত্য। এরপর বাঁধলো বিপত্তি।
সুফিরা যদিও জানতেন, মনসুর আল- হাল্লাজ আসলে কোন অর্থে নিজেকে আনাল হাক্ক বলছেন। আল্লাহর সাথে তাঁর নৈকট্যতা এতটাই গভীর হয়ে গড়ে উঠেছিল যে, তিনি নিজেকে 'আল্লাহ' ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেন না। তবে তাতে মনসুর হাল্লাজের শেষ রক্ষা হয়নি। তাঁর বিচার হয়। বিচারে ১১ বছর কারাবাস হয়।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে মার্চ জনসমক্ষে সেই সময়কার সরকারি বিচারকদের নির্দেশে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় হয়। তাকে হত্যা করা হয় অত্যন্ত নির্মমভাবে। হত্যার আগে তাঁকে এক হাজার বেত্রাঘাত করা হয়। এরপর তাঁর হাত-পা বিচ্ছিন্ন হয়। এরপর তাঁর মুণ্ডু কাটা হয়। পরে তাঁর দেহ পুড়িয়ে তার ছাই দজলা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। আর তাঁর কাটা মুণ্ডু ইরাকের একটি সাঁকোর উপর দুই দিন ঝুলিয়ে রাখা হয়।
আহা! পরশীর সন্ধানের কি নির্মম পরিহাস!
লিখতে ছিলাম লালনের গান নিয়ে আর শেষ হচ্ছে কোথায়! আসলে আমি লালন বিশ্লেষক নয়। মাঝে মাঝে লালনের গান নিয়ে ভাবি। কুষ্টিয়ায় বসতি বলে হয়তো একটু টান আছে আর ওখান থেকেই আমার এইসব বিক্ষিপ্ত ভাবনা।
ফকির লালন তাঁর এই গানে বলেছেন ,
পড়শী যদি আমায় ছোতো,
যম যাতনা সকল যেতো, দূরে।
ফকির লালনের যম - যাতনা দূরের জন্য কি নিদারুন আকুতি !
___________________________
লালনের গান নিয়ে পরবর্তী বিক্ষিপ্ত ভাবনাঃ
ভেবে অন্ত নাহি দেখি
কার বা খাঁচায় কে বা পাখি।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা এবং মনজুর আল-হাল্লাজ ও অন্যান্য তথ্য ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০২৩ ভোর ৪:০৩