somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজীব নূর উনার মৃত বাবাকে দেখেছিলেন.....

১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজীব নূরের বাবা মারা যান সম্ভবত করোনাকালীন সময়ে। (আল্লাহ উনাকে জান্নাত নসিব করুন ) উনি বাবাকে খুব ভালোবাসতেন। বাবাকে হটাৎ হারিয়ে ফেলাকে উনি মেনে নিতে পারেননি। উনি স্বাভাবিক ভাবেই ঘরের মধ্যে চলে গিয়েছিলেন। বাবাকে কবর দিয়ে এসে ঘরে ঢুকে বড় একটা ধাক্কা খেলেন। উনি দেখলেন উনার বিছানায় উনার বাবা বসে আছেন। রাজীব নূর উনার মৃত বাবাকে দেখেছিলেন।

আমার আব্বা মারা গেলেন ১ মাস হয়ে গেলো। ছোটবেলা থেকে কখনো ভাবিনি অন্তত একদিনেই জন্য আব্বা কে ছাড়া থাকতে পারবো। ছোটবেলায় রাতে ফুঁপিয়ে কেঁদেছি বহুবার। কাউকে কারণটা বলিনি। বলিনি আব্বা ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো ? কার সাথে হাটবো , কে পিঠে হাত বুলিয়ে দেবে। মাথার কাছে গল্পের বই রেখে দিবে , একটা রাশিয়ান শৈশব দেবে , কার জন্য পড়ন্ত বিকালে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবো ? কাউকে বলতে পারিনি কখনো সবাই ভে বছে শরীর খারাপ করছে। পেতে ব্যথা।

সেই ব্যথা নিয়ে এতো বছর কাটিয়ে দিলাম। আবার মারা যাবার আগের রাতেও ফুরিয়ে উঠলাম। আব্বাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো ভেবে। সেদিন সকালে যখন দেখলাম আব্বা মারা গেছেন , কি স্বভাবিক ভাবেই না মেনে নিলাম। চোখে কোনো পানি আসলো না , চিৎকার করে উঠলাম না এমনকি চোয়াল কাঁপলোনা এতুটুকুও ! আব্বা কে ইম্পেরিয়াল লেদার সাবান দিয়ে গোসল করানো হচ্ছে। মাই তাকিয়ে দেখছি। আব্বা ইম্পেরিয়াল লেদার সাবান ঈদে ঈদে মাখতেন। সেই কথা আগেও লিখছে। সেই স্মৃতিচারণ লিখতে গিয়ে চোখ ঝাপসা হয়েছে।
কি কিন্তু কি অদ্ভুত ! আব্বার নিস্প্রান দেহে যখন সাবান মাখিয়ে গোসল করাচ্ছে তখন একটুকুও কান্না আসলো না। সেই কান্না আমার এখনো আসেনি।
খাটিয়া কাঁধে নিয়ে যখন হাটছি তখন আবার ছেলেটা শক্ত করে হাত ধরে থাকলো। ফুঁপিয়ে বললো , "দাদা কি জান্নাতে চলে গেছে ? দাদার জন্য বড়ই রাখছি হাতের মধ্যে। দাদা কে দিয়ে দিবো। "
তখন আমার হুহু করে কেঁদে উঠা দরকার ছিল। এমন কান্না তো অনেক কেঁদেছি। কিন্তু আজ কেমন স্তব্ধ।

জানাজায় কিছু বলতে হয় ছেলে হিসেবে। সামনে হাজার হাজার লোক। আমি তেমন কিছু বলতে পারলাম না। খুব শান্ত কণ্ঠে বললাম , মোঃ রুহুল ইসলাম কারো কাছে হেডস্যার ছিলেন , কারো কাছে শিক্ষা গুরু , কারো কাছে অভিভাবক , কারো কাছে ভালো মানুষ। আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করেন মোঃ রুহুল ইসলাম কেমন ছিলেন ? আমি বললো মোঃ রুহুল ইসলাম আমার বাবা ছিলেন।
ডায়ালগ টা মোটামুটি মুখস্ত। একটুকুও আটকালো না। ঠোঁট কাঁপলোনা। চোখ ভিজলোনা। কতইনা স্বাভাবিক।
আব্বাকে পারিবারিক কবরস্থানে নিয়ে আসা হলো। কবর শোয়ানো হলো। কিছুক্ষন পর আব্বাকে আর দেখতে পারবো না। মনে হচ্ছে বারবার। চোয়াল কাঁপছে। কিন্তু চোখ ভিজছে না। এতো শক্ত আমি কখনোই ছিলাম না।
আব্বাকে কবে নামানো হবে , আমি আব্বাকে শোয়ানোর জন্য কবরে নেমে গেছি। কোনোদিন ভাবিনি আমি আব্বাকে কবরে নামাবো। কি অদ্ভত ভাবে শান্ত আছি তখন। অনেক অনেক লোক। উপরে আমার ছেলে দাদার জন্য কাঁদছে। কিন্তু কি অদ্ভুতভাবে আমি চুপ করে আছি।

কবরে মাটি দেয়া হচ্ছে। আব্বার মাথার কাছে বসে মাটি দিচ্ছি। সাথে আমার ছেলে ছোট হাতে দাদার কবরে মাটি দিচ্ছে। কে কেন বললো ফেরেস্তা মাটি দিচ্ছে। মাটি দিতে দিতে ছেলে বললো , বাবা , দাদার জন্য রাখা বড়ই হারিয়ে ফেলেছি। আমি কি দাদার কবরে বড়ই গাছ লাগাতে পারবো ?
আমি শান্ত গলায় বললাম , পারব।

আব্বা কে রেখে বাড়ি ফিরছি। বুকটা খুব ভারী হয়ে উঠছে। কলিজায় টান লাগছে। টোকা দিলেই ফেটে পড়বো হয়তো। আমার ছেলে হাত ধরে হাটছে। হাটতে হাটতে আমাকে বললো , বাবা , তুমি আমাকে এতো ভালোবাস কেন জানো ?
আমি বললাম, না।
আমার ছোট্ট ছেলেটা বললো , তোমার বাবা তোমাকে খুব ভালোবাসতো তো তাই!

বুক ফেটে কান্না চলে আসছে। আমি চুপ করে আছি। ছেলেটা আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে। হাঁটতে হাঁটতে মনে হলো- ব্লগার রাজীব নূর লিখেছিলেন , উনি উনার মৃত বাবা কে দেখেছিলেন কবর দিয়ে আসার পর। আমিও হয়তো দেখবো। দেখার সাথে সাথে হয়তো চিৎকার করে কেঁদে উঠবো।

না, আব্বাকে এখনো দেখিনি। সীমাহীন ভালোবাসা নিয়ে অপেক্ষা করছি যদিও।

নিহাল ওর দাদার মাথার কাছে বড়ইয়ের গাছ লাগিয়েছে। গাছটা বেড়ে উঠবে কিনা জানিনা। যদি বেড়ে উঠে , প্রচুর বড়ই ধরবে তাতে। পাখপাখালির আনাগোনা হবে। মানুষ জন খাবে। আমাদের বাড়িতে অনেকগুলো ফলের গাছ ছিল , প্রায় সবই আব্বার লাগানো। তিনি গাছের ফল বিতরণ করতেন।
আমাদের বাড়ির সাথে সেই বড়োই গাছটা ছিল , সেই গাছের পাশে আব্বা চেয়ার নিয়ে বসে থাকতেন। প্রচুর বড়ই ধরলে তিনি খুব খুশি হতেন। বড়োই যখন পাকা শুরু করতো তখন পাখিদের আনাগোনা বাড়তো। সারাদিন কিচিরমিচির। বেশি কিচিরমিচির করতো পাড়ার বাচ্চারা। কেউ বড়োই গাছের পাশ দিয়ে গেলে আব্বা বলতেন , কিরে ? বড়োই লিবি (নিবি) ?




সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৬
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×