somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুচিতাকে লেখা প্রথম ও শেষ চিঠি

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শুচিতা,

লিখব লিখব করে দিন মাস বছরের হাত ধরে
পেরিয়ে গেছে অনেক সময়, আর এরই মাঝে,

বহুবার অমাবশ্যার আঁধারকে আঁচলে ঢেকে
আকাশে উঠেছে তপস্বী চাঁদ…৷
বহুবার শৈল্পিক মাকড়শা সুনিপুন,
বানিয়েছে তার সূক্ষ জালের মরণ ফাঁদ…৷


লেখা হয়ে ওঠেনি, কিন্তু আজ তোকে খুব লিখতে ইচ্ছে করছে…৷

আমাদের পেরিয়ে আসা শৈশব ছিল সরলানন্দময় সুন্দর,রূপকথার
মতো আবাল্য সেই দিনগুলোর সুবর্ণ স্মৃতি রোমন্থনের
অলস মাড়িতে হাতড়ানোর ইচ্ছে এখনও জাগে মাঝে মাঝে ৷

তোর কি মনে আছে বরফ-পানি খেলতে নিয়ে অনেকক্ষণ
বরফ বানিয়ে রাখায় সে কি কান্না তোর অথবা লুকোচুরি
খেলতে খেলতে সবার অগোচরে আচমকা জড়িয়ে ধরা...!

আমাকে কানে ধরতে না চাওয়ার অপরাধে মাষ্টার মশাইয়ের হাতে
কতই না মার খেতে হয়েছিলো ক্লাস ফোরের ইংরেজি ক্লাসে…!

তোর কি মনে আছে চুপিসারে আমরা শিউলী ফুল কুড়াতে গিয়ে
দেখি গভীর রাতের ঝিঁ ঝিঁ ধরানো মোহময় নীরবতায় তখনো
সুগন্ধি ফুলগুলি বৃতির মায়া ছেড়ে ঝড়ে পড়েনি মাটিতে…!!

আমাদের সে শৈশব ছিল ফুল-মালা, দুষ্টুমি-খেলাধুলা, গল্প-হাসি,
আর আনন্দমাখা রূপকথার/সিনেমাটিক বাস্তবতা আর কৈশোর অবিমিশ্র ৷

এরপর তুমি দ্রুত বদলাতে শুরু করলে তোমার শরীরের মতো,
তোমার সৌন্দর্য আর পরিপার্শ্ব জ্ঞাতসারেই অহঙ্কারী করে তুলল তোমাকে ৷


সময় গড়াতে থাকে, বাড়তে থাকে ব্যবধান, সময়ের এই
গতিময়তায় তুমি গা থেকে মুছে ফেলে দিলে ধুলো/মাটির মায়া-আবরণ, তার পরিবর্তে গায়ে মাখালে বোতলে ভরা সুগন্ধি আর
চোখে রঙিন স্বপন ৷ মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন আর টানাটানি তোমার সহনশীলতার সীমা অতিক্রম করে ৷


কলেজে জীববিজ্ঞানের টেবিলে তেলেপোকার ব্যবচ্ছেদ আর কৈশোর পেরোনো তরুনের জীবন সমীকরণ মিলে মিশে একাকার তখন ৷
যেন হারানো লাটিমের মোহাচ্ছন্ন ঘূর্ণন আমার জীবনে এনে দিল
মাহাত্মা গান্ধির এক্সপেরিমেন্টাল দার্শনিকতা আর নারী বৈরাগ্য ৷

অনার্স শেষ না হতেই তোমার বিলাসী স্বপ্ন পূরন হলো ৷
সংক্ষিপ্ত এক পারিবারিক অনুষ্ঠান আর ওষ্ঠের ত্রি-কম্পনে
তোমার সে বহু কাঙ্খিত বিলাসী জীবনের সরল সূত্রপাত ৷
শুনেছি অচিরেই হয়েছো প্রবাসী পতির কোটপরা বিদেশি মেম ৷
তোমার বহু কাঙ্খিত যমজ সন্তান নিয়ে বেশ সুখীই হয়েছো ৷

কোন অভিযোগ ছিল না, নেই…৷

আমার অনার্সের রেজাল্ট বেশ ভালো হয়েছে, প্রাইভেট একটা ফার্মে
যোগও দিয়েছি কদিন হলো, ঢাকাতেও এখন কর্পোরেট কালচার, বুঝলে ?

কিন্তু এসব আমাকে টানে না, এখনও ইচ্ছে করে গ্রামে ফিরে যাই,
মনটা আমার আজও পড়ে আছে যে শাপলা আর শালুক শিকড়ে…৷

তোমাকে মনে পড়ে মাঝে মাঝে, চৈত্রের ঘুঘু ডাকা
নির্জন বিষন্ন দুপুরে
তবু বুকের ভেতর একরাশ হাহাকার ডুকরিয়ে কেঁদে ওঠে…!

আর মনে পড়ে বোদলেয়ার:

তোমাকে হারালাম মানে আমরা দুজনেই
হারালাম
……………………………………………
……………………………………………
তবে আমাদের দুজনের মধ্যে তুমিই
হারাচ্ছো বেশি
কারন আমি অন্য কাউকে ভালোবাসতে
পারবো
যেমনটা বেসেছি তোমাকে
কিন্তু তুমি কখনোই পাবে না তেমন
ভালোবাসা
যেমনটি বেসেছি আমি ৷


জীবনের গতিময়তা আর বাস্তবতার সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্সে
কেউ কেউ কেন্দ্রমুখী হয় সফলতা আর সুখের নিগরে, আর
কেউ কেউ ছিটকে পড়ে চলতে থাকে তবুও নিয়তির অপার পরিহাসে…৷

শিউলী তলার অপার্থিব রাত আর লুকোচুরি খেলার দিন
ফুরিয়ে আসে একসময় ৷

তোমার চোখের রঙিন স্বপ্ন আর আমার জীবনের
এক্সপেরিমেন্টাল দার্শনিকতাও
সময়ের ধুলোয় একদিন ঢাকা পড়ে যাবে…
আমি ভালো আছি, ভালো থেকো...। ৷
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:২১
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×