একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আর চুপ করে থাকতে পারলামনা। আমাদের দেশে আসলে কি চলছে? আমরা কি আদৌ সভ্যতার দিকে এগুচ্ছি নাকি অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে চলছি? প্রশ্নটা জাতির বিবেকের কাছে রয়ে গেল।
আমরা জানি শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। কিন্তু জানা ও দেখার মধ্যে কি আসলেই মিল পাচ্ছি? আমরা জানি একটি দেশকে যারা নেতৃত্ব দেন তাদের সৎ, দক্ষ ও উন্নত মন-মানুষিকতার হতে হয়। আমাদের দেশে অধিকাংশ নেতাদের গুণাবলীর কথা আর নাই বা বললাম। ধরেন আপনি একটি হীরা একজন ভিক্ষুককে দিলেন সে কিন্তু এটির দাম বুঝবেনা। কেউ তাকে ১০০ টাকা দিলেই সে এটি দিয়ে দিবে। কিন্তু আপনি যদি এটি কোন গহনার কারিগরকে দেখাতেন তাহলে সে কিন্তু এটার উপযুক্ত দাম অনুধাবন করে দামাদামি করত। আমি এই গল্পটি কেন বললাম আমার সম্পূর্ণ লিখনী পড়লে হয়তো অনুধাবন করতে পারবেন।
২০১৫-২০১৬ সেশনের মেডিকেল এডমিশন টেস্টে কি হয়েছে আমি আর নতুন করে কিছু বলবনা। তার দুটি কারণ রয়েছে। ১। এক কথা শুনতে শুনতে আপনারা অসহ্য হয়ে গেছেন। ২। আমাদের দেশের বেশীরভাগ মানুষ স্বার্থপর হয়ে গেছে। (বলতে আমার নিজেরও কষ্ট হচ্ছে।) তাদের ভাব-সাব এমন যে 'আপনি বাঁচলে বাপের নাম।' সবাই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছে।
সমস্যা নেই আপনি আত্মকেন্দ্রিকই থাকুন। আপনার জন্যই আমি কিছু বলছি, শুনে আপনি সিদ্ধান্ত নিবেন আপনি কি করবেন! আজ আপনি অসুস্থ হলে যে ডাক্তারের কাছে যান কেন যান? সুস্থ হওয়ার জন্য নাকি মৃত্যুপথে আরো এক কদম এগিয়ে দেওয়ার জন্য। কোন ডাক্তার যদি আপনার উপর ভুল চিকিৎসা চালায় আপনি মেনে নিবেন। আমাদের দেশের জনসংখার তুলনায় চিকিৎসক নিতান্তই অল্প। ১৯৮১ থেকে ১৯৯২-এর মধ্যে চিকিৎসক জনসংখ্যার অনুপাত অর্ধেক হ্রাস পেয়ে হয় ১ : ৫২৪২ এবং ২০০০-এর শেষ নাগাদ তা দাঁড়ায় ১ : ৪৭১৯। Click This Link হ্যাঁ! এত অল্প হওয়া সত্ত্বেও আমরা যথেষ্ট আনন্দিত কারণ আমাদের ডাক্তাররা বিশ্বমানের। কিন্তু বর্তমানে যে হারে বোয়া ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ছে আমরা শংকিত। একটা বোয়া ডাক্তার মানে সে প্রায় ৫০০০ রোগীর দায়িত্ব নেবে। এই ৫০০০ জনকে ভুল চিকিৎসা দিবে। অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে। আপনি কিংবা আপনার আত্মীয়-স্বজন এর মধ্যে পড়বেননা তার কি নিশ্চয়তা আছে? এইবার যারা প্রশ্ন পেয়ে চান্স পেল তারা কি আদৌ ভালোমানের ডাক্তার হতে পারবে। ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। এপনি শিওর থাকেন এগুলো মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পরও তাদের মাথার দু নাম্বারি চিন্তা-ভাবনা ছাড়তে পারবেনা। তারা চাইবে কীভাবে সেই পরীক্ষার ও প্রশ্ন ও আউট করা যায়! যদি সেটা না করা যায় তাহলে তাদের অর্ধেক ঝড়ে পড়বে। সেই ক্ষতিও কিন্তু জাতিকে পোষাতে হবে।
এবার আসুন আমাদের দেশে যারা মন্ত্রীত্বে আছেন তাদের ব্যাপারে। উনারা দপ্তরবিহীন মন্ত্রনালয় থেকে শুরু করে যেকোন মন্ত্রনালইয়ে যে কেউ দায়িত্ব পালন করতে পারেন (মাফ করবেন, ছোট করে দেখছিনা)। কিন্তু সেই জায়গায় যদি একজন অবসরপ্রাপ্ত আর্মি অফিসার পেতেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়, একজন ডাক্তার পেতেন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ইত্যাদি তাহলে বিশ্বাস করুন সবাই সবার দায়িত্বটা আরেকটু ভালো করে করতে পারতেন। আর আমরা সমস্ত দেশবাসী উপকৃত হতাম। একজন ডাক্তার কোন সময় চাইবেননা কেউ প্রশ্ন পেয়ে অন্যায়ভাবে ডাক্তার হোক। কারণ তিনি জানেন মেডিকেলে চান্স পাওয়া কত কষ্টের, কত রাতের নির্ঘুম থাকার ফল, কত বছরের বীজ বোনা স্বপ্নের বাস্তবায়ন! চান্স পাওয়ার পরও মানুষের জন্য নিজের সারাটা জীবন বিলিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি, নিজের বোনের বিয়েতে সময় দিতে না কষ্ট সব তিনি বুঝবেন। যারা ডাক্তারী পেশাকে পেশন হিসেবে নিবে এ পেশা শুধু তাদের জন্যই তিনি এটা বুঝতে পারবেন। এভাবে প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাজকে গভীর থেকে চিনতে পারতেন যার ফলে উনারা আমাদেরকে একটা উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করে দিয়ে যেতে পারতেন যাতে আমরা উনাদের অসমাপ্ত কাজ করে দেশকে আরো কিছু এগিয়ে দিতে পারি!
কোন বাবা যদি বলেন, "আমার ছেলে নষ্ট, কুচক্রকারী, মিথ্যাবাদী। কিন্তু আমি অনেক সৎ, আমার কোন দোষ নাই।" এটা কেউ মেনে নিতে পারবেনা। কারণ বাবা হিসেবে উনার একটা দায়িত্ব ছিল। নষ্ট হলেও উনাকেই ভালো করার পদক্ষেপ নিতে হবে। আর না হলে উনার উপরই দোষ বর্তাবে। কারণ উনি অভিভাবক।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমার অন্তর থেকে সালাম ও শুভেচ্ছা নিবেন। আপনি আমাদের অভিভাবক। তাই আল্লাহর কাছে যাওয়ার আগে আপনার কাছে শেষ মিনতি। ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা সম্বন্ধে আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন। কিছু দুষ্কৃতকারীরা আপনার সুনাম নষ্ট করতে চাচ্ছে। আপনার সোনার বাংলার স্বপ্নকে ধূলিষ্যাৎ করতে চাচ্ছে। আমরা আপনার কাছে শুধু চাইবো আপনি শিক্ষার উপযুক্ত মর্যাদা দিবেন। আপনার স্বপ্নের সোনার বাংলা দেখতে চাইবেন, আর আমাদের আপনার সেই স্বপ্নের সোনার ছেলে-মেয়ে হিসেবে দেখতে চাইবেন। আপনি চাইলে এদেশে আবার সঠিক মেধার মূল্যায়ন হবে। আপনি আরেকবার মেডিকেলে আগের ফলাফল বাতিল করে আরেকবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিন। যোগ্যদের সুযোগ দিন।
-আপনার একান্ত অনুগত
সৌরভ খাঁন
http://www.prothom-alo.com/opinion/article/235132 আর কিছু বলার নেই। যদি আমাদের দেশে এভাবে পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি, ভার্সিটি, মেডিক্যাল এমনকি বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন পাশ চলতে থাকে তাহলে মেধাবীরা হাতে কলম তুলে নেবে। আর লিখালিখি করবেনা... সব সম্ভবের দেশে প্রত্যেক মানুষরূপী জানোয়ারদের কলম দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করবে। হাতে অস্র নিবে। মেধাবীরা যেটাই করে ভালোভাবেই করে। তারা যেমন জাতিকে নিয়ে আলোর বেগে সামনে এগিয়ে চলতে পারে তেমনি খারাপ কাজে নামলে খারাপের রাজা হতে পারে। এরা ভালো পথে থাকুক, দেশের উন্নয়নে কাজে লাগুক এই প্রত্যাশায় আজকের লেখা ইতি করলাম।