০৮/১১/১৯৯৫ ইং
প্রাণপ্রিয় বৌ,
চিঠির শুরুতে আমার ভালবাসা নিও। তুমি জানিয়া খুশি অইবায় আমি ভালা বেতনর কাম পাইছি। তোমারে চিঠি লেখমু লেখমু করিয়া আর লেখা অয়না। ঘুম থাকিয়া উঠিয়াউ যে বিয়ান্তুবেলা বারোই, আর হাইঞ্জাবেলা ঘরো আই। মাদানে একটু খাওয়ার সময় দে। আর বিয়ালকু তো শরীরে আর মানেউ না, খালি মনো আয় কত সময়ে শেষ অইবো আর ঘরো যাইমু। যাই হোক কারখানা থাকিইয়া বাসা খানদাত হওয়ায় লায় লায় হাটিয়া যাইতাম পারি যার লাগি ভাড়া ইগুন্তা বাঁচি যায়। মনো করলাম দুই পয়সা বাঁচাইয়া কিচ্ছু করতাম ফারমু। আর কিতা যে কইতাম? ইকানোর মানুষ ইতায় আমরার লাখান মাতইন্না। ইতারে বুঝানিত গিয়া আরো হেরান অইযাই। তারফরেও যে চলি যাইতাম পাররাম এর লাগি ভালাউ লাগের। আম্মারে কইও দোয়া করতা আমার লাগি। আব্বার লাগি টর্চ লাইট একটা কিনছিলাম কিন্তু লাগেজ ও হারানির সময় হাত থাকি ধুরুমছান্দি পড়িয়া ভাঙ্গিগেছে। আমি আর কয়দিন ওর মাঝে আইমু যখন তখন আব্বার লাগি আরেকটা লাইট কিনিয়া লইয়া আইমু। আর মখলিস আওয়ার সময় মছাত বান্ধিয়া হাতখরার আচার পাঠাইও। আর হুটকি ও দিলাইও কিছু। আর রুম্মন উগুরে কইও আর তার বিছার যেন আমার কানো না আয়। যেছাগুর যেছা মাতো হামাইয়া ফাল মারে আর বেজাল করে! আর তার উরাতাড়া হামাইগেলো কেনে বিদেশ আওয়ার লাগি? ইনো যে কি পরিমাণ কষ্ট বুঝের না তো।
আজকে আর লেখরামনা। দশ হাজার ট্যাখা ফাঠাইলাম। কুনোছুরত অউ মাসটা চলিযাও। আর মাসো বাড়াইয়া ফাঠাইমু। সবরে লইয়া ভালা থাকিও। আব্বা আর আম্মারে আমার ছলাম দিও। আমার আওয়ার বার ছাইতানা কইও। কইও আরো তোরা কয়টা ট্যাখা জমাইয়া এমনেউ আইমু। আল্লাহ হাফেজ।
ইতি
উসমান উদ্দিন
বিঃদ্রঃ যদিও লেখাটি কাল্পনিক। তবুও একসময় সিলেটী ভাষায় এভাবে সিলেটীরা দূর থেকে তাদের আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের সাথ্বে যোগাযোগ রাখত। সেই চিঠিগুলোতে যতটা আবেগ নিয়ে লেখা হত তারচেয়ে বেশি আবেগ মিশ্রিত কন্ঠে পরিবারের সবাইকে এক জায়গায় বসিয়ে পড়ে শুনানো হত। সে গুলো ছিল যেন জীবন্ত কাগজ। তাই সেই চিঠিগুলো যত্নের সাথেই সংরক্ষণ করে রাখতো প্রিয়জন।