somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দাহকালের গল্প: ব্যবসায়ী

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঘরটা আমার বাড়ি থেকে একটু দূরে, এক কক্ষ বিশিষ্ট একটা ঘর। সেটার ভেতরে ঢুকলেই দেখতে পাওয়া যায় দু’ধারে দু’সারি পরিপাটি বেঞ্চ, সেগুলোর সামনে একটা টেবিল, একটা চেয়ার, আর তারই কাছাকাছি দেয়ালে ঝোলানো একটা ব্লাকবোর্ড। এবং যদি বাইরে থেকে ঘরটাকে সম্পূর্ণ চোখে ভালো করে দেখা হয়, তবে চোখে পড়বেই একটা একাধিক রঙা সাইনবোর্ড। সেটাতে বড় বড় করে লেখা-

আইডিয়াল বয়েজ কোচিং সেন্টার
প্রযত্নে: মুহাম্মদ রেজাউল করীম
এখানে ৮ম, ৯ম এবং ১০ম শ্রেণীর ছাত্রদেরকে সাধারণ গণিত এবং ইংরেজী বিষয়ের উপর শিক্ষা প্রদানের সুব্যবস্থা রয়েছে



ঘরটাতে ঢুকতেই হাসিতে সম্পূর্ণ মুখটা আমার ভরে এলো নীরবে- যে ঘরটা কলেজপড়ুয়া ছোটো মেয়েটার শিক্ষাখরচের একমাত্র উৎস, পরিবারের ৫ সদস্যের ভরন-পোষণের একমাত্র সংস্থান, একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক- এই আমার অন্যের দ্বারস্থবিহীন বেঁচে থাকার একমাত্র ক্ষেত্র, সেই ঘরটা আজ ভরে গেছে ছাত্রে, শূন্য নেই একটা বেঞ্চও। এখানে ভর্তি হওয়া সব ছাত্রই বোধহয় উপস্থিত হয়েছে আজ। ব্যাপারটা দেখে আনন্দে প্রায় জল চলে এলো আমার চোখে।
আমাকে দেখতে পেয়েই সবকিছু ফেলে মেয়েটা চলে এলো আমার সামনে, এবং অবাক হলো সে ভীষণ। বললো, ‘আব্বা! তুমি!’
সঙ্গে সঙ্গে আমাকে সম্মান জানাতে উঠে দাঁড়ালো সবাই একসাথে। সমস্বরে সবাই বললো, ‘আস্সালামু আলাইকুম স্যার।’
একদন্ড পরেই মেয়েটা অবাক হলো আরো, এবং প্রায় সট্কে পিছিয়ে গেলো বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো। বললো, ‘আব্বা, তুমি কাঁদছো?’ তারপর আমাকে চেয়ার দেখিয়ে আবার বললো, ‘এসো আব্বা, বসো।’
তবে কি আমি কাঁদছি?
মেয়েটাকে বিশ্বাস করলাম- হ্যাঁ, আমি কাঁদছি। এবং চেয়ারটাতে আসীন হয়ে চশমাটা খুলে চোখ দু’টো মুছে নিয়ে সামনের সবার দিকে তাকালাম। হাত উঁচু করে সবাইকে বললাম, ‘বোস্ সবাই।’ তারপর আমার সে দৃষ্টিতে এক ধরনের বিশ্বাস উঠে এলো, এবং কন্ঠেতেও- ‘আজ আমি কাঁদছি। কেনো জানিস্? খুব আনন্দে। মানুষ যখন খুব দুঃখ পায়, তখন সে কাঁদে; আর যখন খুব আনন্দ পায়, তখনও তাঁর চোখে পানি আসে, সে কাঁদে। অনেক দিন পর তোদেরকে এভাবে, একসাথে দেখছি আজ- আমার খুব ভালো লাগছে। খুবই ভালো লাগছে।’
কিন্তু, কখন একসময় কেমন যেনো অন্য রকম হয়ে গেলাম আমি- সপ্তাহ খানিক অসুখে পড়ে ছিলাম। তাই কোচিংটা চালাবার দায়িত্ব দিয়েছিলাম মেয়েটার উপর। অথচ যেদিন দিয়েছিলাম, সেই দিনটাতেও এতো ছাত্র আসে নি। আজ দু’দিন হলো অসুখমুক্ত হয়ে উঠেছি। ভাবছি কাল থেকেই আমি কোচিংটা চালানো শুরু করবো আবার।
‘গম্ভীর হয়ে গেলে যে আব্বা- কী ভাবছো?’
এবারেও বিস্ময় মেয়েটার কন্ঠে। সেই বিস্মিত আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে নড়েচড়ে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করলাম আমি, এবং বোধহয় হলামও।
‘না, কিছু না।’
কিন্তু, আমি কি গম্ভীর হয়ে গিয়েছিলাম?
হ্যাঁ, আমার সম্পূর্ণ চেহারাতে এতোক্ষণ গাম্ভীর্য ছিলো বেশ- এবারেও বিশ্বাস করলাম মেয়েটাকে। অসংখ্য জনের প্রশংসার পাত্রী মাষ্টার্সপড়ুয়া আমার সুদর্শন এবং সর্বাধিক প্রিয় মেয়েটা- প্রেয়ন্তীকে বিশ্বাস করলাম।


বাজারের থলেটা আমার হাতে তুলে দিয়ে ছোটো মেয়ে শ্রেয়ন্তী বলে গেলো, ‘মা বলেছে ঘরে কোনো তরকারি নেই।’
কেমন মুমূর্ষ করা দৃষ্টিতে থলেটার দিকে চোখ চলে গেলো আমার- এম্নিতে কোচিংটা প্রায় বন্ধ। প্রেয়ন্তীর কাছ থেকে দায়িত্ব আবার বুঝে নেবার পর কয়েকটা দিন উপস্থিতি ভালো ছিলো ছাত্রদের। তারপর আবার সেই শূন্যতা, ফাঁকা ফাঁকা। তারওপর এই থলে। থলেটার অনেক খাই হয়েছে, দু’দিন অন্তর অন্তর আলু-পটল, ঢেঁড়স-বেগুন, ডাল-চাল, সাবান-সোডা, কি কম গেলানো হয় ইনাকে! তবু ইনার খাই যায় না- রাক্ষস! হা-ভাতে! গিলে-টিলে দু’দিন যেতে না যেতেই বাবুর পেট চিটে! এদিকে যে মালিকের পকেট ফুঁটো, সেদিকে বাবুর খেয়াল নেই! বাবুকে শুধু গিলতে দাও, গেলা পেলেই শান্ত!
‘আব্বা!’
একটু চমকে উঠলাম আমি। চোখ তুলে তাকাতেই দেখি প্রেয়ন্তী- সারা মুখে নীরব হাসি এঁকে চেয়ে আছে আমার চোখে। মুখের নিঃশব্দ হাসিটাকে আরো একটু বাড়িয়ে ঠোঁট নাড়ে ও- ‘প্যাকেটটার দিকে ওভাবে চেয়ে আছো যে?’
ওর কথার জবাবে কিছু একটা বলতে যাবো, কিন্তু হঠাৎ করেই যেনো সবকিছু ভুলে গেলাম আমি- একটু ইতস্তত করলাম, এবং থেমে গেলাম তারপর।
‘তোমার ছাত্ররা আজও কেউ টাকা দেয় নি- তাই না আব্বা?’
‘না রে মা।’
কথাটা বললাম, কিন্তু কন্ঠস্বরটা যেনো কেমন নৈঃশব্দের মতো হয়ে গেলো।
‘তাই বলে অমন চোখে তাকাতে হবে প্যাকেটটার দিকে- যেনো কতো বড় অন্যায় করে ফেলেছে ওটা? টাকা আজ পাও নি, কাল-পরশু পাবে। সমস্যা কী?’
‘না রে মা, তা না।’
‘তবে?’
‘ছাত্র খুব কম আসে।’
মেয়েটা যেনো অবাক হলো পরপরই- মুখে তার হাসি অবশিষ্ট রইলো না আর এক চিলতেও, মুহূর্তে সব উধাও। সংগে সংগে সে বললো, ‘কী বলছো আব্বা, আমি যে ক’দিন ক্লাস নিয়েছি, সে ক’দিন তো ছাত্রউপস্থিতি খুবই ভালো ছিলো। তাছাড়া তোমার ছাত্ররা তো বেশ মনযোগীও।’
‘তুই চলে আসার পর প্রথম কিছুদিন ভালোই ছিলো। এখন আবার যা- তাই। এমন হবার কারণ কী মা?’
আমার কথার কোনো জবাব দিলো না মেয়েটা। কিন্তু ওর দিকে তাকাতেই দেখি, ওর দুই চোখের দৃষ্টি আমার হাতে ধরা থলের ওপর নিবদ্ধ, আর কেমন গম্ভীর হয়ে নিশ্চুপ মেরে আছে ও।
ছোটোবেলা থেকেই মেয়েটা একটু অন্য টাইপের- হঠাৎ হঠাৎই কেমন গম্ভীর হয়ে যায়, আর কেমন কেমন ধরণের সব কথা বলে স্বগতোক্তির মতো করে। তখন কোনো দিকেই খেয়াল থাকে না ওর। ওর মা তো ওকে প্রায়ই পাগল মনে করে একারণে, এবং পরক্ষণেই চিন্তিত হয়ে পড়ে- এতো বড়ো মেয়ে, এমন পাগলাটে আচরণ করলে বিয়ে দেয়াই তো মুশকিল হবে।
আমি জানি, স্বগতোক্তি করে কথা বলা শুরু করবে ও এখনই, এবং কোনো কিছুতেই মনযোগ থাকবে না ওর- শুধু নিজের সাথে নিজেই বকবে বিড়বিড় করে।
ওর চোখের উপর থেকে চোখ নামিয়ে নিতেই আমি শুনতে পেলাম, ও বিড়বিড় করা শুরু করেছে- ‘ওই প্যাকেটটাই ভালো। জড়। প্রাণ নেই। চিন্তাও নেই। খাদ্যের চিন্তা। অস্তিত্তে¡র চিন্তা। সম্মানের চিন্তা। আমিও। একদিন জড় হয়ে যাবো। হ্যাঁ। জড়। প্রাণ থাকবে না। চিন্তা থাকবে না ...।’
তারপর কিছু বললামও না, ঠাঁই দাঁড়িয়েও থাকলাম না; বেরিয়ে পড়লাম আমি চিন্তিত মস্তিষ্কে- আপাতত আমারও, ইচ্ছে করছে, বড়ো ইচ্ছে করছে- অর্থাভাবের এই কঠিন দিনে একটিবার জড় হয়ে যেতে।

হাত থেকে তরকারিভর্তি থলেটা নিয়ে শ্রেয়ন্তী চলে গেলো রান্নাঘরে, আমি ঘরের দিকে এগোলাম। ঘরে ঢুকেই বকেয়া হিসেবের খাতাটা খুলে বসলাম খাটের ওপর। এই খাতাটা যেদিন কিনেছিলাম, সেই দিনটার কথা সম্পূর্ণ মনে আছে আমার।
‘খাতাটা বোধহয় কাজে লাগবে না; তবুও দাও, যদি লেগে বসে।’
আমার কথাটা শুনে মুদি দোকানী মজিদ মিয়া একটু হেসে বলেছিলো, ‘আপনার কথার মাঝে ‘বোধহয়’ শব্দটা আছে যখন, তখন দিয়েই দিই। কি বলেন ?’
‘না- মানে, বাকি লেনদেন আর করা হয় কোথায়- হয় না বললেই চলে।’
‘রেজা ভাই, আমার নিজের বেলাতেও ও কথা আমি প্রায়ই বলি- বাকি লেনদেন আর করা হয় কোথায়? কিন্তু পরে যখন খাতা খুলি, তখন দেখি, খুচরো-খাচরা দেনাগুলো এক হয়ে কতো বড়ো অংকের টাকার দেনাদার হয়ে গেছি আমি।’

খাতাটা যেদিনই খুলি, মজিদ মিয়াকে মনে পড়ে সেদিন। নিজেকে উপেক্ষার একটা প্রচ্ছন্ন হাসিও পায় মনে মনে। প্রচ্ছন্নে হাসিও আমি- কারণ, মজিদ মিয়ার কাছ থেকে কেনা সে খাতাটার অনেকগুলো পৃষ্ঠা দখল করে নিয়েছে আজ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের নাম।
পাতা উল্টে যেতে যেতে একটা খালি পৃষ্ঠাতে এসে পৌঁছেছি আমি- এখানে নতুন একটা প্রতিষ্ঠানের নাম উঠবে আজ।
লেখা শেষ হলে হারিয়ে গেলাম আমি অন্য কোথাও-
সপ্তাহ খানিক আগেও, যখন মেয়েটা ক্লাস নিতো কোচিঙের, তখন নাকি সবাই আসতো পড়তে, নিয়মিত হাজিরা দিতো প্রতিদিন, পড়ার প্রতি মনযোগ এবং একাগ্রতাও নাকি ছিলো সবার, ...। অথচ এখন?
শূন্যতা। ফাঁকা ফাঁকা।
কারণটা কি?
আমি খারাপ পড়াই, কিংবা বোঝাতে অক্ষম, অথবা ফাঁকি দিই- এমন নেতিবাচক কথাও তো কানে আসে নি কোনোদিন। বরং অভিভাবকদের মুখ থেকে বেশ সুনামই শুনি আড়ালে-অন্তরালে- রেজাউল মাষ্টার একটা মাষ্টার বটে- এলাকার ছেলেদের নিয়ে তার তাঁর সুচিন্তা আর পরিশ্রমের অন্ত নেই ...।
তবে?

খাতাটা শেলফের উপর তুলে রেখে বেরিয়ে এলাম বাইরে, বারান্দাতে। চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসতেই চোখ আমার চলে গেলো নিচে- বেশ কিছু চিনির দানা পড়ে রয়েছে, বোধহয় বাজার করতে দেবার আগে প্যাকেট ঝেড়েছে, তাই পড়েছে। দানাগুলোর চারপাশে অনেকগুলো পিঁপড়ে। একেকটা দানা মুখে নিয়ে কোথায় যেনো চলে যাচ্ছে তারা একে একে। সাঁরি বেঁধে আসছেও আরো।
হঠাৎ, মাথার ভেতরটা প্রচন্ড দুলে উঠলো আমার- পিঁপড়ে, চিনি...; চিনি, পিঁপড়ে...; পিঁপড়ে...। ব্যাপারটা কোথায় যেনো ঘটতে দেখেছি আগে। কিন্তু কোথায়? কোথায়?
না, মনে পড়ছে না। কিন্তু কী এক দৃশ্য যেনো দেখতে পাচ্ছি আমি একান্তে- ঘরভর্তি ছাত্রদেরকে সামনে বসিয়ে লেকচার দিচ্ছে টিচার- প্রেয়ন্তী। দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে নেড়ে বিচিত্র ভঙ্গি করে সবাইকে বোঝাচ্ছে লেকচারের বিষয়- কী, কেনো, কীভাবে ইত্যাদি। আর, কিছু ছাত্র মন যোগ করা চোখে প্রেয়ন্তীর মুখের দিকে চেয়ে, বাকি বৃহত্তর সংখ্যক ছাত্র অমনযোগী অথচ গভীর মনযোগী চোখে পাতলা ওড়না ভেদ করা প্রেয়ন্তীর বুকের...। কিংবা, ব্লাকবোর্ডের দিকে ফিরে অংক অথবা অন্যকিছু করাচ্ছে প্রেয়ন্তী। এবং বেঞ্চের সবার দৃষ্টি সামনের দিকে- কিছু ছেলের আগ্রহী চোখ ব্লাকবোর্ডে, অবশিষ্ট বৃহত্তর সংখ্যকের অনাগ্রহী অথচ গভীর আগ্রহী চোখ প্রেয়ন্তীর অনাবৃত গ্রীবার ওপর, নিতম্বের...।
সংগে সংগে মাথাটাকে প্রচন্ডভাবে ঝাঁকিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম আমি- নিজের মেয়েকে নিয়ে এ কী ভাবছি আমি? ছিঃ! ছিঃ!
বারান্দা থেকে নামবার আগেই সামনে এসে দাঁড়ালো ছোটো মেয়ে শ্রেয়ন্তী- শরীরে ইউনিফর্ম, কাঁধে বইভর্তি ব্যাগ- কলেজ যাবে। গম্ভীর কন্ঠ করে সে বললো, ‘আব্বা!’
আমি চোখ উঠিয়ে ওর দিকে তাকালাম। বললাম, ‘বল।’
‘এবার বোধহয় পরীরক্ষাটা দেয়া হবে না।’
‘কেনো কী হয়েছে? পরীক্ষা দেয়া হবে না কেনো?’
‘কলেজে অনেক টাকা বাকি পড়েছে, সব পরিশোধ করা লাগবে।’
‘বাকি পড়েছে কতো?’
‘পুরো ৬ মাসের বেতন।’

শুধু কি এই?
না। আরো রয়েছে কতো খাত, ব্যয়ের কতো বিচিত্র ক্ষেত্র, যেসবের একমাত্র উৎস- কোচিং। কোচিং, অথচ...।
কেমন যেনো কঠিন হয়ে উঠতে লাগলাম আমি ধীরে- আপাতত শ্রেয়ন্তীর পড়ালেখার জন্যে, বস্ত্র-সস্ত্রের প্রয়োজনীয়তায়, ৫ উদরের আবেদনের কারণে, আর্ত অশীতিপর বৃদ্ধা মায়ের ওষুধ-পথ্যের যোগান দিতে কোচিংটাকে আমার বাঁচিয়ে রাখতে হবে অবশ্যই, যে করেই হোক। কন্ঠস্বরটা কেমন গম্ভীর হয়ে গেলো আমার- ‘আজ যা। সময় মতো টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’
শ্রেয়ন্তী বারান্দা থেকে নেমে যেতেই চোখ দু’টোকে নামিয়ে নিলাম আমি আবার- পিঁপড়েরা করে চলেছে তাদের কাজ।
একটু ক্ষণ পর, কী না কী ভেবে চিনির কিছু দানা তুলে নিলাম আমি সেখান থেকে, ছিটিয়ে দিলাম সেগুলো অন্যখানে। কিছু ক্ষণ পরে দেখি, তিনটে পিঁপড়ে জড় হয়েছে নতুন ছিটানো চিনিদানার চারপাশে, তার কিছুটা পর আর একটা এলো, তারপর আরো একটা, তারপর দু’ তিনটে দল বেঁধে, তারপর...।


অনেকটা বিনীত, অনেকটা বিব্রত, আর অনেকটা ইতস্তত হয়ে প্রথমে দাঁড়ালাম আমি প্রেয়ন্তীর সামনে, এবং ঠিক এই মুহূর্তে বুকের ঠিক মধ্যখানটায় ঘটমান বর্তমান কষ্টের প্রচন্ডতা যেনো উঠে এলো আমার কন্ঠেতেও- ‘মা প্রেয়ন্তী!’
‘এমন করে আছো কেনো আব্বা?’ অস্থির হয়ে ওঠে মেয়েটা- ‘কি বলছো, আব্বা ?’
‘তোকে একটা অনুরোধ করবো মা।’
‘অনুরোধ! সন্তানের উপর বাবা-মায়ের অধিকার অনুরোধের নয়, আদেশের- তুমিই তো শিখিয়েছো আব্বা।’
‘সেটা তোকে মেনে নিতে হবে।’
‘তুমি আদেশ করেছো আর আমি মান্য করি নি- এমনটা কখনো ঘটেছে আব্বা?’ বলেই মেয়েটা কাছে সরে এলো আমার, সেই ছোট্টবেলার আহ্লাদে মাথাটা এলিয়ে দিলো আমার কাঁধে। বিড়বিড় করে বললো, ‘তোমাকে যে বড়ো ভালোবাসি আব্বা।’
‘বলছিলাম যে, কোচিংটা এখন থেকে তুইই করাবি, সবগুলো ব্যাচই।’
কথাটা বলার সংগে সংগে প্রচন্ড দুলে উঠলো আমার তাবৎ পৃথিবী, এবং তারই মাঝ থেকে শুধু শুনতে পেলাম মেয়েটা বললো, ’ঠিক আছে আব্বা। এখন থেকে কোচিংটা আমিই করাবো। সবগুলো ব্যাচই করাবো।’
জবাবটা দেবার সময় বেশ স্বাভাবিকই ছিলো মেয়েটার কন্ঠ।


ব্যবসায়ী । সুপণ শাহরিয়ার
মিস্ত্রীপাড়া, খুলনা
[email protected]
+8801672794009; +8801952131007
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:০৩
১০টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×