somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিম আগে না মুরগি আগে ?

১১ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই ব্লগে আস্তিকতা নাস্তিকতা বিতর্ক নিয়ে মাঝে মাঝেই পোষ্ট দেখা যায়। বহুদিন আগে এমনই একটা পোষ্টে দেখেছিলাম, এক ধর্মান্ধ ব্যক্তি ধর্মকে বিজ্ঞানের চেয়ে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার জন্য তথা বিজ্ঞানের ব্যর্থতা দেখানোর জন্য এমন কিছু প্রশ্নের অবতারণা করছে, যার উত্তর আজও বিজ্ঞানের কাছে নাই। সেগুলোর মধ্যে একটা প্রশ্ন ছিল, ''ডিম আগে না মুরগি আগে ?'' সেই প্রশ্নের উত্তর এই পোষ্টে দিলাম।
ভূতাত্ত্বিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, পৃথিবীতে জীবনের স্পন্দন ঘটেছিলো প্রায় ৪০০ কোটি বছর পূর্বে যেখানে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে আজ থেকে ৬০০-৯০০ কোটি বছর পূর্বে।জীব প্রাক অবস্থায় মৌলিক উপাদান থেকে যৌগিক এবং পরে জৈব স্যুপ সৃষ্টি করে। এই জৈব স্যুপ আরও সুগঠিত হয়ে প্রত্নকোষ প্রকৃতির সৃষ্টি করে।প্রত্নকোষীয় উপাদানে তখন অস্থিরভাবে এবং অনিয়মিত উপায়ে প্রত্ন বিপাক ক্রিয়া-বিক্রিয়া আরম্ভ করে। বাতাসে তখন মুক্ত অক্সিজেনের অভাবে অবাত শ্বসন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
রাসায়নিক পদার্থসমূহ একত্রিত ও সুগঠিত হয়ে প্রাক জীব অবস্থা বা প্রত্নজীব অবস্থা শুরু হতে প্রায় ১৫০ কোটি বছর সময় লাগে। প্রত্নকোষের প্রকৃতি সুগঠিত হয়ে ক্রমে আদিকোষের আবির্ভাব ঘটে। প্রত্নকোষ থেকে আদিকোষে রুপান্তর ঘটতে প্রায় ১০০ কোটি বছর সময় অতিবাহিত হয়ে যায়।
এরপর আদিকোষ সুগঠিত ও সুনিয়ন্ত্রিত উপায়ে প্রজাতি সৃষ্টির সূত্রপাত ঘটতে আরও প্রায় ১০০ কোটি বছর লেগে যায়। এ সময়ে বাতাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে। বায়ুর উপাদানে যখন অক্সিজেন যুক্ত হতে থাকে তখন জৈব রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া অবাত থেকে স্ববাত শ্বসনে উত্তোরণ ঘটে।
বিপাক ক্রিয়া-বিক্রিয়ায় তখন শক্তির সমৃদ্ধি ঘটতে থাকে। জীবন তখন নতুন সৃষ্টির নেশায় মেতে ওঠে। প্রজাতি ও প্রকরণ সৃষ্টির নেশায় জীবন তখন দুর্নিবার।এ সময়ে যেমন নতুন প্রজাতি সৃষ্টি হয়েছে এবং বিভিন্ন চরিত্রের বৈচিত্র্যে এসেছে সেরুপ ধ্বংসও হয়েছে অসংখ্য।
সর্বশেষ প্রায় ১০০ কোটি বছরে সৃষ্টি হয়েছে আনুমানিক ১০ কোটি প্রজাতি যার মধ্যে বর্তমানে প্রায় ৩৫ লক্ষ প্রজাতি টিকে আছে।বর্তমানে আমরা যে জৈব বৈচিত্র্য দেখতে পাচ্ছি তা বহু কোটি বছর ধরে প্রকৃতির পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলস্বরুপ।
অর্থাৎ, মহাবিশ্বের সৃষ্টির পর একটি উপযুক্ত পরিবেশে প্রাণের উদ্ভব ঘটে। আর প্রজাতির মধ্যে উৎকর্ষ সাধিত হয় বিবর্তনের মাধ্যমে। সুতরাং কোনোভাবেই বিবর্তন প্রক্রিয়ায় ডিম বা মুরগি কোনোটি সৃষ্টির হওয়ার ধারণা কেবলই ভ্রান্ত।
সূচনালগ্ন থেকেই জীব সবসময় পরিবেশের সাথে সম্পর্ক রেখে প্রয়োজনীয় পদার্থের আত্মীকরণ করতে থাকে এবং প্রতিনিয়ত তার পরিবর্তন ঘটতে থাকে যা কখনো স্থির না থেকে এক সমন্বিত শক্তিরুপে কাজ করার অনন্ত প্রয়াস শুরু করে। প্রক্রিয়াটি মেটাবলিজম নামে পরিচিত।
অর্থাৎ, জীবন্ত বস্তুর গতিময়তায় টিকে থাকার প্রথম শর্ত হলো মেটাবলিজম প্রক্রিয়া চলমান রাখা।
জীব যেহেতু উদয় এবং অস্ত যাওয়ার শৃঙ্খলে শৃঙ্খলিত সেহেতু তার প্রজাতিকে টিকে রাখতে হলে তার সমলিপন হওয়া প্রয়োজন। আর এ তাগিদে জীব সমলিপন প্রক্রিয়া আত্বস্থ করে এবং এটিকে চলমান রাখে। এ প্রক্রিয়াটি রিপ্রোডাকশন নামে পরিচিত।
অর্থাৎ, জীব প্রজাতিকে টিকিয়ে রাখার দ্বিতীয় শর্ত হলো রিপ্রোডাকশন প্রক্রিয়া চলমান রাখা।
তাহলে, কোনো জড় অবস্থা জীবন নামক প্রক্রিয়ায় উত্তীর্ণ হতে হলে দুটি শর্ত প্রয়োজন। যথা:
১) মেটাবলিজম অর্থাৎ বিপাকক্রিয়া ও ২) রিপ্রোডাকশন অর্থাৎ প্রজনন
এখন, আসা যাক জীবের এ দুটি প্রক্রিয়ার পারস্পরিক নির্ভরশীলতার দিকে।
জীবন বংশ-পরম্পরায় টিকে থাকতে হলে দুটির গুরুত্বই সমান। কিন্তু, জীবন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শুধু মেটাবলিজম প্রক্রিয়ায় টিকে থাকতে পারে। অথচ, মেটাবলিজম প্রক্রিয়া ছাড়া রিপ্রোডাকশন প্রক্রিয়া চলমান থাকা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
অর্থাৎ, রিপ্রোডাকশন প্রক্রিয়া পুরোপুরি মেটাবলিজম প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল।
অতএব, আগে মেটাবলিজম এবং পরে রিপ্রোডাকশন।
এখানে, মুরগি অবশ্যই মেটাবলিজমের প্রতিনিধি এবং ডিম প্রোডাকশনের প্রতিনিধি।
অর্থাৎ, মুরগি বা মেটাবলিজম ছাড়া ডিম বা রিপ্রোডাকশন অসম্ভব।
সুতরাং, মুরগির আগে ডিম কখনো হতে পারে না। অর্থাৎ, মুরগি আগে এসেছে; তারপর ডিম এসছে।
........................................................

লেখাটা অবশ্য আমার নয়। ফেসবুকে ''জিরো টু ইনফিনিটি'' নামে একটা বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রুপ আছে। ঐ গ্রুপে Manzurul Islam Noshad নামে একজন ব্যক্তি পোষ্টটা করেছিল। সেখান থেকে আমি কপি পেস্ট করলাম। উদ্দেশ্য এটা বুঝানো যে, বিজ্ঞান আজ যা জানে না তা হয়ত আগামীকাল ( ১ বছর পর বা ১০০ বছর পর বা ১০০০ বছর পর ) জেনে যাবে। কিন্তু তাই বলে সেই অজানা বিষয়ের বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যার অপেক্ষায় না থেকে ঈশ্বর বা অলৌকিক দিয়ে ঐ অজ্ঞতাটুকু ঢাকার চেষ্টা করাটা প্রচন্ড বোকামি। আর কিছু মানুষের কাজ হয়েছে খালি বিজ্ঞানের ফাঁক খোঁজা। ঐটা না করে কুসংস্কারের ( ধর্মের ) ফাঁক খুঁজলে, ধর্মের ব্যর্থতা ও অসারতা খুঁজে বের করার চেষ্টায় লিপ্ত হলে বেশী ভাল হত। মানুষকে কুসংস্কারমুক্ত ( ধর্মমুক্ত ) করা সহজ হত। যত্তোসব।

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৫০
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×