somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শুভ্রা হক
আমি একজন সাধারণ মানুষ। গল্প , কবিতা লিখি।nশখ- বই পড়া, গান শোনা, রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করা, ভ্রমণ, ছবি তোলা(ডিজিটাল ক্যামেরায়)।nট্র্যান্সক্রিপশনের কাজ করি। পত্রিকায় ফিচার লিখি।

মেঠো পথের কাহিনী- পর্ব -৫

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গভীর মনোযোগ দিয়ে সেঁজুতি একটা উপন্যাস পড়ছিলো। এমন সময় ক্রমাগত কে যেন কলিং বেলটা বাজিয়েই যাচ্ছে। প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে উঠে গিয়ে দরজা খুললো । দ্যাখে ওর ছোট মামা। ও অবশ্য বলে মায়ের ছোট ভাই হয়। প্রচণ্ড বিরক্তিকর লাগে তাকে সেঁজুতির। নানার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বেঁচে, ভাড়া দিয়ে আর অন্য মানুষের সম্পত্তি থেকে চুরি করে জীবন কাতে তার। সেঁজুতিদের নানা বাড়ির সম্পত্তি মা যেটুকু পেয়েছে তাও সে আর তার আরেক বোন মিলে হস্তগত করে রেখেছে। ভাবটা নানার সম্পত্তি না, যেন ওনাদের সম্পত্তি! রাগে গা জ্বলে যায় এই দুই জনকে দেখলে সেঁজুতির!

অপছন্দের মানুষের আশে –পাশে থাকাটাই যে কি অসহ্য !
তোদের গ্যারেজ ভাড়া এই মাসে পাবি না। গ্যাসের লাইন ঠিক করাইছি , ঐ খানে টাকা লাগছে। “বললো ছোট মামা। তারপর চলে গেলো।

এ আর নতুন কি , মনে মনে বলে সেঁজুতি। প্রায়ই এটা খরচ হয়েছে, সেটা হয়েছে বলে গ্যারেজ ভাড়া থকে চুরি করে মামা আর খালা।
মায়ের মৃত্যুর পর যাদের উপর সবচেয়ে ভরসা করার কথা ছিলো তারা যদি এই রকম ব্যাবহার করে তাহলে পৃথিবীটা শুন্য লাগে না? বেঁচে থাকাটাই অর্থহীন মনে হয় না।
মাঝে মাঝে আত্মহত্যার কথাও ভেবেছে সেঁজুতি। কিন্তু তাতে তো প্রতিপক্ষেরই লাভ।
সেঁজুতি তো হেরে যাওয়া মানুষের তালিকায় আরেকটা নাম যোগ করতে চায় না।
হারবো কেন? আমি পড়া লেখা জানি, নিজের ব্যায় নিজেই বহন করতে পারি। কারো কাছ থেকে কখনো সাহায্য চাইতে যাই না, সেই আমি হারবো কেন?

আবার বেল বাজছে। এবার দরজা খুলে দ্যাখে কান্তা।
ওকে দ্যাখে খুশি হলো সেঁজুতি। ওর সাথে পরিচয় বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রের “আলোর ইশকুলে “। সবাই ১৮ বছরের উপরে কিন্তু নানা বয়সী মানুষ নিয়েই সেই ইশকুল। সেখানেই পরিচয় এবং বন্ধুত্ব কান্তার সাথে সেঁজুতির। যদিও সেঁজুতির চেয়ে ৫/৬ বছরের ছোট কান্তা। কিন্তু বন্ধুত্তের কি কোন বয়স আছে? মনের মিল থাকলে সহজেই বন্ধু হওয়া যায়- জানে সেঁজুতি।

-আপু কেমন আছেন? কান্তা জিজ্ঞাস করে।

“এই চলে যাচ্ছে আর কি, Life goes on! “ বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেঁজুতি।
“ আপনার বইটা ফেরত দিতে এসেছি” কান্তা বলে। এবং ব্যাগ থেকে Steve Jobs-এর জীবনীটা বের করে।
“একটা এক মাসের ফিল্ড ওয়ার্কের কাজ পেয়েছি আপু” কান্তা বলে।
“বাহ, তাই নাকি “ সেঁজুতি খুশি হয় শুনে।
“এক মাস ঢাকায় থাকছি না, তাই আপনার বইটা দিয়ে গেলাম । “
“ভালো করেছিস” । সেঁজুতি বলে। মানুষের যে অবস্থা , বই নিয়ে আর ফেরত দেবার নাম নাই!

-তা কবে যাচ্ছিস ফিল্ডে?
-এই সপ্তাহ ট্রেনিং চলছে, তারপর পাঠাবে ।
“ভালো। একটা কাজের অভিজ্ঞতা হবে। এটা আন্তর্জাতিক সংস্থা , পরে এদের অন্য প্রোজেক্টেও কাজ পেয়ে যেতে পারিস।“ সেঁজুতি বলে।
“আজকে আমি আপনার জন্য পরোটা আর আলু ভাজি রান্না করে এনেছি” বলে ব্যাগ থেকে বক্স বের করে কান্তা ।
“ তাই নাকি, তা কেমন রাঁধুনি তুই, গিনিপিগ বানাচ্ছিস না তো আমাকে। “ হেসে বলে সেঁজুতি ।
“ সেটা খেয়েই বলেন আপনি” কান্তা বলে।
সেঁজুতি আপুকে খুব ভালো লাগে কান্তার। আশে পাশের গতানুগতিক মানুষগুলোর চেয়ে অনেক আলাদা একটা মানুষ। বাবা-মা মারা গেছেন। নিজেদের বাড়িতে একাই থাকেন। সব সময় ইতিবাচক কথা বলেন। ওনার সাথে কথা বলতেই একরাশ এনার্জি যেন বুকে ঢুকে যায়। কে বলবে মাত্র ছয় মাস আগেও মানুষটিকে চিনতো না সে! বাবা-মা মারা যাওয়ার বিশেষ করে মা মারা যাওয়ার ব্যাপারটা এখনো যেন আপু সামলে উঠতে পারেননি। মাঝে মাঝে তাই বলেন –“মা মারা যাওয়ার পর আমার জীবনে ব্ল্যাক হোলের মতো একটা বিশাল শুন্যতা এসে গেছে রে! সেটা কিছুতেই ভরাট হচ্ছে না।“
তার উপর ওনার মামা-খালারা মায়ের সম্পত্তি থেকে ওনাকে ঠকাচ্ছেন । তাদের সাথেও একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে গেছে।

“আপনি সকালের নাস্তা খেয়েছেন “? কান্তা জিজ্ঞাস করে।

“না, ঘুম থেকে উঠলামই তো সকাল দশটায়। তারপর চা নিয়ে বসলাম পেপার পড়তে । এরই মধ্যে এগারোটা বেজে গেলো রে। “ সেঁজুতি বলে ।
“ভালো, খুবই ভালো “ কান্তা বলে।
“ ভালো তো, জীবন চলে তো যাচ্ছে । আশে –পাশের মানুষ যতই চেষ্টা করুক আমাকে টেনশন দিতে, আমি দিব্যি বই, কবিতা লেখা এর মাঝেই আশ্রয় খুঁজে নিয়েছি রে। সে এক অন্য জগত “।

“তা দেখি , তুই কেমন পরোটা বানাস । “ সেঁজুতি বক্স খুলে দ্যাখে।
“পরোটা কাঁচা, ভাজতে হবে , দাঁড়ান , আমি ভেজে আনি। “ বলে কান্তা পরোটা নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো। এই বাসায় মাঝে মাঝে এসে থাকে ও। তাই রান্না ঘরে কোথায় কি আছে , তা ও জানে।

পরোটা ভাজার পর সেঁজুতি চা বানায় দুজনের জন্য।
তারপর চা আর আলু-পরোটা খায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:২২
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×