দিনকাল খুব খারাপ যাচ্ছে । যাচ্ছে যাক ,
তাতে কি আসে যায় ? নীলের দিনকাল ভালই কাটছে ।
সেটা কখনই বিনা কারণে না । সব কিছুরই যেমন
কারণ থাকে এটারও কারণ আছে ।
তবে কারণটা আমার আপনার কাছে বড় সড়
কনো কারণ না হলেও নীলের কাছে অনেক বড়
একটা ব্যাপার ।
পরীক্ষা শেষ..! বাপরে বাপ , ভাবা যায় ?
বারোটা বইয়ের পরীক্ষা দিতে হয় একমাস ধরে ,
তবুও ভাগ্য যদি একটু ভাল হতো । নীলের
পরীক্ষা দিতে হয়েছে টানা দুই মাস , আর
প্রাকটিক্যাল সহ শেষ করতে লেগে গেছে আরো দশ
দিন বেশী । যত দোষ সব ঐ রাজনৈতিক দলগুলোর ।
ক্যানো বাপু ? দুনিয়ায় কি হরতাল
ছাড়া দাবি আদায়ের আর কনো মাধ্যম নেই ?
গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কি হরতাল ডাকলেই হয়ে যাবে ?
তোরা তো একটু এই নীলদের দিকে খেয়াল রাখবি !
বাপরে বাপ , ছেলেমেয়েগুলো যেন হাপিয়ে উঠেছে ।
যাকগে যাক , তবুও তো শেষমেষ পরীক্ষাটা ভালোই
ভালোই শেষ হয়েছে । কোন এক বড় ভাই
বলেছে ..."পরীক্ষা ভিতরে হরতাল পড়লে রেজাল্ট
ভাল আসে।" এটা শোনার পর থেকে তো নীল এখন
হাওয়ায় ভাসছে । আর কে ঠেকায় ? গোল্ডেন
তো হয়ে গেল বলে ।
নীলের এখন প্রতিদিনকার কাজ
হয়ে দাড়িয়েছে জাগরণ মঞ্চে যাওয়া ।
ছেলেটা এতো ভিতু গিয়ে চুপচাপ এক
সাইডে দাড়িয়ে থাকবে । ওরও ইচ্ছা করে বুক
ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে "জয় বাংলা" বলতে । কিন্তু ভিতু
ছেলে ভাবে কেউ যদি দেখে !
বাড়ি গিয়ে যদি বাবাকে বলে দেয় ? ওরে বাবা ,
তাইলে আর তাকে আস্ত রাখবে না । নীলের এই
একটাই ভয় বাবা । একদিন একা একা চুপচাপ জাগরণ
মঞ্চের পাশে দাড়িয়ে এক বড় ভাই ডাক দিল তাদের
সাথে গলা মিলিয়ে জয় বাংলা বলতে । নীল তাদের
সাথে গলা মিলিয়ে ছিল , আর সেদিনই ঘটল বিপত্তি ।
নীলের বাবা সেদিন তাকে দেখে ফেলল । তবে আশ্চর্য
হলেও সত্য নীলকে তার বাবা সাবধান করা ছাড়া আর
কিছু বলেনি ..."যাচ্ছ যাও তবে সাবধান
থেকো কে কখন বোম ঠোম মারে!"
এরই মাঝে আস্তে আস্তে নীল জাগরণ
মঞ্চে যাওয়া কমিয়ে দিল । কারণ কি ?
সেদিন ছিল মহাসমাবেশ , বিভিন্ন রাজনৈতিক
ব্যক্তি বক্তব্য দিচ্ছে , তারা সবাই একটা নির্দিষ্ট
দলের এবং যারা সেই মহাসমাবেশের তত্ত্বাবধায়ন
করছে তারাও একটি নির্দিষ্ট দলের । এরমাঝে অন্য
একটি দল থেকে নীলকে হুমকি দেওয়া হয়েছে সে যেন
জাগরণ মঞ্চে আর না যায় ।
নীল যখন দেখল সাধারণ মানুষের জাগরণ মঞ্চ
একটি নির্দিষ্ট দলের অধীনে তখন আর নীলের
বিবেক চাইল না ওখানে থাকতে । তারপর থেকে নীলের
বিকাল কাটে পার্কে বসে ।
সচারাচার পার্কে বসে একটা জুটির রিলেশন ভাঙার
দৃশ্য দেখা যায় না । সেদিক দিয়ে নীল অনেক
ভাগ্যবান । মেয়েটি নীলের থেকে বয়সে ছোট হবে ,
কি নীলের সমবয়সী হবে । অনেক কেঁদেছিল মেয়েটি ।
ছেলেরা যে এতো পাষান্ড !
মেয়েটিকে কাঁদিয়ে কাঁদিয়ে চলে গেলো । নীলের খুব
ইচ্ছা করছিল , মেয়েটির
পাশে বসে তাকে সান্ত্বনা দিতে । নীলের মত লাজুক
ছেলে দেবে সান্ত্বনা !
পরীক্ষা শেষ তাই নীলের এখন ছুটি আর ছুটি ,
ছুটির কনো শেষ নেই । আর এই ছুটির শেষ নেই
বলেই মা যেন অসহ্য কাজগুলো নীলের উপর
জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছে ।
বোনকে স্কুল থেকে আনতে যেতে হবে । ভাল
কথা , কিন্তু এটা তো মেয়েদের স্কুল !
এখানে যেতে হবে ? তাও আবার নীলকে ?
তাহলে বোঝ নীলের মত একটা ছেলের
কাছে এটা ক্যামন অসহ্যের ।
নীল ওর বোনের স্কুল ছুটি হওয়ার দশ মিনিট
আগে পৌছাল । ভেবেছিল একদম কাটায় কাটায়
পৌছাবে । নাহ, তা আর হলো না । দশ মিনিট
ধরে দাড়ায়ে থাকে । নির্ঘাত অন্য
কনো ছেলে হলে ,
ছেলে দের যে কাজ সেই কাজে লেগে যেত ।
নীলের অস্বস্তি লাগতে লাগল । এমন সময়
চোখের সামনে দিয়ে দুই
তিনটা মেয়ে চলে গেলো । তার ভিতর
একটা কে নীলের একটু চেনা চেনা লাগল ।
কোথায় যেন দেখেছে ? কোথায় যেন
দেখেছে ? ওহ হ্যাঁ মনে পড়েছে , এই তো সেই
কাঁদুনে মেয়েটা । পার্কে কি কান্নাটাই
না কেঁদেছিল ! এই কথা মনে পড়ায় এক চোট
হেসে নিল নীল ।
এর পর থেকে বোনকে স্কুল থেকে নেওয়ার জন্য
নীলই যেত । দশ মিনিট আগে যেয়ে নীলের
চোখ
দুটো খুজে বেড়াত সেই পরিচিত
চেহারাটাকে । কনো দিন দেখা পেত ,
কনো দিন দেখা পেত না ।
আর যেদিন এক পলক দেখত সেদিন নীলের
বুকে যেন একটা ধাক্কা লাগত ।
আস্তে আস্তে নীল
বুঝতে পারল , সে মেয়েটির প্রেমে পড়েছে ।
কিন্তু , সে মেয়েটিকে বলবে কি করে ?
নীলের মতো লাজুক
ছেলে মেয়েটিকে গিয়ে বলবে ..."আমি তোমাকে ভালবাসি I
love you."
হা হা হা , শুনলেই হাসি পাই । কেমন
ন্যাকা ন্যাকা ।
আফরোজি প্রায়ই লক্ষ্য করেছে ছেলেটা ওর
দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে ।
এটা আফরোজীর একদমই পছন্দ না । ও
ছেলেদের একদমই সহ্য করতে পারে না ।
ছেলেদের চেনা হয়ে গেছে । প্রথম কয় দিন
ড্যাব ড্যাব
করে তাকিয়ে থাকে , তারপর
এসে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে মন পাওয়ার
চেষ্টা করে । আর পরে এক সময়
ছুড়ে ফেলে দেবে । বাজে ছেলের দল ।
আফরোজীর ইচ্ছা করে ছেলেটার দুই
গালে দুইটা থাপ্পড় দিতে । এমন
ভাবে তাকিয়ে থাকে ! বান্ধবী গুলো সেরকম
এটা নিয়ে মজা করবে ।
নীলের কি হয়েছে নীল বুঝল না ।
মেয়েটা এদিন একাই ঘুরা ঘুরি করছিল । নীল
অনেক সাহস নিয়ে তার কাছে গেল । নীল
জানে সে গুছিয়ে কিছু বলতে পারে না , তবুও
নীল আফরোজীকে বলে , তার মনের কথা বলে ,
সে আফরোজীকে পার্কের ঐ ঘটনার
কথা বলে দুঃখ প্রকাশ করে ।
কিন্তু আফরোজী ? ওর মন গলে না , ওর
ছেলেটাকে একদমই পছন্দ হয় না । ওর
বয়ফ্রেন্ডটাও
ঠিক এইরকম ছিল । কিন্তু শেষমেষ কি হল ?
আর ঐ ফাঁদে সে পা দেবে না ।
নীল একদিন না তিন চার পাঁচ দিন
চেষ্টা করল । নীল জানে না , সে কেন
এটা করছে ! তবুও
সে আফরোজীকে বোঝাতে লাগল
সে আফরোজীকে কতটা ভালবেসে ফেলেছে ।
কিন্তু আফরোজী বোঝে না ।
এরই মাঝে আবার
দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে ।
চারিদিকে মানুষ মরছে । মসজিদ মন্দির
শহীদ মিনার পতাকা কিছুই নিরাপদ না , সব
কিছুর উপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে ।
সাংবাদিক পুলিশের উপর নির্যাতন
করছে জঙ্গী গোষ্ঠী । এদেশকে আবার
পরাধীন করতে চাইছে । দেশ ভাল নেই , এখন
দেশের মন খারাপ । দেশ অসুস্থ হয়ে পড়ছে ,
দেশকে সারিয়ে তুলতে হবে ।
দেশের ডাকে নীল আর বসে থাকতে পারল
না সে চলল
আবারও "জয় বাংলা" বলতে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:০৪