গতমাসের ১ই মে নারায়ণগঞ্জ এর আড়াইহাজারর অন্যের গাছ থেকে আম পাড়ায় খুনের স্বীকার হয় ৮ বছরের শিশু তানজিলা।
.
এপ্রিল মাসের ১২ তারিখে দিনাজপুরের হাকিমপুর হিলিতে ৪ বছরের শিশু আবতাহি অপহরনের পরে তাকে হত্যা করা হয়।অপহরণকারীরা ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবী করেছিল যা পূরন করতে না পারার ফলে সেই ৪ বছরের ছেলেটি অপহরণকারীদের হাতে খুন হয়।
.
সবচেয়ে আশ্চর্যজনকভাবে গত ১৪ই এপ্রিল বরিশালের বানরীপাড়া পৌর এলাকার ভাড়াটে মোঃ রিপন মিয়ার সাড়ে ৩ বছরের সন্তান হাফিজুলকে কান্নাকাটি করায় রাগের বসত আচাড় মারেন তার বাড়িওয়ালী নুপুর বেগম।এতে ছেলেটা তৎক্ষনাত মারা যায়।
.
রামপুরার বনশ্রীতে এবছরের ২৯ শে ফেব্রুয়ারী নিজের দু সন্তানকে নিজ হাতে খুন করেন সন্তানের আপন মা।
.
গত ১ ফেব্রুয়ারী রাজধানীর বেইলী রোডের একটা ভবনের নিজের কোলেপিঠে সন্তানকে ৫ তলার ছাদ থেকে ফেলে দেয় তার মা।
.
গত ২ ফেব্রুয়ারী রাজধানীর মিরপুরের মনিপুর থেকে এক নবজাতজের খন্ডিত মস্তিষ্ক উদ্ধার করা হয়।
.
২০১২ সালে দেশে মোট ২০৯টি শিশুকে হত্যা করা হয়।২০১৩ সালে যা দাঁড়াল ২১৮ টিতে।পরবর্তী ২০১৪ সালে সেই শিশুহত্যার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬৬ জনে।২০১৫ সালে মোট শিশুহত্যা হয় ২৯২ জন।২০১৬ সালে এই পর্যন্ত প্রায় শতাধিক শিশুকে হত্যার ঘটনা শোনা যায়।
.
এবছরের প্রথম দিক থেকেই অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে শারীরিক সুখ মিটাতে গিয়ে অনিচ্ছাবশত মা হয়ে যায় বয়সের আগেই অনেকে।সমাজের চোখে খারাপ হয়ার আগেই নিজেই গর্বের সন্তানকে খুন করে ফেলে।অথচ যে ছেলেটা এমন করেছে তাকে আর খুঁজেও পাওয়া যায়না।আরো উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনা হলো প্রেমিককে ভালবাসার প্রমান দেয়ার জন্য নিজের শরীর বিলিয়ে দেয় প্রেমিকা যার ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত জন্ম নেয় এক নবজাতক।সমাজের মানুষের কালোচোখ থেকে বাঁচতে হত্যা করে গর্বে থাকা নবজাতক।
.
এভাবে নানাভাবে গর্ভের ভিতরেই বা একেবারে নবজাতক বা শিশু যাই বলা হোকনা কেন এদেরকে হত্যা করা হচ্ছে।নিষ্পাপ প্রান নিয়ে নেয়া হচ্ছে।যারা কিনা আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ হতো তারাই আজ হত্যা হচ্ছে।কাউকে পানিতে ফেলে দিয়ে নয়ত আগুনে পুরিয়ে।ড্রেনে প্যাকেট করে নবজাতক ফেলে দেয়ার ঘটনাও শুনা গিয়েছে অনেক।বাড়ছে দৈনন্দিন।হিসেব করা যাচ্ছে কিছু কিছু।তবুও অনেকগুলোই এখনো অজানা নয়ত দেখা যেত প্রতিবছর শিশুহত্যা হচ্ছে প্রায় হাজারেরও বেশি।এবছরের শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছে অল্প বয়সের মেয়েরা গর্ভবতী হয়ে যাচ্ছে।কারনটা একটাই।ক্ষুধার্ত হায়নার মত প্রেমিকের চোখকে ফাঁকি দিতে না পারা আর ভালবাসার প্রমানে দেহকে বিলিয়ে দেয়া।ক্ষুধার্ত হায়নার ক্ষানিকটা সুখের জন্য অনিচ্ছাসত্ত্বে বয়সের আগেই গর্ভবতী হচ্ছে অনেকে।আর সেই ঘটনাকে ঢাকতেই প্রতিনিয়ত গর্ভেই বা মাত্র জন্ম দেয়া নবজাতককে খুন করা হচ্ছে।নির্মমভাবে নিষ্পাপ দেহটিকে পানিতে ফেলে দেয়া হচ্ছে।খুবড়ে খুবড়ে মরবে পানির মধ্যে বসেই একটি নিষ্পাপ জীবন।
.
আমরা হয়ত গর্ভবতীকেই দোষ দেই।তাকেই পিছনে পিছনে খারাপভাবে গালিগালাজ করি।কিন্তু সেই মেয়েটা জায়গা পায়না ছেলেটার বাড়িতে,জায়গা পায়না সমাজে,জায়গা পায়না হসপিটালেও।আর যেই ছেলেটা নিজের সুখের জন্য এমনটা করলো সে সব অস্বীকার করেও পালিয়ে যায় বহুদুরে।কেউ তাকে আর খুঁজে পায়না বা গালিও দেয়না।তার সব গালি হজম করতে হয় মেয়েটাকেই।যা সহ্য করতে না পেরে অনেক মেয়েও হয়ত গলায় দড়ি দেয়।সমাজের মানুষেরা তাকে ছোট করতে দ্বিধাবোধ করেনা।যত দোষ সব মেয়েটার।সে কেন নিজের শরীর দিল, কেন বেবি কনসিভ করলো।এর চাইতে মরে যেত।কলঙ্ক নিয়ে বেঁচে কি লাভ! ইত্যাদি ইত্যাদি বলবে আমাদের সমাজ।কেউ পাশে দাঁড়াবেনা মেয়েটার।সবাই হয়ত বলবে মেরে ফেলো।মেয়েটা অনিচ্ছাস্বত্তেও মেরে ফেলবে।অথবা নিজের গর্ভে ধারন করা সন্তানকে অনেক কষ্টে রেখেছিল আগলে তাকে কিভাবে মরে যেতে দিবে ভেবেও আগলে রাখবে।সমাজ সাহায্য করবেনা।
.
অন্যদিকে রাগ, ক্ষোভ,আরো সাধারন কারনে খুন হচ্ছে নবজাতক।যারা এখনো বুঝতে শিখেনি চুরি কি বা হত্যা কি।হয়ত এখনো মায়ের হাতে ভাত খাইয়ে দেয় মা।আবার সেই মায়েরাই হত্যা করছে। নিজেদের শিশু।শুধুই বাড়ছে প্রতিনিয়ত।১ থেকে ২, আবার ২ থেকে ৩। এভাবে ১ থেকে ১০০,২ থেকে ২০০, ৩ থেকে ৩০০, হয়েই যাচ্ছে।হয়ত সামান্য রাগকে কন্ট্রোল না করা বা সামান্য সুখের জন্য কাউকে জন্মদিয়ে স্বীকার না করতে পারায় দুঃখ।দায়ী আমরা নিজেরাই।দায়ী আমাদের সমাজই।দায়ী আমাদের মানবতা।এসবের জন্যে হত্যা হচ্ছে শিশু,নবজাতক দৈনন্দিন। আমাদের বিবেক নিচে নেমেছে, আমরা রাগ কন্ট্রোলের ক্ষমতা হারিয়েছি,ক্ষোভ এসেছে,মানবতা কমেছে।মানবতা কমেছে বলেই হত্যা করছি নিজ হাতে সমাজের, দেশের,রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৬ রাত ১০:০৭