somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাস যাত্রা ( অতিপ্রাকৃত গল্প)

২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময় কাটছিল না।বাসের দুলুনিতে ঘুমুতেও পারছিনা।একই অবস্থা ছোটমামার।উনিও পাশের সিটে বসে হাসফাস করছেন।এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে মামা সিগারেট ধরালেন।একটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন 'নে টান দে,ভাল লাগবে'।এইরকম দূর পাল্লার বাসে সাধারণত সিগারেট খাওয়ার অনুমতি নেই কিন্তু এখন অবস্থা অন্যরকম।বাসের ড্রাইভার সহ মাত্র চৌদ্দজন রয়েছে।মাঝপথে বাসের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।ঠিক করতে একটু সময় লাগবে।তখন পাশ দিয়ে আরেকটা বাস যাচ্ছিল।সুযোগ বুঝে এই বাসের অধিকাংশ যাত্রী অন্যবাসটায় উঠে বসে।তাই আমাদের বাস এখন প্রায় খালি।বাস ড্রাইভার এটাকে চরম অপমান হিসেবে নিয়েছে।তার রাগ ঝড়াচ্ছে বাস আর তার যাত্রীদের উপর।আর সারাক্ষণ বিড়বিড় করে কি যেন বলছে।নিশ্চয় অপর বাস ড্রাইভারটাকে গালি দিচ্ছে।এতে একটা সুবিদা হলো।সবাই রাজার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেছি।যদিও ড্রাইভার মহাশয় এটাকে ভাল চোখে দেখছেন না।আমি সিগারেট জ্বালিয়ে টান দিব এমন সময় সামনে প্রচন্ড শব্দ হলো।সাথে সাথে গড়গড় শব্দে বাস কিছুদূর গিয়ে থেমে গেল।ধাতব কিছু পোড়ার গন্ধে চারদিক মৌ মৌ করছে।বাস থেকে বের হয়ে দেখি ড্রাইভার মহাশয় বাসের সামনে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন।আবার?।কিন্তু এইবার ইঞ্জিন সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।এখন কি হবে?বাসে যারা ছিল তারা কিছুক্ষণ বাইরে হাটাহাটি করে দীর্ঘযাত্রার ক্লান্তি দূর করে আবার বাসের ভেতরে গিয়ে বসেছে।ছোটমামা ড্রাইভারকে জিজ্ঞাস করলেন 'এভাবে বসে না থেকে কিভাবে বাস চালু করা যায় সেটা দেখুন'।কথাটা শুনে মনে হলো ড্রাইভার রেগে গেল।'সবচেয়ে কাছের গ্যারাজটাও প্রায় আটকিলো দূরে।এতোদূর থেকে মেকানিক আনতে কি আপনি যাবেন?'।
'আশ্চর্য বাস আপনার আপনি যাবেন।'
'উঁহু।আমার বাস ছেড়ে আমি কোথায় যাব না।'
বলেই ড্রাইভার তার সিটে গিয়ে বসে পড়লো।যেহেতু আজ সকালের আগেই চিটাগাং যেতে হবে তাই ড্রাইভারকে অনেক অনুরোধ করার পর উনি তার ছেলেকে পাঠালেন মেকানিক আনতে।তার ছেলেই হেল্পার হিসেবে কাজ করে।কিন্তু এতো রাতে একা যাওয়া ঠিক হবেনা ভেবে আমাকে তার সাথে যেতে হলো।কি আর করা মামার কাছ থেকে পুরো সিগারেটের প্যাকেট আর একটা লাইটার নিয়ে হেল্পার ছেলেটার সাথে রওনা হলাম।শীতের রাত ছিল।ঠান্ডা ভালোই লাগছে।তার উপর চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার।ভয় লাগছিল হালকা।তাই দ্রুত হাটছিলাম।মাঝে মাঝে ইকু মানে হেল্পার ছেলেটার সাথে টুকটাক কথা বলছিলাম।এভাবেই চলতে লাগলো।অনেকক্ষণ হাটার পর আমরা এমন যায়গায় এলাম যেখানে বহুদূর দূরান্ত পর্যন্ত কোন লোকবসতি নেই।রাস্তার উভয় পাশে ঘন জঙ্গল।রাস্তার উপর অনেকগুলো গাছের ছায়া পড়ে জায়গাটা পুরো অন্ধকার।আমি ফোনের ফ্ল্যাশ লাইটটা জ্বালালাম।ইকু বলল এই জায়গাটার নাম 'কালাবারি'।'কালাবারি ভয়ানক ডাকাত ছিল।কত গাড়িকে যাত্রীকে এই জায়গায় সে লুট-খুন করেছে তার ইয়াত্তা নেই।একদিন রহস্যময় ভাবে সে গায়েব হয়ে যায়।তার সাগরেদরা অনেক খুঁজেও তার কোন হদিস পাইনি।ঘটনার বছর খানেক পরে কালাবারির লাশ এই জঙ্গলের গভীরে এক ভিন দেশি গাছের উপর পাওয়া যায়।আশ্চর্যের ব্যাপার হলো কালাবাড়ির চোখ দুটো উপড়ানো ছাড়া সারা শরীর অক্ষত ছিল।মৃত্যুর এক বছর পরেও তারদেহ পচে গলে যায়নি।পরে তার নামেই জায়গাটার নাম হয়'।ইকু আমাকে এইসব বলে যেতে লাগলো।এমন পরিবেশে এইসব শুনে কিছুটা ভয় পেলাম।যদিও সেটা প্রকাশ করলাম না।আর কিছুদূর হাটতেই গাড়ির গ্যারাজটা দেখতে পেলাম।ইকুকে দেখে মনে হলো সে কিছুটা অবাক হয়েছে।কি হয়েছে জিজ্ঞাস করতেই সে বলল -গ্যারাজটাতো অনেক দূরে ছিল এখানে এলো কিভাবে।ওর কথা শুনে হেসে ফেললাম।বললাম 'আমরা গল্প করতে করতে এসেছি।তাই অনেক দূরত্বকেও কম মনে হচ্ছে।ইকু কিছুক্ষণ চুপ করে রইল।পরে বলল 'তাই হয়তো হবে'।গ্যারাজ খোলা।এতো রাতে গ্যারাজ বন্ধ থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।কিন্তু এটা খোলা।যায়হোক ভালোই হলো।আমরা যেখানে যেতেই একজন বেড়িয়ে এলো।ইকু তাকে সব বলতেই সে আবার গ্যারাজে ডুকে গিয়ে একটা ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে এলো।কোন কথা না বলে মেকানিক লোকটা চুপচাপ হাটতে লাগলো।আমি কিছুটা অবাক হলাম।পরে ভাবলাম এরা হয়তো এই ধরনের ঘটনায় অভ্যস্ত।তাই যখন শুনেছে বাসের সমস্যা হয়েছে তখনই কোন কথা না বলে বেড়িয়ে পড়েছে।আমি আর ইকু পেছনে হাটছিলাম।আর ঐ ম্যাকানিক লোকটা সামনে।আশ্চর্যের কথা হলো আমাদের বলে দিতে হচ্ছেনা বাসটা কোথায়।মনে হলো লোকটা আগে থেকেই জানে।এতে আমি আর ইকু বিস্মিত হলাম।কালাবারির কাছে আসতেই আমার ফোনের ফ্ল্যাশলাইট হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলো।আগেই বলেছিলাম গাছের ছায়ায় পুরো জায়গাটা অন্ধকার।ফ্ল্যাশলাইট বন্ধ হওয়ার পর আমি আক্ষরিক অর্থেই অন্ধ হয়ে গেলাম।নিজের হাতও ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছিনা।হঠাৎ ডানদিক থেকে ইকু প্রচন্ড ভাবে চিৎকার করে উঠলো।মনে হলো অতি শক্তিশালী কোন কিছু তার উপর ঝাপিয়ে পড়েছে।আতংকে আমি পুরো জমে গেলাম।তখনো ইকু কিসের সাথে যেন ঝাপটাঝাপটি করছিল।আমি কোনমতে লাইটার টা জ্বালাতেই মৃদু আলোতে দেখলাম ঐ মেকানিকটা প্রচন্ডভাবে ইকুকে জঙ্গলে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।তার চোখ নেই।চোখের জায়গায় শুধু দুটো গর্ত।জ্বলন্ত লাইটারটা ছুড়ে দিলাম ঐ অশরীরীটার দিকে।ভেবেছিলাম কিছু হবে না।কিন্ত অবাক হয়ে দেখলাম সামান্য লাইটারের এক আগুনের স্ফুলিঙ্গ পুরো অশরীরীটার শরীরে জ্বলে উঠেছে।এক ভয়ানক চিৎকারে ইকুকে ফেলে জঙ্গলে ঢুকে চোখের আড়াল হয়ে গেল সেই অশরীরী।ইকুকে কোনমতে তুলে দৌড়াতে লাগলাম।বার বার মনে হচ্ছিল পেছনে পেছনে ঐ অভিশপ্ত জিনিসটাও আসছে।জানিনা দুজনে কতক্ষণ ছুটছিলাম।বাসের সামনে এসেই আমি জ্ঞান হারায়।
কয়েকদিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল।সুস্থ হয়ে আমি ইকু আর তার বাবার সাথে দেখা করি।ইকু আমার আগেই সুস্থ হয়ে গিয়েছিল।সে রাতে তার জীবন বাঁচানোর জন্য সে কিভাবে আমাকে সাহায্য করবে সেটা বুঝতে পারছিল না।তখন আমি তাদের কাছ থেকে জানতে পারি যে ঐরাতে আমরা যে জায়গায় গ্যারাজ দেখেছিলাম আসলে ওই জায়গায় কোন গ্যারাজ নেই।আসলটা আরো অনেক দূরে ছিল।নিশ্চয় সেই অশরীরী টা আমাদের ফাঁদে ফেলার জন্য এইসব করেছে।তারপর থেকে ইকুর বাবা ইকুকে আর বাসে নিয়ে বের হয়না।শুনেছি তাকে নাকি স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে।সে এখন ভাল আছে।শুনে আনন্দ হলো।আমিও ভাল আছি।যাক কিছু অভিজ্ঞতা তো হলো।
(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:২৬
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×