somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লুপ (অতিপ্রাকৃত গল্প)

২৮ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৃষ্টি হচ্ছে।রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি।
ভেবেছিলাম তুমুল বৃষ্টিতেও রিক্সা পাব।কিন্তু আধঘণ্টা হওয়ার পরও একটা সাইকেল পর্যন্ত দেখিনি।বাসা এখান থেকে বেশি দূরে নয়।পায়ে হেটে মাত্র বিশ মিনিটের রাস্তা।বৃষ্টিতে ভিজতে আমার অসুবিধা নেই।কিন্তু সাথে অফিসের কাগজপত্র থাকায় হয়েছে সমস্যা।

অনেকক্ষণ পর বৃষ্টি কিছুটা কমে এলো।তবে আকাশ এখনো মেঘলা।খুব শীঘ্রই আবার ঝুম করে নামবে।তাছাড়া রাত প্রায় এগারোটা বাজে।এতো রাতে এখানে থাকা নিরাপদ নয় বিধায় হাটা শুরু করলাম।তখনো জিরজির করে বৃষ্টি পড়ছিল।রাস্তার পাশের ড্রেনগুলো বৃষ্টির পানিতে পূর্ণ হয়ে কাদায় রাস্তাঘাট ভাসিয়ে দিয়েছে।পিচ্ছলে না পড়ার জন্য সাবধানে হাটতে হচ্ছিল।
কিছুদূর এগোনোর পর সামনে কিছু একটা দেখতে পেলাম।কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে।আরেকটু কাছে যেতেই দেখলাম এক বৃদ্ধ লোক।কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে রয়েছেন।দূর থেকে দেখে কুকুরের মতো মনে হচ্ছিল।এতো রাতে রাস্তার পাশে বৃষ্টির মধ্যে লোকটিকে এভাবে দেখে কিছুটা অবাক হলাম।টোকাইরাও এই বৃষ্টিতে রাস্তায় থাকেনা।তাছাড়া বৃদ্ধ লোকটিকে ভদ্র বলেই মনে হলো।উনার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।আমার উপস্থিতির জন্যই হোক বা অন্য কারণে বৃদ্ধ লোকটি আমার দিকে তাকালো।সেই চোখে আমি কোন অভাব দেখিনি।বরং গভীর দুঃখ আর হতাশার চাপ সেই চোখে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।নিশ্চয় তার ছেলেমেয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।
'চাচা আপনি এই বৃষ্টিতে রাস্তায় কি করছন?' জিজ্ঞাস করতেই লোকটি গুঙিয়ে উঠলো।লোকটাকে ধরে দাঁড় করাতে চাইলাম।কিন্তু লোকটি মাথা নাড়িয়ে অস্বীকৃতি জানালো।
হঠাৎ ঘড়ির দিকে নজর গেলো।রাত বারোটা বাজতে চলেছে।একি?আমাকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে।সবাই নিশ্চয় চিন্তা করছে।
বৃদ্ধ লোকটাকে ফেলে রেখে আমি হাটতে লাগলাম।দশমিনিট হাটার পর আবার দেখলাম সামনে কিছু একটা পড়ে আছে।কৌতূহলী হয়ে সামনে এগোতেই যা দেখলাম তাতে তৎক্ষণাৎ জমে গেলাম।আদিম ভয় শিরদাঁড়া দিয়ে বয়ে গেলো।কিছুক্ষণ আগে যে বৃদ্ধকে পেছনে দেখে এসেছি সেই একই বৃদ্ধ এখানে পড়ে আছে।চিৎকার করতে গিয়েও কোনমতে শান্ত হলাম।বৃদ্ধের দিকে তাকালাম।বৃদ্ধ লোকটিও আমাকে দেখতে পেয়েছে।তার চোখেও পরম বিস্ময়।সেই সাথে আতংক।লোকটি বসা অবস্থায় থেকে দাঁড়িয়ে গেল।কিছু বুঝার আগেই লোকটা ছুটতে শুরু করলো।দুএকবার পড়ে গিয়েও আবারো উঠে ছুটতে লাগলো।আমি সেদিকে তাকিয়ে রইলাম যতক্ষণ না লোকটি অন্ধকারে মিলিয়ে না যায়।
কিছুক্ষণ হতভম্ব অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকলাম।আমি ভেবেছিলাম লোকটা অশরীরী কেউ।তাই হয়তো দুবার দেখেছি লোকটাকে।কিন্তু অশরীরী হলে লোকটা ভয় পাবে কেন?মনে হচ্ছে আমি যেমন লোকটাকে দেখে ভয় পেয়েছি তেমনি বেচারা বৃদ্ধটাও আমায় দেখে ভয় পেয়েছে।আসলে হচ্ছেটা কি?
পেছনে পায়ের শব্দ শুনে চমকে উঠলাম।কেউ আসছে।তাকাতেই দেখলাম বৃদ্ধ লোকটি ছুটতে ছুটতে আমার দিকে আসছে।কিন্তু উনিতো সামনে ছুটছিলেন,আমার পেছনে আসলেন কি করে?বৃদ্ধ লোকটি আবার আমাকে দেখতেই প্রচন্ড চিৎকারে মাটিতে পড়ে ফিট হয়ে যায়।আমি হতবাক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি।হঠাৎ মনে একটা সম্ভাবনা এলো?এমন কি হতে পারে আমরা একটি লুপের বা চক্রের ভেতর আছি।ফলে একই জায়গায় বার বার ফিরে আসছি।তাছাড়া তো এই ঘটনার কোন ব্যাখ্যা নেই।আমি উঠে দাঁড়িয়ে সামনে এগোতে লাগলাম।কিছুদূর যাওয়ার পর দেখি বৃদ্ধলোকটি ফিট হয়ে আমার সামনে পড়ে আছে।বুঝলাম আমার অনুমান সঠিক।আমি একটা অনন্ত চক্রের মধ্যে বন্দি হয়ে গেছি।তাই বার বার ঘুরেফিরে একই জায়গায় আসছি।
কি করবো এখন বুঝতে পারছিনা।মাথা মনে হচ্ছে ঘুলিয়ে যাচ্ছে।পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে পারছিনা।শুধু জানি বাঁচতে হলে এই অভিশপ্ত চক্র থেকে বের হতে হবে।পাশে বৃদ্ধ লোকটি অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।সে ভেবেছে আমি কোন অশরীরী।তাকে এইজন্য অবশ্য দোষ দেয়া যায়না।আমিও তো ভাবছিলাম বৃদ্ধ লোকটা কোন অশরীরী।চক্র নিয়ে ভাবতে লাগলাম।যেভাবেই হোক এখান থেকে মুক্তি পেতে হবে।কোন একটা বইয়ে পড়েছিলাম একটি চক্রে সামান্য জিনিসের হেরফের হলে পুরো চক্র ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।চক্র হলো সম্পূর্ণ আবদ্ধ।যদি একটি চক্রে বাইরে থেকে একটা ধূলিকণাও প্রবেশ করে তবে পুরো চক্র ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।তেমনি ভাবে ভেতর থেকে যদি কিছু বাইরে চলে যায় তবে এটি ধ্বংস হয়ে যাবে।হঠাৎ চোখ পড়লো বৃদ্ধ লোকটার উপর।যদি কোন কারণে উনার শরীরে ভর কমে যায় তবে চক্রে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে এটি ধ্বংস হয়ে যাবে।কিন্তু এখানে তো আর জিম পাবোনা যে ওয়েট লিফটিং করে ভর কমাবো।তক্ষুনি মনে ভাবনা খেলে গেল একটি লোকের মৃত্যুর পর লোকটার ওজন বেশ কমে যায়।আমি যদি এই লোকটিকে মেরে ফেলি তবে এই চক্র ভেঙ্গে আমার পরিবারের কাছে ফিরে যাবার একটা সম্ভাবনা আছে।চিন্তাটা মাথায় আসতেই আমি উঠে বসলাম।ভেতরের সমস্ত জড়তা দূর করে পকেট থেকে রুমালটা বের করে হাতে নিয়ে এগিয়ে গেলাম বৃদ্ধের দিকে।চক্র ভাঙতে।
(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:১৭
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×