somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ব্যাখ্যাহীন ঘটনা

০৮ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনাটা আশির দশকের। তখন আমরা গ্রামে থাকতাম। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই কোলাহল শুনতে পেলাম। বাইরে গিয়ে দেখি বাড়ির সামনে লোকে লোকারণ্য। আশেপাশের দশ গ্রামের লোকজন সেখানে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি হচ্ছে দেখার কৌতুহল হলো। তাই সামনে এগোলাম। ছোট ছিলাম,তাই জনগণের ফাঁক গলে সামনে এগোতেই দেখলাম মাঝখানে 'তানবাদশা' হাটু ক্রস করে মাটির উপর বসে আছে। বুঝলাম কেন এই সাতসকালে লোকজন জড় হয়েছে।
সবাই এসেছে এই 'তানবাদশাহ' কে দেখতে। তখন ছোট বড় সবাই এই তানবাদশাহর নাম জানতো। সে ছিল তৎকালীন সময়ের শ্রেষ্ঠ যাদুকর । আমি অনেক ছোট থেকে এই তানবাদশার কথা কথা শুনে আসছি। বলা হয়ে থাকে তানবাদশাহ একবার আস্ত ষাড়কে মানুষে রুপান্তরিত করেছিলেন। মানুষ হওয়ার পরেও সেই ষাড়টা নাকি অন্যসব ষাড়দের মতো দুহাতপায়ে হাঁটতো আর বিকটভাবে চেচাঁতো। পরে সেই মানুষরূপী ষাড়টাকে নাকি গ্রামের লোকজন মিলে কুরবানী করে দেই। এমনকি কিছু কিছু লোক সেই মাংসও খেয়েছে।

যায়হোক 'তানবাদশাহ' কে আমিও মুগ্ধ নয়নে দেখতে লাগলাম। তার বয়স কত কেউ জানেনা। গ্রামের সবচেয়ে বৃদ্ধ লোকটার দাদাও নাকি তানবাদশাহর গল্প করেছে। খালি গা,পরনে শুধু একটি লাল রঙের লুঙ্গিতে তাকে সন্ন্যাশীর মতো লাগছিল। চোখ বন্ধ করে যেন ধ্যান করছে। বেলা যতো বাড়তে লাগলো,ভীড় ততো বাড়তে থাকলো। গ্রামে এইধরনের ঘটনা সচরাচর ঘটেনা। তাই সকলে খুব আগ্রহভরে তানবাদশাহকে দেখতে আসছে।

একপর্যায়ে তানবাদশাহ চোখ খুলল।চারদিকে কটমট করে তাকাতেই সকলে কিছুটা পিছু হটলো। সেই সাথে গুঞ্জন ও থেমে গেল।চারপাশে তখন এক আশ্চর্য নীরবতা। তানবাদশাহ মনে হয় এতে সন্তুষ্ট হয়নি। সে তার হাত দিয়ে মাটিতে একবার আঘাত করতেই তার চারপাশে গোল করে আগুন জ্বলে উঠে মুহূর্তের জন্য।অতঃপর নিভে যায়।এটা দেখে লোকজন আরো পিছিয়ে যায়। এইবার তানবাদশাহ কিছুটা শান্ত হলো।আমি তখন হতভম্ব। হঠাৎ করে আগুন কোথা থেকে উদয় হলো আর কোথায়বা মিলিয়ে গেল?

এইসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে আবার তাকালাম তানবাদশার দিকে। এবার সে মাটি নিয়ে কিছু করছে।দুহাতে মাটি নিয়ে সেগুলো সে উপরে ছুড়ে দিতেই সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো পাখিতে পরিনত হলো। এতো সুন্দর ও আর বিচিত্র পাখি আর কখনো দেখিনি । লোকজন বিস্ময় ধ্বনি প্রকাশ করলো সেটা দেখে।কিছু কিছু উৎসাহী লোক "মারহাবা" বলে চিৎকার শুরু করে দিল।
এইবার সে যে কাজটা করলো সেটার জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। আমাদের বাসার দক্ষিণে একটা ছোট আম গাছ ছিল। তানবাদশাহ সেই গাছটার কাছে গিয়ে ঠোঁট নাড়িয়ে কি যেন বললো। তারপর দুহাতে গাছ টাকে ধরে প্রচন্ড ভাবে ঝাঁকাতে লাগলো।সাথে সাথে আঙুরের বৃষ্টি শুরু হলো। গ্রামের লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়লো আঙুর ফলগুলো ধরতে।
আমগাছ থেকে অনবরত আঙুর ঝড়ছে। আমরা দুহাতে সেটা মুখে পকেটে ভরছি। অবশেষে যখন তানবাদশাহ থামলো ততোক্ষণে আমাদের সকলের ঝুরি ভরে উঠেছে আঙুর ফলে। এরপর সে সোজা হাঁটা শুরু করলো নদীর ঘাটের দিকে। আমরা তার পিছুপিছু গেলাম। তারপর তানবাদশাহ একটা নৌকায় উঠে চলে গেলেন। যতক্ষন তাকে দেখাযাচ্ছিল ততক্ষণ সবাই নদীর দিকে তাকিয়েছিল। আমরা দীর্ঘদিন সেই আঙুরফল খেয়ে শেষ করতে পারেনি।
তখন ছোট ছিলাম। তাই এতোকিছু মাথায় আসেনি। এখন মাঝে মাঝে ভাবি এটা কিভাবে সম্ভব যে গাছ ঝাঁকালে বৃষ্টির মতো ফল ঝড়ে?
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:১৯
২৪টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×