somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৌতূহল ( অতিপ্রাকৃত গল্প )

১৮ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ছোট মামা অপু প্রচুর পড়াশোনা করেন । উনার ছোট্ট কুঠুরির সামনে গেলেই পাতা উল্টানোর শব্দ শুনা যাবে । কি এতো পড়ে কে জানে । ভেতর থেকে দরজা সবসময় বন্ধ থাকে । শুধু খাওয়ার সময় চুপচাপ দুটো খেয়ে যান । তারপর ফের পড়াশোনা শুরু । এভাবেই ছোট মামার দিন কাটে ।
এসএসসি পরীক্ষার পর দীর্ঘদিন গ্রামের বাইরে ছিলাম । সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছি । ছুটিতে গ্রামে যায় । গ্রামে এসে ছোট মামাকে দেখে বিরাট ধাক্কা খেলাম । যে ছোটমামা দিনরাত দরকায় খিল এটে পড়াশোনা করতো সে এখন দৌড়ে নানান কাজের তদারকি করছে । তখন আমাদের গ্রামের বাড়িতে পুকুর কাটা হচ্ছিল । ছোট মামার ভাবসাব দেখে মনে হলো পুকুর একাই কেটে ফেলবে । সারাক্ষণ লোকদেরকে বকাবকি করছে । মামার এহেন পরিবর্তনে আমরা সবাই বেশ অবাক হলাম । যে ছেলেটা দিনরাত বসে বসে শুধু বই পড়তো সে এখন পড়াশোনা ছেড়ে দিনরাত কাজ করে । কিভাবে এমন হলো সেটা রাতেই জানা গেল । হারিকেনের আলোয় খেতে বসেছি । ছোট মামা আমার পাশেই । সে শুধু আলুভাজা আর ডাল ভাজা ছাড়া আর কিছু নিচ্ছে না । এটা দেখে আম্মু মামার পাতে এক টুকরো মাছ তুলে দিতেই ছোট মামা হাহাকার করে উঠলো ।
- হায় হায় আপু এটা কি করলা ?
- কেন তুই মাছ খাস না ?
মামা সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াল । তারাতারি হাত ধুয়ে অজু করে নামাযে দাঁড়িয়ে গেল । আমরা অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম । মামা যখন নামাযা শেষ করলো ততোক্ষণে আমাদের কৌতুহল চরমে পৌঁছেছে । সবাই তাকে চেপে ধরলো আসলে হচ্ছেটা কি ? কেন সে এমন অদ্ভুত আচরণ করছে ? অনেক জোরাজুরির পর ছোট মামা মুখ খুলেন । তার ভাষাতেই ঘটনাটা বলছি

- তোরা তো জানিস আমি দিনরাত বই পড়ি । শুধু পাঠ্য বই না, সামনে যা পাই সেটাই গিলে ফেলি । একদিন ক্লাসের এক ছেলে রতন এসে বলল, দোস্ত চন্দননগরে বই মেলা হচ্ছে । বইমেলার কথা শুনে মাথায় রক্ত উঠে গেলো । রতনকে নিয়ে দৌড়ে গেলাম চন্দননগর । গিয়ে দেখি কোথায় বই মেলা! ষাড়ের লড়াই চলছে । মেজাজ এতো খারাপ হলো মনে হচ্ছিল রতনকে ধরে দু'চার ঘা লাগিয়ে দেয় । মন খারাপ করে বাসায় ফিরে আসছিলাম । হঠাৎ কোথা থেকে এক সাধু উদয় হলো । আমার দিকে চেয়ে হেসে বললো 'কি হে বই পাওনি বুঝি? এই নাও' বলে আমার হাতে একটা মোটা চামড়া দিয়ে ঢাকা ডায়েরির মতো কি একটা গুজে দিল । তারপর হনহন করে হাঁটতে শুরু করলো । ঘটনার আকস্মিকতায় এতো তাজ্জব বনে গিয়েছিলাম যে কয়েক মুহূর্ত বুঝতেই পারিনি কি হচ্ছে । যতোক্ষণে হুশ হলো তখন সাধু লোকটা হেঁটে বহুদূর চলে গেছে ।
বাসায় ফিরে বসলাম সাধুবাবার ডায়েরি নিয়ে । বলা বাহুল্য এটা কোন সাধারণ ডায়েরি ছিল না । তন্ত্রমন্ত্রে ভরপুর ডায়েরিতে অল্পক্ষণেই এতো মগ্ন হয়ে গেলাম কখন যে বিকাল পেরিয়ে রাত হয়ে এসেছে টের ই পেলাম না । সম্পূর্ণ ডায়েরি শেষ করে যখন উঠে বসলাম তখন আমি আর আমি নেই । যাদু বিদ্যার প্রতি এক অমোঘ আকর্ষণ তৈরি হলো । অদ্ভুত সব জিনিস পড়ে নিশ্চয় আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো । ডায়েরিতে সবচেয়ে ভালো অদ্ভুত যে জিনিসটা পড়ে ছিলাম সেটা হলো অদৃশ্য হওয়ার গুপ্ত জ্ঞান । সেই অধ্যায় পড়ে এতো বিমোহিত হয়েছিলাম তখন থেকেই আমার জীবনের লক্ষ্য হিসেবে অদৃশ্য হওয়া নিয়েছিলাম । তবে এটা সহজ কোন কাজ ছিলনা । এর জন্য দরকার ছিল সদ্য মৃত কুমারী মেয়ের কবরের মাটি । সেই মাটি আবার আনতে হবে গভীর রাত্রে । ভরদুপুরে আনলে কাজ হবে না । সেই মাটি হাতে নিয়ে মন্ত্র পড়ে গায়ে ছিটালেই তুমি অদৃশ্য হয়ে গেছো । মন্ত্র নাহয় ডায়েরি থেকে শেখা যাবে কিন্তু কুমারী মেয়ে কোথায় পাব ? রতনকে বলে দিলাম কোথাও কুমারী মেয়ে মারা গেলেই যেন আমাকে জানায় । কয়েকদিন পরে বিকেলে রতন ছুটে এসে জানালো জেলে পাড়ায় এক মেয়ে বিষ খেয়ে আত্নহত্যা করেছে । শুনে হাতে আকাশের চাঁদ পেলাম । জেলে পাড়ায় গিয়ে দেখে এলাম মেয়েটাকে কোথায় কবর দেওয়া হবে । বাসায় এসে অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন রাত গভীর হবে । বাসার সবাই বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়তেই বের হলাম । অদৃশ্য হওয়ার উত্তেজনায় ভয়ডর উবে গেছে । আমাদের বাসা থেকে জেলে পাড়া পনেরো মিনিটের রাস্তা । বিশমিনিটের মাথায় গিয়ে কবরস্থানে হাজির হলাম । কুমারী মেয়েটার কবর বের করতে অসুবিধা হলোনা । নতুন কবর দেখলেই বুঝা যায় ।
মাটি নেয়ার জন্য কবরে হাত দিয়েছি সঙ্গে সঙ্গে কবরটা ভয়ানক ভাবে কেঁপে উঠলো । চমকে উঠে দূরে সরে গেলাম । একি কবর কাঁপছে কেন? নিশ্চয় মনের ভুল । আবার কবরে হাত রাখলাম । এবার আরো ভয়ানক ভাবে কবরটা কেঁপে উঠলো । কিছুটা ভয় পেয়ে হাত সরিয়ে নিলাম । কিন্তু কবর কাঁপতেই থাকলো । মনে হচ্ছে কবরের ভেতর থেকে কেউ বের হয়ে আসছে । এবার সত্যি সত্যি প্রচন্ড ভয়ে পেয়ে গেলাম । থাক বাবা অদৃশ্য হওয়ার দরকার নেই । ঘুরে দাঁড়িয়ে চলে আসবো এমন সময় পেছন থেকে নাকিকন্ঠে কেউ বলে উঠলো -কিরে মাটি নিবিনা?
এটা শুনে আতংকে আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলো । সব কিছু ফেলে দিয়ে ছুটতে শুরু করলাম । পেছন থেকে তখনো ভয়ানক হাসির শব্দ আসছে । কোনরকমে বাসায় পৌঁছলাম । তারপর থেকে শুধু শুনি সেই কন্ঠ আমায় বলে চলেছে কিরে মাটি নিবি না? আয় আয়' । তাই নিজেকে এখন নানারকম কাজে ব্যস্ত রাখি এইসব ভুলে থাকার জন্য ।

ছোট মামার এই ঘটনা শুনে সে রাতে ভয়ে ঘুমুতে পারিনি । বারবার মনে হচ্ছিল সেই কন্ঠটা এসে আমাকে বলবে 'কিরে মাটি নিবি না? আয় আয় ' । পরদিন সকালে গ্রাম ত্যাগ করলাম ।
(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৩০
৪০টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×